৯. দারুহরিদ্রা:– রাজস্থান থেকে সোজা সিলেট?
অমিতাভ:– না। মাঝখানে মুর্শিদাবাদ। কেন যে এঁরা মুর্শিদাবাদ এসেছিলেন আমি জানি না। এইটুকু জানি সেটা ছিল সম্ভবত মুঘল আমল। চৌধুরী উপাধি হয়ত এখান থেকে এঁদের ওপর বর্তেছিল। আবার সিলেটেও ন্যস্ত হতে পারে । হয়ত এ কারণেই আমাদের কোনও মুসলমান বিদ্বেষ নেই। সব জমি-সম্পত্তি ওপারে ছেড়ে আসার পরও আমাদের কেউ মুসলমানদের কখনও শাপশাপান্ত করেননি। হয়ত দেশভাগজনিত একটা অদৃশ্য লক্ষ্মণরেখা মাঝখানে কোথাও এসে জুড়ে বসেছিল। তবে আমার কাকা অনন্ত দেব এই লক্ষ্মণরেখাকে এড়িয়ে যেতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাবাদের দোষ ধরতেন। যা নিজেদের প্রয়োজনে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে চাগিয়ে দিয়েছিল। মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্কের কয়েকটা প্রমাণ দিই– ১. আমাদের কুলদেবতারা— মদনমোহন, রাধারানী, শালগ্রাম, তাঁদের সোনা ও রূপার মুকুট ইত্যাদি ইত্যাদি একটি ট্রাংকবন্দি হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ৪ মাস এক মুসলমান বাড়িতে অক্ষত অবস্থায় পড়েছিলেন। তাঁরা শেষমেশ গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন আগরতলায় বাবাদের জ্যাঠতুতো ভাইপোর বাড়িতে। আচ্ছা, শালগ্রাম শিলা কতরকমের হয় ? আমার জানা ছিল না । এই ইন্টারভিউর প্রস্তুতিপর্বে তোমাদের দেওয়া এই লিস্ট আমি একজন শাস্ত্রজ্ঞকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিয়েছি। দ্যাখো তো ঠিক আছে কিনা ? প্রদ্যুম্ন, সংকর্ষণ, শ্রীধর, মাধব, ত্রিবিক্রম, পদ্মনাভ, দামোদর, পুরুষোত্তম, গোবিন্দ, কেশব, নারায়ণ, বিষ্ণু, অধোক্ষজ, অনিরুদ্ধ, বামন, হৃষিকেশ, নৃসিংহ, অচ্যুত, জনার্দন, উপেন্দ্র, বনমালী, কুর্মমূর্তি, সুরেশ্বর, অনন্তক, ব্রহ্মশিলা, হয়গ্রীব, বৈকুণ্ঠ, মৎসশীলা।
আমাদের বাড়িতে ছিলেন, দুজন শ্রীধর ও একজন লক্ষ্মীজনার্দন।
১০.দারুহরিদ্রা:– আচ্ছা, তাহলে আপনি কি আস্তিক?
অমিতাভ:– আগে আমার ধারণা ছিল আমি নাস্তিক। আমার মনে হত কুকুরের তো ঈশ্বর নেই। পশু পাখিদের তো কারাগার নেই, রাষ্ট্র নেই, ধর্ম নেই, শাস্ত্র নেই, ট্যাবু নেই, টোটেম নেই, শিল্প নেই, বিজ্ঞান নেই— যৌনতার নানা ট্যাবু থেকে শুরু করে রাষ্ট্র, ঈশ্বর থেকে শিল্প বিজ্ঞান সবকিছুই, সুতরাং, মানুষের এক একটি কারাগার। আজকাল আমার তা মনে হয় না। আজকাল আমি মূলত একজন এগনোস্টিক, অজ্ঞেয়বাদী । আমার মনে হয় ঈশ্বর থাকলেও মানুষের সাধ্য নেই তাঁকে জানার। কিংবা এই ঈশ্বরের শিকড় বর্তমান সভ্যতার এত গভীরে প্রোথিত যে তাকে টেনে ছিঁড়ে তুলতে তুলতে এই সভ্যতার আয়ুই শেষ হয়ে যাবে। আবার কখনও মনে হয় ঈশ্বর যদি মানুষের বানানোই হন তাহলে শিল্প, বিজ্ঞান, সভ্যতা, ধর্ম সব ছাপিয়ে তাঁর অধিষ্ঠান। মানুষের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ঈশ্বর।
অবশ্য এই ঈশ্বর ধর্মের ঈশ্বর নন। ইনি কবিকল্পনার ঈশ্বর। বিশ্ববিধানও বলতে পার । কিংবা বলতে পারি, মহাবিশ্বের রহস্য। এঁকে নিয়ে সংলাপ চলতে পারে কেবলমাত্র একজন কবির সঙ্গে একজন পদার্থবিজ্ঞানীরই। একজন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে একজন আইনস্টাইনেরই।
ধর্মের ঈশ্বর কিন্তু আলাদা ঈশ্বর। যে কোনও ধর্মই সেই ধর্মে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জাতিসত্তার অধিকারের সঙ্গে জড়িত। ঠিক যেভাবে ভাষা। ঠিক যেভাবে সংস্কৃতি। বাংলাদেশে, তাই, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর কোনও কারণে আঘাত নেমে এলে এদেশের কেউ কেউ যখন ‘গেল গেল’ রব তোলেন, আমার মনে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ঘনিয়ে আসে। যাঁরা তসলিমায় বিশ্বাসী তাঁরা কেন আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের ধর্মে আঘাত এলে, তাঁদেরও পাশে এসে দাঁড়াবেন না ? কেন ধর্মের তুলনামূলক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যাপারটাকে গুলিয়ে দেবেন? বলবেন, হিন্দু ধর্ম অনেক বেশি উদার। দেখো, একটা কথা বাজারে চালু আছে । মুসলমানরা নাকি নাস্তিক হয় না। আমার জানামতে, কথাটা ভুল। আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরম নাস্তিক। সে তার ধর্মে নিষিদ্ধ মাংসের স্বাদ প্রায়ই গ্রহণ করত। কখনও নামাজ পড়েনি। ঈদের নামাজও না। কিন্তু হস্টেলে কোনও এক ইন্ডিয়া পাকিস্তানের খেলায় পাকিস্তানের ব্যাটিং-এর যৎসামান্য তারিফ করে ফেলায় তাকে এতটাই আওয়াজ খেতে হয়, যে, সে তার আগে কখনও যা করেনি, তাই করেছিল। পরের হোলিতে তার গায়ে কোনও রং লাগাতে দেয়নি। সংখ্যালঘুর মনস্তত্ত্ব বলে একটা কথা আছে। তা ভুলে গেলেই সমাজদেহ বিষিয়ে ওঠে।
দারুহরিদ্রা:– আচ্ছা, বুঝলাম। আপনি কিন্তু মূল প্রসঙ্গ থেকে বার বার সরে যাচ্ছেন! রাজনীতি নিয়ে এতো কথা বলতে কে বলেছে আপনাকে? আমরা তো এসব শুনতে আসিনি এখানে। রাজস্থান থেকে সিলেট, এ ব্যাপারে বলুন!
অমিতাভ:– ও হ্যাঁ। আমি মুর্শিদাবাদ পর্বের কথা বলছিলাম। জানো তো, আমাদের সিলেট-ভাটেরার বাড়িতে দুর্গা পুজায় ব্যবহার করার জন্য দুধ নাকি আসত মুসলমান বাড়ি থেকে। কারণ জানো? মুসলমান বাড়ির দুধ নাকি বেশি ভালো ছিল। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের শিলচরের বাড়িতে এসে থেকেছিলেন অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী। একমাত্র ঠাকুরঘর ছাড়া, আর সর্বত্র তাঁর ছিল অবারিতদ্বার। আরেকটা গল্প বলে এ প্রসঙ্গে ইতি টানি। আশির দশকে আমাদের শিলচরের একান্নবর্তী বাড়ির উল্টোদিকের পোলিং স্টেশন বিটি কলেজে দুই কংগ্রেসের মধ্যে মারপিট বাঁধে। সেই মারপিট রাজপথে এসে গড়ায় এবং হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়। বন্দে-মাতরম ও আল্লাহু আকবরের মাঝখানে তখন আমার কাকা অনন্ত দেব তাঁর বন্ধু সুভাষ চৌধুরীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন: ‘আমাদের না মেরে তোমরা নিজেদের মধ্যে মারপিট করতে পারবে না।’ জনতা থমকে যায়। কাকার প্রতি সম্মানবশত প্রথমে পিছু হটেন মুসলিমরা, হিন্দুরা আক্রোশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে মদের বোতল ছোড়া হয়, সঙ্গে অশ্রাব্য চিৎকার: ‘শালার শালা মুসলিমোর সাপোর্টার অনন্ত দেব…’ দাঁড়াও দাঁড়াও, আরেকটা কথা মনে পড়ল । আমাদের গোষ্ঠীর একটা শাখা নাকি মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের উত্তরাংশে এর কথা আছে, বের করে পৃষ্ঠাসংখ্যাসহ এখানে জুড়ে দিতে পারো।
দারুহরিদ্রা:–

অমিতাভ:– এ প্রসঙ্গ শেষ করি আবার একটা গানে গিয়ে। একটা না দুটো। দুটোর প্রথম গানটা আমি সেদিনই প্রথম শুনলাম। আমার বন্ধু শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার গানটার কথা আমাকে বলল। পণ্ডিত যশরাজ যে এত সুন্দর ও অকুণ্ঠ আল্লা বন্দনা করেছিলেন তা আমার জানা ছিল না । প্রসঙ্গত এর রাগ ভৈরব। আর জীবনে মাত্র যে তিনটি রাগ আমার পক্ষে শেখা সম্ভব হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রথমটিই এই ভৈরব। বাকি দু’টি ভূপালী আর বেহাগ। একটু জ্ঞান ফলাই কেমন? এর জন্য তোমরা আমাকে স্বচ্ছন্দে শ্রী শ্রী জ্ঞানপ্রকাশ দেব চৌধুরী বলে ডাকতে পারো। ভৈরবের একটা সরগম শোনাই । কেমন ?
সদপপদ মপমগঋ গঋগমপ মগঋঋস
ন়সঋঋস দ়দ়ন়সস গঋগমপ মগঋঋস ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ।
১১. দারুহরিদ্রা:– দারুণ! আপনি সিলেটের কথা বলুন, আমরা সিলেটের কথা শুনতে আগ্রহী।
অমিতাভ:– আবার চমক দিই। সিলেটে এসে আমার পিতৃকুল একটা পর্বে গোত্র হারিয়ে ফেলেন। আজ যেমন অতিমারী চলছে, তেমনি কোনও এক মহামারীর দুঃসময়ে— তাও নিশ্চয় কোনও স্মরণাতীত কালে— আমাদের পরিবারের সবাই মারা যান। কেবল একটি বালক বেঁচে থাকে। তাকে বাঁচিয়ে রাখে বাড়ির পরিচারিকা। সে-ই নিজের গোত্র দিয়ে বালকটিকে প্রতিপালন করে। তারপর থেকে আমরা সেই পরিচারিকার গোত্রে প্রতিপালিত। বিশ্বাস না হলে ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ‘- এ যাও, উত্তরাংশে গিয়ে ঢোকো। ভাটেরার দেব চৌধুরী বংশের ওই জায়গাটা বের করে এখানে উদ্ধৃতি দিয়ে দাও, পৃষ্ঠাসংখ্যা মেনশন করো কিন্তু।
দারুহরিদ্রা:-

অমিতাভ:– আসলে, এগুলো তো পরিজনশ্রুতি। বলতে পারো, পারিবারিক কিংবদন্তি। ওই যে রাজস্থান থেকে আসা, মুর্শিদাবাদ হয়ে আসা, মহামারীতে গোত্র হারিয়ে ফেলা, পরিচারিকার গোত্র নিয়ে টিকে থাকা– এগুলো সবই পারিবারিক, গল্প। এর কোনও প্রমাণ আমাদের কারও হাতে নেই। আর এগুলো প্রমাণ করে হবেই বা কী? আমি সামান্য কবি। আমার পরিবারের এসব গল্প বাইরের লোককে শুনিয়ে হবেটা কী? তবে নিজের কাছে এর একটা মানে দাঁড়িয়ে যায়, যখন দেখি ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আমাদের বাড়িতে প্রায় আমারই বয়সী একমাত্র পুত্রকে নিয়ে কাজ-করতে-আসা নিরাশ্রয় ও বিধবা পরিচারিকাকে আমাদেরই পদবী ও গোত্র দান করা হয়েছিল । কারণ সে তার পদবী, গোত্র ইত্যাদি কিছুই জানত না। প্রায় বিয়াল্লিশ বছর আমাদের শিলচরের বাড়িতে কাজ করেছিল সে। বাড়িরই একজন হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়, এ যেন সেই কোন যুগে কোন এক পরিচারিকার কাছ থেকে পাওয়া গোত্র দেশভাগের পর নীড়-হারিয়ে-ভেসে-আসা আরেক পরিচারিকাকে দিয়ে এক বৃত্ত সম্পূর্ণ করা হল। ঋণ পরিশোধ ? হয়ত তাই ।
গোত্র প্রসঙ্গে একটা কবিতা পড়াই তোমাদের । কালই লিখেছি। বলতে পারো, স্বপ্নে-দেখা কবিতা। নাম ‘মহাভারত ২০২১’
সকল লাসের গায়ে লেখা আছে প্রিয় গোত্রনাম/ হে মহান ধৃতরাষ্ট্র, চক্ষুদাতা, তোমাকে প্রণাম!/ আমাদের লাস ভাসে পুণ্য গঙ্গাজলে আর কৃষ্ণ যমুনায়/ সামান্য আগুন মুখে, তাতে পুড়ে গেছে সব ন্যায় ও অন্যায়।/ একটি কুকুর শুধু নদী তীরে শুঁকে দেখে কারো কারো শব/ হেরেছি গভীর যুদ্ধ, তবে কেন চারপাশে এত কলরব?/ এসো শান্তি, বসো শান্তি, থাকো শান্তি ইতিহাসময়/ এ শান্তিই একদিন লিখবে হে আমাদের জয়-পরাজয় !/ একটি কুকুর তবু, নদীতীরে শুঁকে দেখে আমাদের লাস / নামে রাত্রি। যবনিকা? নাকি তা আসলে ওই চাঁদের বিলাস?
১২. দারুহরিদ্রা:– সিলেট কখনও যাননি?
অমিতাভ:– নাহ্। ভেতর থেকে তেমন টানই পাইনি। যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে রইব কত আর? সিলেট যাব? আমার তো পাসপোর্ট বানানোর মুরোদই এখনও হয়নি। অবশ্য আমার হাতে নাকি বিদেশযাত্রার রেখা খুব প্রমিনেন্ট। যে দেখেছে সে-ই বলেছে। হা হা হা । কাকা অনন্ত দেবের অবশ্য প্রচুর সিলেটের টান ছিল । বলতেন,’তুমরার শিলচর, আমরার সিলেট ।’ আমাকে বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর ওর খানিকটা দেহভস্ম যেন সুরমার জলে ভাসিয়ে দেবার ব্যবস্থা করি । আমি তৈমুরদাকে ( তৈমুর রাজা চৌধুরী ) দিয়ে সুরমা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম । বুঝলে বাচ্চাপার্টি, এই হল দেশভাগ !!
১৩. দারুহরিদ্রা:– আচ্ছা, তার মানে আপনি জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন?
অমিতাভ:– আরে, তোমরা তো জ্বালাবে দেখছি ! না, করি না। কিন্তু মানুষের কৌতূহলের তো অন্ত নেই। জানি, জ্যোতিষশাস্ত্রে সত্যি সত্যি কিছু থেকে থাকলে, আধুনিক বিজ্ঞান এতদিনে তার খোঁজ পেয়ে যেত। কিংবা যে কেউ জেনে যেতে পারত সে কবে মারা যাবে । কিন্তু ওই যে ‘There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy’ ! কবি-লেখকদের মধ্যে যেমন অবিশ্বাসীর অন্ত নেই, তেমনই বিশ্বাসীরাও তো আছেন! শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যোতিষে বিশ্বাস করতেন। কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল জ্যোতিষচর্চা করতেন। সমরজিৎ সিংহও তাই, এককালে প্রচুর জ্যোতিষচর্চা করেছেন। আমাদের শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর জ্যোতিষে প্রবল আগ্রহ ছিল। কবি শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় এই তো সেদিন আমার কোষ্ঠী বিচার করে দিয়েছেন। আমার অনুজপ্রতিম কবি সুব্রতকুমার রায় প্রবল ঈশ্বরবিশ্বাসী আর প্রবুদ্ধসুন্দর কর? সে জ্যোতিষ, ঈশ্বর সবেতে বিশ্বাস করে। সিলেট গিয়ে মুজিম ইরম আর সাদ কামালীকে নিয়ে মহাপ্রভুর দাদার বাড়িতে খোল-হারমোনিয়ম বাজিয়ে মহানন্দে তারকব্রহ্ম নাম করে এসেছিল।
সিলেট যেতে চাইলে আমি যাই মনে মনে। কখনও মুজিব ইরমের কবিতা পড়ে, কখনও রণেন রায় চৌধুরী, শাহ আব্দুল করিম, কালিকাপ্রসাদের গান শুনে। মুজিবের একটা কবিতা শোনো।
প্রথমে বন্দনা করি গ্রাম নালিহুরী। ছাড়িয়াছি তার মায়া যেন কাটাঘুড়ি\ পরেতে বন্দনা করি আকাশ পাতাল। পিতামাতা দেশ ছাড়া হয়েছি মাতাল\ পুবেতে বন্দনা করি নাম তার মনু। এমনি নদীর রূপ উছলে ওঠা তনু\ উত্তরে বন্দনা করি শ্রীহট্ট নগর। সে তো থাকে মন মাঝে অনন্ত অনড়\ পশ্চিমে বন্দনা করি লেখাবিল নাম। এ–জীবন তার তরে তুলেছি নিলাম\ দক্ষিণে বন্দনা করি নাম শ্রীমঙ্গল। দেখিয়াছি টিলারূপ কুহকী জঙ্গল\ মৌলভীবাজার–কথা কী কহিবো আর। সে তো জানি প্রাণসখা বন্দনা অপার\ চারদিক বন্দি শেষে মন করি স্থির। ধরিয়াছে এই দেহ দেশের জিকির\ বন্দনা করিয়া সারা মধ্যে করি ভর। আসো গো কবির সখা বৈদেশ নগর\ ভিনবাসে ঘুরিফিরি তিষ্ঠ ক্ষণকাল। পয়ারে মজেছে মন বাসনা বেহাল\ পদ্য বাঁধি গদ্য বাঁধি সুরকানা আমি। ইরম হয়েছে ফানা জানে অন্তর্যামী।
(বন্দনা / মুজিম ইরম)
পড়ে যাচ্ছি।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।আরও গভীরতম কথারা আসুক।জীবনের তলদেশের কথা।মুজিব ইরমের কবিতা অনন্য।
আপনার ‘মহাভারত ২০২১’ এ সময়ের দলিল হয়ে থাকবে।
ভালোবাসা নিরন্তর।
একটি জাতির পরিচয় তার ভাষায় I যে ভাষা হারিয়েছে সে জাতি পরিচয় হারিয়েছে I আমি অনেক ভট্টাচার্য চক্রবর্তী মুখার্জি চ্যাটার্জিকে চিনি যাদেরকে আর বাঙালি যায় না I অন্যদিকে এমন সব বিহারি পাঞ্জাবি মাড়োয়াড়ি চিনি যাঁরা বাংলা ভাষা এত ভালো জানেন (লিখতে/পড়তে/বলতে) যে তাঁদেরকে বাঙালি বলতে আমার অন্তত দ্বিধা নেই I এর উদাহরণ পশ্চিমবাংলায় ত আছেই, বরাক উপত্যকাতেও রয়েছে I অতীতকাল থেকেই শ্রীহট্ট ও চট্টগ্রামের খ্যাতি বাণিজ্য কেন্দ্র রূপে I স্থলপথে এবং জলপথে জায়গাগুলির সঙ্গে দেশ বিদেশের নানা জায়গার যোগাযোগ ছিল I তাই দেশের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে শ্রীহট্টে আসা অবাক হওয়ার কিছু নেই I এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে I এবং উল্টোটাও ঘটেছে I আমার পূর্বপুরুষরা মিথিলার I সাধেই কি বলে ‘বাঙালি মিশ্র জাতি’ I অনেকে আছে যাঁরা বাঙালি পরিচয় হারাচ্ছে , অন্যদিকে অনেকে বাঙালি হয়ে উঠছে I আমাদের কাছে অমিতাভ দেব চৌধুরীর পরিচয় কবি-সাহিত্যিক রূপে I তাই সাক্ষাৎকারে তাঁর লেখার ভূবনের কথা বেশি বেশি করে ওঠে আসুক I এক জায়গায় দেখলাম ‘ দারুহরিদ্রা ‘ অমিতাভ দেব চৌধুরীর কাছে রাজনীতির কথা জানতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে I কিন্তু কথা হল রাজনৈতিক ভাবে সচেতন না হলে যে কিছুই হয় না I সকালে দাঁত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত কোনোকিছুই যে রাজনীতির বাইরে নয় I এমনকি শিল্প-সাহিত্য চর্চাও নয় I সাক্ষাৎকার চালিয়ে যান I
চলুক অমিতাভদা।
খুব মন দিয়ে পড়ছি। অনন্তকাকুর কথা আরও জানতে আগ্রহী। আমার একজন প্রাণের মানুষ ছিলেন তিনি।
প্রথম দুটো পর্ব পড়লাম। খুব ভাল লাগল। অনেক অজানা গল্প শুনলাম এবং প্রচারবিমুখ অমিতাভ দেব চৌধুরীকে কিছুটা হলেও জানতে পারলাম। পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকব।
দারুহরিদ্রাকে আবারও ধন্যবাদ এমন একটি আয়োজন এর জন্য।
একজন প্রিয় ব্যক্তি, কবি, সাহিত্যিকের কথা জানতে গিয়ে তাঁর পারিবারিক ইতিহাস কখন সব গণ্ডি পেরিয়ে নিয়ে গেল অনন্য এক জগতে। রাজনীতি, কবিতা, সমাজ দর্শন এভাবেই খুব স্বাভাবিক ছন্দে চলে আসুক কথার মধ্যে, একজন কবির জীবন স্রোতে সেসব না আসাটাই যে অস্বাভাবিক।
আমি কবির সাথে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক। আমি সম্রাট দেব চৌধুরী, বাড়ি কৃষ্ণপুর, ভাটেরা, মৌলভিবাজার, সিলেট।
কবির সাথে আমার যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে কি দারুহরিদ্রা মাধ্যম হতে পারে? একান্ত অনুরোধ রইলো।
আমি অমিতাভ দেব চৌধুরী। আপনি কি আমার বংশের কেউ ? আমাদের আদিনিবাস ছিল ভাটেরার কৃষ্ণপুর মৌজায় । আমার হোয়াটসঅ্যাপ নং +919401303492. আপনি এই নম্বরে রাতের দিকে ফোন করুন প্লিজ । হোয়াটসঅ্যাপ ফোন । কথা হবে ।