(ছবি – উইকিপেডিয়া)
এই কাহিনি আমার নয়,পাভা কাটইগালের। পাপের কাহিনির থেকে চুইয়ে পড়ছে যে রক্ত, শ্যাওলাজড়ানাে জীবনেই তার প্রপাত।গর্ব, সম্মান,প্রতিষ্ঠা এতটাই স্বর্ণোৎসব,হাতে ছুরিকা নিতে একটুও বুক কাঁপে না,এমনকি সেই শাণিত ইস্পাত যদি সন্তানের দিকেও ধাবিত হয়।
১,থঙ্গম (স্বর্ণ)
ছেলেটি লুঙ্গি পরে,ওপরে হাফ হাতা শার্ট, পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে।চোখে সুরমা অথবা কাজল। হাতে একটি ব্যাগ,ব্যাগের ভেতরে ওর পৃথিবী। বড় হয়েছে,বােঝে কম। সােমত্ত বােনের পাশে রাতে ঘুমােয়। কিছু করে না,ইচ্ছে এবং ক্ষমতা,দুটোই নেই। ভালােবাসে চাপদাড়ি থাকা এক পুরুষকে।একটিও চুমু নেই,মাইরি। তবুও প্রেম,প্রেম এমনই। পুরুষটি ওকে বন্ধু ভাবে।ছেলেটির বােনকে ভালােবাসে। ভালােবাসা চোখে অনেক জল ভরে রাখে,বুকে ভারী ভারী পাথর। ছেলেটি ওই পুরুষের প্রেমকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শরীরে অসংখ্য ক্ষত নিতে থাকে।পুরুষ ও মেয়েটি পালিয়ে যায়,বিয়ে করে।ওদের সাহায্য করার বিনিময়ে ছেলেটি মারা যায় ঐ রাতে।কেউ ছিল না ওর পাশে,না প্রেম,না পরিবার,সমাজ। অনেক অনেক দিন পর ছেলেকে উপহার দেওয়া লিপস্টিকটি হাতে নিয়ে খালের জলের ভেতরে বসে পুরুষটি কাঁদে।জল। কী করে জানবে,কোনটা চোখের,কোনটা খালের,বয়ে যায়।
২.লাভ পান্না উত্রানুম (ঢালাে,প্রেমের পান্না)
ড্রাইভারকে ভালােবাসা যাবে না,আমারই নিচু কর্মচারী,সঙ্গে ছােট জাত, পকেটে শুধু খুচরাে পয়সা।মানা করলে পালাবে দুজনে,এ আবার অন্য বিপত্তি।অতএব পরিকল্পনা ভাঁজো। সমাজে সম্মান এবং প্রতিপত্তি রয়েছে আমার।সেই প্রতিষ্ঠা রাখব,যে কোনও উপায়ে।অতএব,নীরবে সরাও। আরেক কন্যা আমার,এতই বেহায়া,আমার সামনেই প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরিস, চুমু খাস।যা,তাের বােনকে দেখে আয় স্নানঘরে,টাটকা লাশ।উচ্ছন্নবৃত্তি চলবে না এখানে,যত্তসব ইয়ার্কি। বন্দি থাক ঘরে।পালালাম পিতা,পিতা নয়,বীভৎস জল্লাদ।ঘেন্না ওই নামে। কী চেয়েছিল বােন,একটি সুন্দর জীবন,নিজের মতাে।বােনের জন্য সারাজীবন ভেজা থাকবে চোখ,তােমার জন্য ক্রোধ,পিতা আমার।
৩.ভানমগল। (বনমালা)
কী । সুন্দর পৃথিবী আমার,স্নানঘরে শরীর ধুই,পায়ের মল বাজে,গান শুনি,আলপনা আঁকি উঠোনে,ভেজা চুলে গামছা জড়িয়ে রান্না করি। বড় মেয়ে নারী হল,উৎসব পালন করি। সহসা কালাে কালাে হাওয়া বইল দাঁত নখ উঁচিয়ে।ছােট মেয়ে, অবােধ বালিকা,সব হারাল। না,পুলিশে খবর দিইনি। পরিবারের সম্মান আছে তাে একটা।আমি পারিনি।ছেলে আমার সােনা ছেলে,খুঁজে বের করে ওকে, লিঙ্গ কাটল।বালিকা বয়সে কোনও কিছু না-বুঝেই নারী হওয়া এই মেয়েকে নিয়ে কী যে করি! সবাইকে নিয়ে পাহাড়ের মন্দিরে যাই।চুলে গজরা। পরিবারের সম্মান বাঁচাতে মেয়ের পিঠে হাত রেখে ওকে খাদে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে বিশ্বাস করুন,একটুও হাত কাঁপেনি আমার।
৪.উর ইরাভু (এক রাতে)
ওরা ভালােবেসেছিল,পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করল। শহরে থাকে,একেবারে নিজের মতাে গুছিয়েছে সংসার।সেখানে খুশির বাতি জ্বলে সমস্ত প্রহর।একদিন পিতা এলেন,ক্ষমা করলেন,দেখলেন মেয়ের ভরা সংসার।সব মিটে গেল,এখন উৎসব।পিতার হাত ধরে গর্ভবতী মেয়ে এল পিতৃগৃহে।এরপর আনন্দ আকাশে, বাতাসে,আলােয়।আকাশের এককোণে কালাে এক রাত্রি চুপ করে বসেছিল,তার মাথার ভিতরে ভুলে না-যাওয়া বেদনারা জল্পনায় বসল। সব শেষে সেই রাত্রি নেমে এল শুভকামনার গৃহে,যেখানে আগামী চোখ ফোটার প্রতীক্ষায়।পিতা দেখলেন,মেয়েটি একটু বেশিই কষ্ট পেয়ে চলে গেল। তিনি ভেবেছিলেন,যে মৃত্যু তিনি দিলেন,সে দ্রুত এবং কম বেদনাহীন হবে।