Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home সাক্ষাৎ পাতা

অমিতাভ দেব চৌধুরী || তৃতীয় পর্ব

ভাষা-প্রেমিকের সাথে, রেস্তোরাঁয় || তৃতীয় পর্ব

Daruharidra by Daruharidra
19/05/2021
in সাক্ষাৎ পাতা
2
অমিতাভ দেব চৌধুরী || তৃতীয় পর্ব
294
VIEWS

১৪. দারুহরিদ্রা:- এবার আপনার পরিবারের কথা বলুন। আমরা জানতে চাইছি।

অমিতাভ :- আমার পারিবারিক তথ্য জেনে তোমাদের কী লাভ?

দারুহরিদ্রা:- আপনার খেয়াল আছে তো বেশ ক’বছর ধরে আসামে এন আর সি র কাজ চলছিল। এবং তাতে ‘বংশবৃক্ষ’ নামে একটি কলাম ছিল। যার ফলে অনেকেই তখন হিমশিম খেয়েছিলেন। নতুন করে পরিবারের বিষয়ে জানাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল। আপনি ধরে নিতেন পারেন, প্রশ্নটি সেই অভিজ্ঞতা থেকে।

অমিতাভ:- ইন্টারেস্টিং। এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম তার অনেককিছুই, জানো তো, আমি নিজেই জানতাম না। শুধু মুর্শিদাবাদের ব্যাপারটা আবছা জানা ছিল। আমিও এন আর সি চলাকালীন সময়েই এসব ব্যাপার নিয়ে সজাগ হই। নাহলে, এই আজকের যুগে, কে আর পূর্বপুরুষদের নিয়ে মাথা ঘামাতে চায়?  যেমন ধরো, আমাদের কুলদেবতারা যে আগরতলাতে আছেন, তা আমার আগে জানা ছিল না। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের শিকড় কি তাহলে একমাত্র তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে, অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে-ই ? কোনও কারণে লিগেসি ডেটায় বাবার নাম না পেলে আমাকেও কি তাহলে বলা হবে বাংলাদেশি-ই? এই ইন্টারভিউ যে সব পাঠকের ভালো লেগেছে, যে সব পাঠক তাঁদের ভালো লাগার কথা ফেসবুকে, তোমাদের ওয়েব-পত্রিকায়, ফোনে, মেসেজে জানিয়েছেন– সবাইকে আমার ধন্যবাদ। এঁদের মধ্যে কাশ্যপজ্যোতি ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন তিনি শুনেছেন তাঁদের পূর্বপুরুষ মিথিলা থেকে এসেছিলেন। কবি বিজয় ঘোষ জানাচ্ছেন তাঁদের পূর্বসূরিরা গুজরাত থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে সিলেট এসেছেন। এসব আমারও ছোটোবেলা থেকে শোনা। সিলেটে বহির্বঙ্গ থেকে অনেককে আনিয়ে তাঁদের দিয়ে বসতি স্থাপন করানো হয়েছিল। কালক্রমে এঁরা বাঙালি জাতিগঠন প্রক্রিয়ার অঙ্গ হয়ে যান। গড়ে ওঠে বৃহৎ বাঙালি জাতি। যা সম্ভবত এক মিশ্র জাতিসত্তাই। আবার বিজয় ঘোষ খুব ইন্টারেস্টিং একটা দিকে তর্জনী সংকেত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের উত্তরপুরুষ ভবিষ্যতে আসাম থেকে ( থাকতে না পেরে?) ছড়িয়ে পড়বে বহির্বঙ্গে। মিশে যাবে যে যে-প্রদেশ থেকে এসেছিল, সে সেখানকার জাতিসত্তায়। আমার মনে হয় এই উল্টোদিকে চলার স্রোত হয়ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই আসামের এই পলিটিক্স অব আইডেন্টিটির জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে এবং এ রাজ্যের ক্রমসংকোচমান জীবিকাক্ষেত্রে নিজেদের জায়গা করতে না পেরে বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের বিবাহসূত্রে পরবর্তী প্রজন্ম অন্য জাতিসত্তার পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠছে। আমার মামাবাড়িতেই যেমন তামিল জামাই, খাসিয়া বউ– হয়ত এসব বাঙালির এখনও- চলতে -থাকা পার্টিশনজনিত রাজনীতির কারণেই হচ্ছে। আবার দেখো, বাঙালি মুসলমানদের ক্ষেত্রে আসামে এর ঠিক উল্টোটা ঘটল। বঙ্গীয় মূলের যে মুসলমানরা একদা স্রেফ খেয়ে-পরে বেঁচে-থাকার জন্য অসমিয়া ভাষাকে মেনে নিয়েছিলেন, তাঁরাই বর্তমান সময়ে এসে আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি আদায় করতে চাইলেন। জন্ম নিল মিঞা কবিতা। কী ভীষণ চার্জড যে এই কাব্যধারাটি তা একমাত্র যারা পড়েছেন তাঁরাই জানেন।

দারুহরিদ্রা:- তাই বলছিলাম, আপনি পরিবারের বিষয়ে আমাদের বিশদে জানান।

অমিতাভ :- বলছি। কোনও কোনও পাঠক , যেমন অনুজপ্রতিম মৃত্যুঞ্জয় দাসও, শুনতে চাইছিল। তবে একটা কথা জেনে রাখো বাচ্চারা, আমার পূর্বপ্রজন্মের সবাই কিন্তু সাধারণ মানুষ। কেউ মহাপুরুষ নন। তাঁদের কারো কারো অর্জন কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাধারণ্যে হয়ত কিছুটা স্বীকৃত এবং আলোচিত। আমি কিন্তু তাঁদের গুণটুকুই বলব। দোষ বলব না। আমরা সবাই দোষে-গুণে মানুষ। যে মানসিকতা বড়দের দোষ নিয়ে চর্চা করে আনন্দ পায়, আমি দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে সেই মানসিকতা নিয়ে বড় হইনি। আরেকটা কথা, যেহেতু তোমরা এই পর্বে আমার জীবনের কিছু কিছু কথা জানতে চাইছ, প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, নতুন জমানার নতুন রেসিপি অনুসারে যেরকম কাসুন্দি দিয়েও মাংস হয়— আমি পূর্বসূরিদের কাসুন্দিতে আত্মমাংসের তরকারি রাঁধতে চাই না। মহাকবি বিনয় কী বলেছিলেন মনে আছে? ‘সকল ফুলের কাছে এত মোহময় মনে যাবার পরেও মানুষেরা কিন্তু মাংস রন্ধনকালীন ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে’?

দারুহরিদ্রা:- আমাদের প্রশ্ন পাল্টাবে না। এবারে উত্তর আপনি কিভাবে দেবেন সেটা আপনার ব্যাপার। প্রশ্নের ক্ষেত্রে আপনার কোনও চয়েস নেই। আপনার কমফোর্ট জোনে তো আপনাকে আমরা সবসময় রাখতে পারব না!

অমিতাভ:- তাহলে তো আমাকে বলতে হবেই। যদি কোথাও কোনও আত্মপ্রচারের গন্ধ পাও তবে কেটে দিও। একটা জিনিস অবশ্য ঠিক। এই মাসে আমি উনষাট বছরে পা দেব। এখন কোভিডের সময়। চারপাশে চেনা-অচেনা, বেশি-বয়সের কম-বয়সের অনেকেই পরপর মারা যাচ্ছেন/ যাচ্ছে। আমরা প্রত্যকেই কমবেশি বিপন্নতায় ভুগছি। হয়ত এই বিপন্নতাই আমাকে  নিজের কথা বলিয়ে নিতে চাইছে। নাহলে আমিও হয়ত তোমাদের এই সাক্ষাৎকারে আত্মজৈবনিক পর্বের ব্যাপারে অত সহজে রাজি হতাম না। আরেকটা ব্যাপারও আছে অবশ্য, আমাদের প্রজন্ম সম্ভবত একটা সভ্যতার শেষ ধাপ। আমাদের জন্ম, বিকাশ সবকিছুই এক সামন্তবাদী জীবনধারায়। এখন জন্ম নিয়েছে নতুন এক সভ্যতা। বানিয়া সভ্যতা। এই সভ্যতা পরম্পরা মানে না। ঐতিহ্যের লালনে আগ্রহী নয়। অর্থাৎ স্মৃতির প্রতিপালনে আগ্রহ নেই এই সভ্যতার। আর এই সভ্যতাকে আঘাত করতে হবে স্মৃতি দিয়েই। আমার স্মৃতি কোনও বিশিষ্ট স্মৃতি নয়। অনেকের স্মৃতির স্রোতের সঙ্গে হয়ত গিয়ে মিলে যাবে। খেয়াল করে দেখেছ, গত দু’টি দশক ধরে বাংলাভাষায় স্মৃতিকথা লেখার এক জোয়ার এসেছে?  

দারুহরিদ্রা:- তত্ত্বকথা পরে হবে, এখন আপাতত স্মৃতিতেই ফিরে যান আপনি!

অমিতাভ:- আমার দাদুর বাবার নাম কমলনারায়ণ। তাঁর আগের কারো নাম জানি না। দাদুরা ছিলেন দু’ভাই। দুর্গাচরণ, অম্বিকাচরণ। ওহ হ্যাঁ। আরেকজনের নাম মনে পড়েছে। প্রমথনাথ চৌধুরী। ছোটোবেলা জ্যাঠার মুখে ওঁর নাম প্রচুর শুনেছি। আমাদের বাড়ির, তবে আমার কে ছিলেন জানি না। ইনি নাকি সিলেটের প্রথম আমেরিকা-ফেরত। আমেরিকার গ্র্যাজুয়েট। দেশে ফিরে যথারীতি একঘরে। এই ছোঁয়াছুঁয়ির বাই হিন্দুদের আর যাবে না! অথচ দেখো কোভিডের এই ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের জন্য ভারত আজ দুনিয়ার কাছেই একঘরে। আবার রাজনীতি চলে এল, তাই না? দুর্গাচরণ ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞ, সম্ভবত সংস্কৃতজ্ঞও। জ্যাঠার মুখে শুনেছি তিনি নাকি আস্ত পাঁঠার মাংস খেয়ে ফেলতেন। অবশ্যই হঠাৎ কখনও। তাঁর দাপটে নাকি পুরুতঠাকুররা আমাদের সিলেটের বাড়িতে ভয়ে ভয়ে পুজো করতেন। কারণ তিনি পুরুতদের পুজোর ভুল ধরে ফেলতেন। এ কথা এই শিলচর শহরেরই এক পুরোহিতের কাছ থেকে আমার শোনা। অম্বিকাচরণ মানে আমার দাদু তিনটি ভাষাই জানতেন। বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত। শেষজীবনে তাঁর সামনের টেবিলে যে বইগুলো থাকত সেগুলো আমার স্পষ্ট মনে পড়ে- গীতা, চণ্ডী, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কাশীদাসী মহাভারত, কৃত্তিবাসী রামায়ণ, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র। অম্বিকাচরণ তখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত, কিন্তু বিছানায় বসে টেবিলে বই খুলে ধরে পড়তে পারেন। বঙ্কিম তাঁর প্রাণপ্রিয় ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে স্বচক্ষে দেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, ১৯১৯ সালের ৬ নভেম্বর সকালে সিলেটের টাউনহলে বিপুল জনসমাগমের মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল, সেই সংবর্ধনাগীতির রচনাকার ছিলেন অম্বিকাচরণ। রবীন্দ্রগবেষক উষারঞ্জন ভট্টাচার্যের দুটি বইতেই এর উল্লেখ আছে। ‘নীল-সোনালির বাণী’ ও ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ’ —দুটোতেই।

সেই সংবর্ধনাগীতি।
অম্বিকাচরণ। শিলং। ১৯৬৩।

 

অম্বিকাচরণ ডায়েরি লিখতেন। আশ্চর্য! তাঁর ডায়েরির কোথাও রবীন্দ্রদর্শনের বিবরণ নেই। এই ডায়েরি স্মৃতিকথা নয়, পার্টিশন ন্যারেটিভ তো নয়ই। নাহলে কবেই আমি অম্বিকাচরণের এই ডায়েরি প্রকাশ করে ফেলতাম। এর অনেক কিছুই বিভিন্ন সূত্র থেকে আহরণ। মাঝেমধ্যে বাল্যস্মৃতি আছে, ছোটখাটো মন্তব্যও আছে। ডায়েরির দুটো জায়গা তোমাদের পড়ে শোনাই কেমন? ফোনে শোনাচ্ছি তো, ঠিক করে লেখো কিন্তু!

১. ‘সকলেই বলেন এবং বোধহয় অনেকেই বিশ্বাসও করেন, এই জীবনের পর আরেক জীবন আরম্ভ হইবে, তারপর আরেক জীবন, তারপর আরেকটা—এই রূপে জীবনের পরম্পরা চলিতে থাকিবে, যতদিন না কর্ম্ম শেষ হয়। আমি তাহা ধারণা করিতে পারি না। আমার মৃত্যুর পর আমার আত্মার একটা পৃথক অস্তিত্ব থাকিয়া যাইবে এবং সেই আত্মা অন্য রূপে জন্মগ্রহণ করিবে, ইহা আমার বিশ্বাস হয় না– অন্ততঃ এখন পর্য্যন্ত হয় নাই। ‘

২.’ বিধিলিপি– শব্দটা আমাদের সকলেরই পরিচিত। মানুষের জন্ম হইলেই বিধাতাপুরুষ নাকি তার ভবিষ্যৎ জীবনের ক্রিয়াকলাপ পাপ-পুণ্য, সুখদুঃখ ইত্যাদি পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বিচার বিবেচনা করিয়া স্থির করতঃ তা সমুদয় তার ললাটে লিখিয়া রাখেন…বিধাতাপুরুষের এই কাজে কি পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম ব্যয়িত হয় তাহা অনুমান করাও অসম্ভব। জগতে অগণিত জীব প্রত্যহ জন্মিতেছে। কিন্তু বিধাতাপুরুষ জীব বা মানুষের জন্য এতটা কষ্ট স্বীকার করেন কেন, আর তাদের জন্য অতটা ব্যস্তই বা হন কেন?’

এই ডায়েরি থেকেই জানতে পারি যৌবনে অম্বিকাচরণ ‘বিজয়া’ ও ‘কমলা’ নামে দুটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার কাজে জড়িত ছিলেন। অধ্যাপক-গবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘শ্রীভূমি’ পত্রিকা প্রকাশের শতবর্ষ উদযাপন সমিতির স্মারকগ্রন্থ থেকে জানতে পারি ১৯১৫ সালে সুরমা সাহিত্য সম্মিলনীর দ্বিতীয় অধিবেশনে অম্বিকাচরণ অংশগ্রহণ করেছিলেন, সিলেট থেকে শিলচর এসেছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন স্কুল সাব-ইনস্পেক্টর। পরে ব্রিটিশের চাকরি ছেড়ে দেন। স্বাধীনভাবে ওকালতি শুরু করেন। অসহযোগ আন্দোলনেও জড়িয়ে পড়েন। তাঁকে নাকি বলা হত সিলেটের গান্ধি।

মাতৃহারা আমার শৈশবের প্রথম দিকটা কেটেছে অম্বিকাচরণের নিবিড় অভিভাবকত্বে। শেষদিকে নিজের হাতে চিঠি লিখতে পারতেন না। আমাকে দিয়ে লেখাতেন। বাড়ির সবাই মজা করে আমাকে তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি বলতেন। একটা গল্প বলি। ১৯৭০ কিংবা ৭১ সালে বাবাদের মামিমা তাঁর বড় ছেলেকে নিয়ে সিলেট থেকে শিলচর চলে আসেন। (তাঁরা দুজনেই বহুদিন হল প্রয়াত। সুতরাং আমার এই প্রকাশ্য বিবৃতিতে তাঁদের নাগরিকত্ব যাবার কোনও সম্ভাবনা নেই।)

সিলেট থেকে আসার আগে বাবাদের মামাতো ভাই যে পোস্টকার্ড দিয়েছিলেন তার একটি লাইন এখনও মনে জ্বলজ্বল করে ভাসে — ‘ চক্ষের জলে বক্ষ ভাসে।’

মাতা-পুত্রের ঠাঁই হয় আমাদের বাড়ির পেছনের এক পুকুরওয়ালা ছোট্ট বাসাবাড়িতে। একদিন আমি ঠানদিদিকে মানে বাবাদের মামিমাকে পুকুরপাড়ে বসে ধূমপান করতে দেখে ফেলি। তিনি আমার চোরা অস্তিত্ব টের পাননি। আমি হাঁপাতে হাঁপাতে এক ছুট্টে আমার ‘একমাত্র বন্ধু’ দাদুর কাছে আসি। তাঁকে অত্যন্ত দ্রুততায় ঘটনার বিবরণ দিই। দাদু নীরবে শোনেন, আমাকে বলেন দেখে আসতে দরজার বাইরে কেউ আমাদের কথা শুনছে কিনা। দেখি, না, বাইরে কেউ নেই। দাদু আমাকে তাঁর পাশে বসতে বলেন। শান্তভাবে হিন্দুঘরের বালবিধবাদের দুর্দশার কথা বুঝিয়ে বলেন। বলেন, ওঁদের তো আমোদ-আহ্লাদের কিছু নেই। ওইটুকুই যা আমোদ। আমি যেন, ঠানদিদির এই গোপন ধূমপানের কথা বাড়ির কাউকে কক্ষনও না বলি। আমি দাদুর কথা আমার এই আঠান্ন বছর অবদি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছি। আজ আমাদের সেই শিলচর বাড়িরও বড়রা কেউ জীবিত নেই। এই প্রথম দাদুকে দেওয়া কথা ভাঙলাম।

আমাকে দাদু ওই বয়সেই ওরিজিনাল বঙ্কিমচন্দ্র পড়িয়েছিলেন। সেই গদ্যের কী অপরূপ রূপ, কী অসামান্য ধ্বনিমর্মর! আর আমাকে আঙুলে গুণে কবিতার ছন্দ শিখিয়েছিলেন। আমার প্রথম ছন্দগুরু অম্বিকাচরণই। অবশ্য একথা একইসঙ্গে বলে দেওয়া ভালো, অম্বিকাচরণ মূলত পদ্যকার ছিলেন। আর নিজে পদ্যকার হতে গেলে যে পদ্যকারেরই নাতি হতে হবে —আমি ঘুণাক্ষরেও একথা বলতে চাইছি না। কবিত্ব কোনও বংশগত রোগের নাম নয়। আমি যা বলতে চাইছি তা হল, ঘটনাচক্রে আমি এমন। একজনকে দাদু হিসেবে পেয়েছিলাম যিনি পদ্য লিখতে জানতেন।  

১৫. দারুহরিদ্রা:– তাহলে কি আপনি বলছেন যে কবির যাত্রাটা একান্তই নিজের? কবি-পরিচিতির পেছনে জিনের কোনও অবদান নেই?

অমিতাভ:- এর উত্তরে তোমাদের আমি বোদল্যেরের একটি কবিতা শোনাবো।

 

 

কবিতাটিতে বোদল্যের কবির যে সংজ্ঞা নিরুপণ করছেন, আমি তাকে মাথায় তুলে রাখি। যদিও আমি ভাল করেই জানি আমার নিজের গায়ে সেই আকাশবিহারী ডানা নেই। প্রসঙ্গত এই কবিতাটি পড়লে আমার কোলরিজের রাইম অব দি এনশিয়েন্ট ম্যারিনারের অ্যালবাট্রসের কথা মনে পড়ে। আরেকটি কথা । আমি কিন্তু ফ্রেঞ্চ একেবারেই জানি না। আমার চারজন বন্ধু জানে। তাদের মধ্যে তিনজন আবার ফ্রেঞ্চ পড়ায়। ছাত্রবেলায় তাদের কন্ঠে আবৃত্তি শুনে এই ভাষার লাবণ্য ও মাধুর্যে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আজও তার রেশ কাটেনি। আজকাল তো সবকিছুরই অনেক সুবিধে হয়ে গেছে। তাই ফ্রেঞ্চ কবিতা শুনতে শুনতে নিজেকে বিশ্বনাগরিক ভাবতে ইচ্ছে করে। মাঝেমধ্যে বিনয়ের ওই লাইনটিও মনে পড়ে — ‘ সেই আশ্চর্য মমতাময়ী সংকলন গ্রন্থের ভিতরে আমারো কবিতা আছে এই কথা ভেবে ভেবে গর্ব হয়!’ আছে কি ? থাকবে কি ? না । সম্ভবত আমার একটি কবিতাও থাকবে না । এ কেবল দিনে রাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে বৃথা চেষ্টা…

না। কবি-পরিচিতির পেছনে জিনের কোনও অবদান নেই।

 

ভিডিও সৌজন্য– ইউটিউব
Tags: অমিতাভ দেব চৌধুরীউত্তরপূর্বধারাবাহিক সাক্ষাৎকারসাক্ষাৎকার
Previous Post

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || দশম পর্ব

Next Post

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || একাদশ পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
প্রবুদ্ধসুন্দর কর || একাদশ পর্ব

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || একাদশ পর্ব

Comments 2

  1. প্রবুদ্ধসুন্দর কর says:
    1 year ago

    তুমুল। কোনো কথাই আর গোপন রইল না। শেয়ার করছি।

    Reply
  2. Basab roy says:
    1 year ago

    আশ্চর্য কথক অমিতাভ!

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath