Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home গদ্য

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || ষোড়শ পর্ব

নীল উপত্যকার রাখাল || ষোড়শ পর্ব

Daruharidra by Daruharidra
13/06/2021
in গদ্য
2
প্রবুদ্ধসুন্দর কর || ষোড়শ পর্ব
275
VIEWS

১৮.

তখন টি এন ভি অর্থাৎ ত্রিপুরা ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স, উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে, ত্রিপুরাতে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে। তৎকালীন টি এন ভি-র চেয়ারম্যান বিজয় হ্রাংখল। অনন্ত দেববর্মা স্বরাষ্ট্র প্রধান । সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কার্তিক কলই। ১৯৬৭-র ২২ জুন টি ইউ জে এস অর্থাৎ ত্রিপুরা উপজাতি যুবসমিতি গঠন হয়। পাহাড়ের রাজনীতি আস্তে আস্তে জটিল বাঁক নিচ্ছে। ১৯৭২-৭৩, এই সময়ে ত্রিপুরার ককবরকভাষী উপজাতিদের মধ্যে একটি স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে–

কৗচাক সিনিয়া
কুফুর সিনিয়া
চৗঙ বুইনি তলা তংয়া।

বাংলায় এর অর্থ, আমরা লাল চাই না / সাদাও চাই না/ অন্যের নীচে থাকতে চাই না। লাল মানে সি পি আই এম। সাদা মানে কংগ্রেস। হালাম সম্প্রদায়ের যুবক বিজয় হ্রাংখলের তখন উপজাতি যুবকদের মধ্যে ইংরেজি বলিয়ে হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা। তখনই বিজয় জিনস, পাইথন রঙের জ্যাকেট, মাথায় টুপি পরতেন। প্রকাশ্যে তখন কেউ বিজয়ের নাম উচ্চারণ করতে না চাইলে আকারে ইঙ্গিতে বলা হত, আরে ওই যে লোকটা অজগর রংয়ের জ্যাকেট পরে! তখন ত্রিপুরা উপজাতি যুবসমিতির নেতৃত্বে হরিনাথ দেববর্মা, দ্রাউ কুমার রিয়াং, শ্যামাচরণ ত্রিপুরা ও নগেন্দ্র জমাতিয়ার বেশ নামডাক। এরপরেই শোনা যেত বিজয় হ্রাংখল, রতিমোহন জমাতিয়া, সুখদয়াল জমাতিয়া, বুদ্ধ দেববর্মার নাম। উপজাতি যুবসমিতির ছাত্রসংগঠন টি এস এফের প্রেসিডেন্ট ছিলেন খোয়াইয়ের বিশ্বকুমার দেববর্মা আর জেনারেল সেক্রেটারি দেবব্রত কলই। রবীন্দ্র দেববর্মাও তখন ছাত্রনেতা ছিলেন। জনশিক্ষা আন্দোলন ও গণমুক্তি পরিষদের হাত ধরে সি পি আই এমও সংগঠনকে মজবুত করেছিল ত্রিপুরাতে। সি পি আই এমের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নাম ছিল শান্তিসেনা। উপজাতি যুবসমিতির স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ছিল ত্রিপুরসেনা। ত্রিপুরসেনা মূলত যুবকদেরই সংগঠন। ১৯৭৫ সালে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে উপজাতি যুবসমিতি, সি পি আই-র গণমুক্তি পরিষদ, সি পি আই এমের গণমুক্তি পরিষদ, উপজাতি কংগ্রেস যৌথ আইন অমান্য আন্দোলন করেছিল। এদিকে বিজয় হ্রাংখল চেয়েছিলেন ত্রিপুর সেনাকে নিজের মতো করে সাজাতে। কারাম নামে একটি ইংরেজি বুলেটিনও সম্পাদনা করতেন। হালাম ভাষায় কারাম মানে আমার দেশ। তাছাড়া উপজাতি যুবকদের মধ্যে বিজয়ের গ্রহণযোগ্যতা তো ছিলই। এতে শীর্ষ নেতৃত্ব প্রমাদ গুনলেন। উপজাতি যুবসমিতি থেকে বিজয় হ্রাংখলকে বহিষ্কার করা হল। ১৯৮০-র জুনের দাঙ্গার পর উপজাতি যুবসমিতির অনেক নেতাই গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিলেন। কেউ হয়ত পালিয়ে শিলং চলে গেছিলেন। বিনন্দ জমাতিয়া, চুনি কলই, উপহরণ জমাতিয়া, খগেন্দ্র জমাতিয়া, হেমন্ত জমাতিয়া পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ফেরার হন। গড়ে তোলেন উগ্রবাদী সংগঠন এ টি পি এল ও। সংগঠনের চিফ বিনন্দ জমাতিয়া। তখন বিজয় হ্রাংখলকে কমলাছড়ার বাড়ি থেকে অপহরণ করে সামিল করা হয় এ টি পি এল ও তে। আরও পরে বিজয় হ্রাংখল এ টি পি এল ও-র শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব পান। পরে বিনন্দ জমারিয়ার নেতৃত্বে এ টি পি এল ও-র বেশিরভাগ সদস্য আত্মসমর্পণ করলে বাকিরা ১৯৮১তে টি এন ভি তথা ত্রিপুরা ন্যাশনাল ভলান্টিয়ারস হিসেবেই নিজেদের সংগঠনের ঘোষণা দেন। বিনন্দ জমাতিয়া ও খগেন্দ্র জমাতিয়া সি পি আই এম পার্টিতে যোগ দেন। তখন ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় টি এন ভি আক্রমণের লক্ষ্য ছিল তহবিল মজবুত করার জন্যে লুটপাট আর ৫ টি স্বশাসিত জিলাপরিষদ এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে এলাকাগুলিতে উপজাতি সংখ্যাগরিষ্ঠতা কায়েম করা। টি এন ভি-র উগ্রবাদী কার্যকলাপ ধলাই উপত্যকাতেও জনসাধারণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছিল বই-কি।

একদিন আমাদের সহপাঠী গ্রহণ দেববর্মা স্কুলে একটি অদ্ভুত প্যাকেট নিয়ে হাজির। প্রেয়ার শুরুর আগে আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের প্যাকেটের একটিতে কিছু চকোলেট। একটিতে বিস্কিট। আরেকটিতে শুকনো আচারের মতো। আর একটি রঙিন ব্রোসিওর। অক্ষর ও লেখাগুলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। প্রেয়ারের পর গ্রহণ হেডমাস্টারের রুমে প্যাকেট জমা দিয়ে এল। স্যারেরাও ভিড় জমালেন। গ্রহণকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, গতকাল দিনের বেলা একটি ছোট্ট ফ্লাইট ওদের বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এগুলো ফ্লাইট থেকে ফেলে দিয়ে গেছে। পরে জানা গেল, ব্রোসিওরের অক্ষর ও লেখাগুলি চাইনিজ। গ্রহণেরও খাবারগুলো খাওয়ার লোভ হয়েছিল কিন্তু সাহস পায়নি। খাবারগুলো দেখে আমাদেরও লোভ হয়েছিল।

একদিন বাজারবারে ১৩/১৪ বছরের দুই উপজাতি কিশোর বাবাকে পেছন থেকে ডাকছিল, অই অই। বাবা এগিয়ে যেতেই একটি কিশোর বাবাকে বলল, হেইদিন যে তুই মাছ নিছে, মাছের ডুলাটা দিলি না? বাবা তো অবাক! বাবা একটু হেসে বললেন, আমারে দিছো! কিশোরটি বলল, হ হ তরেই দিছে। তোমরা মনে হয় ভুল করতাছো। অন্য কেউরে দিছো। আমি তো মাছ খাই না। বাবার কথা শুনে ছেলেটি হেসে কুটিপাটি। বাবা আবার বললেন, আরে আমি মাছ খাই না তো। হাসতে হাসতে ছেলেটি সঙ্গীটিকে বলল, অই শোন্ শোন্, ডুলা ফিরত দিয়ন লাগব কইয়া হে বুলে অখন মাছ ঐ খায় না। ছেলেটির হাসি আর থামতেই চাইছিল না। ভিতর বাজার ছাড়া হালাহালিতে প্রকাশ্যে মেনরোডে কোনো মদ্যপের মাতলামি অবশ্য চোখে পড়েনি। লুকিয়ে লুকিয়ে কাউকে গাঁজা খেতেও দেখিনি। আমাদের সিনিয়ররা যারা সিগারেট খেত, বালোয়ারি স্কুলের পার্কে বসে সাবধানে কখনো বা চল্লিশ ফুটির জনহীন রাস্তায়। তবে সিলেটি কোনো মহিলা পান খান না, এমন ঘটনা বিরল। সিলেটি কিশোর কিশোরীদেরও পান খেতে দেখা যায়। তবে কৃষ্ণ ঠাকুরের মেয়ে সতী আমাকে বলেছিল, স্কুলে আমাদের কয়েকটি মেয়ে খইনি খায়। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই। অল্প পরিমাণ সাদাপাতা চুন দিয়ে ডলে মুখের ভেতরে নীচের মাড়িতে দিয়ে ঠোঁটে চেপে চুপচাপ বসে নাকি ক্লাসও করে। বাবা তরুণ বয়সে কাঁচি মার্কা ও ক্যাপস্টান খেতেন। ছোটোবেলায় আমি একদিন বাবাকে বলেছিলাম, আমি তোমার মতো বড়ো হইলে মেচ জ্বালাইয়া সিগারেট খামু। সেদিন থেকেই বাবা সিগারেট ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে আমার ঠাকুরদা প্রফুল্ল চন্দ্র কর নাকি আগরতলা কাঁসারি পট্টির দোকানে মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণে গাঁজা খেতেন। অনেকেই বলে, যে লোকের কোনো নেশা নেই সে নাকি সন্দেহভাজন।

চৌধুরীবাড়িতে বড়মার নিজের ছোটোবোন বছরে এক দু-বার আগরতলা ভট্টপুকুর থেকে বেড়াতে আসতেন। আমরা মাসিমণি বলে ডাকতাম। খুবই প্রাণচঞ্চল ও আড্ডাবাজ। বাবাকে মাস্টারবাবু বলে ডাকতেন। সেবার মাসিমণি একা নন। সঙ্গে ভাসুরের মেয়ে জবাদি। কথাবার্তা ও স্টাইলে আমার দেখা প্রথম আধুনিক যুবতি। বেশ সুন্দরী দেখতে। অনেকটা তৎকালীন হিন্দি ফিল্মের অভিনেত্রী রামেশ্বরীর আদল। হাই হিল। জীবনে সেই প্রথম আমি কোনো নারীর ব্লাউজের পেছনে হরতন বা পানপাতার ডিজাইন দেখি। দৈনিক সংবাদের ছোটোদের পাতায় লেখেন শুনে আমার সমীহ আরও বেড়ে গেছিল।

হালাহালিতে প্রথম যেদিন আমি ঘেইছে শব্দটি শুনি, চমকে উঠেছিলাম। পুরুষ ও নারীর শারীরিক মিলনকে বোঝাতেই এই ঘেইছে শব্দটি। আমার মনে হয়েছিল, ঘাই শব্দটির সঙ্গে কোথাও যেন এর ধ্বনিগত মিল আছে। যদিও ত্রিপুরাতে ঘাই শব্দটির অর্থ ছুরি, কিরিচ বা বল্লম জাতীয় তীক্ষ্ণ কিছু দিয়ে কাউকে আঘাত করা। হালাহালি, লুৎমা অঞ্চলে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের সবাই মাদৈগাঙ। শান্তির বাজার ও আভাঙ্গার দিকে বেশ কিছু রাজারগাঙ। হালাহালিতে মাদৈগাঙ শ্রেণির গালিগালাজের সঙ্গে সিলেটি গালাগালির মিল আছে। এই ঘেইছে শব্দটিকে মাদৈগাঙ শ্রেণি বলে ফেকানি। সিলেটিতে পুয়া মানে ছেলে। গালিগালাজের ক্ষেত্রে এই পুয়া শব্দটি মাদৈগাঙেরাও বলে। আরও গ্রামের দিকে গেলে এই পুয়া হয়ে যায় পিতক। জনৈক বিদগ্ধ ব্যক্তি বলেছিলেন, কোনো ভাষাকে আয়ত্ত করতে গেলে ওই ভাষার জাতিগোষ্ঠীর পিছড়েবর্গদের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত। সেই ভাষার প্রাণ তাদের কাছেই থাকে। অনেক ভালো ও সুন্দর শব্দই পরবর্তীকালে ইতর শব্দে পরিণত হয়েছে। যেমন বাল শব্দটি শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদে কেশ অর্থেই উদ্ধৃত। এখন সেই শব্দ বাঙালির স্ল্যাং। মাদৈগাঙেরা যেমন বলে বালগ। শিশ্ন অর্থে সিলেটিরা পেল, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা পেলগ আকছার বলে থাকে। মনে হয়, phallus শব্দটির সঙ্গে এর কোথাও ধাতুগত মিল আছে। শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদে বাল শব্দটির অর্থ কেশই আছে। পরে এটি গালি হয়ে গেল। মাতৃগ্রামের মতো শব্দ অপভ্রংশ হতে হতে হয়ে গেল মাগি! হালাহালিতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের মুখে গালি হিসেবে শুনেছি লামচা যার মানে ভবঘুরে। মেয়েদের গাল দিলে লামচি। যেমন লাঙ্গুনি মানে বেশ্যা। এই বেশ্যা শব্দটি ততটা অশ্লীল ছিল না। অতীতে শ্রেষ্ঠীরা ভ্রমণে বেরোলে পথে বিশ্রামের জন্যে বেশ বা পান্থশালা থাকত। সেই বেশ যে সুন্দরী নারী রক্ষণাবেক্ষণ করতেন, তাকেই বেশ্যা বলা হত। এই শব্দটি বহুদিন ধরে গালি হিসেবেই চালু। রাজারগাঙদের দুটো গালি যেমন মালকর হেয়াক। মালক ঠকাউরা। আরও কিছু লব্জ তখন হালাহালিতে চালু ছিল বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মুখে। কেউ কারো কাছে কোনো কিছু চাইলে দিতে অনিচ্ছুক ছেলে বা মেয়েটি বলত, হইব নে ভাংতি নাই আধলি আছে সিকি নাই। উপেক্ষা বা নস্যাৎ করতে গিয়ে আরেকটি লব্জ অদ্ভুতভাবে টেনে টেনে বলা হত, অয়্ অয়্। আরেকটি লব্জ ছিল, হরগি। কোনো শ্রমিক মোট বা জলের ভাঁড় বয়ে নিয়ে আসার সময় আগে থেকেই রাস্তা ফাঁকা করার জন্যে আওয়াজ দিত, হরগি হরগি। মানে সরে দাঁড়াও। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে গিয়েও হরগি বলা হত।

মানুষ কেন গালি দেয়? প্রতিটি গালিই শরীরকে কেন্দ্র করে। এর মানে আমরা শরীরকে শ্রদ্ধা করতে শিখিনি। আমাদের যৌনতাকে সম্মান জানাতে শিখিনি। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উল্লেখ ছাড়া কোনো গালি ভাবা যায়! জন্মের সময় মায়ের সঙ্গে নাড়িকাটার বা ছিন্ন হওয়ার যে ট্রমা, নিরাপদ গর্ভ থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশে ভূমিষ্ঠ হওয়ার যে ট্রমা আমরা অবচেতনে বয়ে বেড়াই এর কোনো ফলশ্রুতি নয়ত গালিগালাজ? আধ্যাত্মিকতা শরীরকে শ্রীবিগ্রহের মন্দির বললেও শরীর সম্পর্কে ধর্মীয় সম্প্রদ্রায়গুলির শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। তাছাড়া রয়েছে পারিবারিক ভুলভাল যৌনশিক্ষা। অশ্লীল প্রবাদ প্রবচনের আড়ালে সমাজ ও সভ্যতার পর্যবেক্ষণ ও দার্শনিক আভাসও থাকে। তৎকালীন কমলপুর মহকুমার মহারানি অঞ্চলে প্রচলিত কয়েকটি ককবরক প্রবচন শুনলেই সামাজিক অভিজ্ঞতা ও দার্শনিক ইঙ্গিতটিও বোঝা যায়। কোস্রাং আ হাং সেলের লুই হাং অর্থাৎ কর্মঠ যে মাছ সেঁকে, অলস যেজন নুনু সেঁকে। সামুং কুরুই লুইবায় থুং অর্থাৎ নিষ্কর্মা নুনু নিয়ে খেলে। দরবারন পাইয়া সিপাকন পাইও মানে কাপুরুষের যত বীরত্ব যোনির উপর। বাবার মুখে আমি কোনোদিন শালা শব্দটিও শুনিনি। মা আমাকে সিলেটি গালাগাল পাড়তেন। কিন্তু সেগুলো অশ্লীল ছিল না। কৈশোরে আগরতলায় আমি যে গালাগাল শুনিনি তা নয়, কিন্তু অনেক গালিরই মানে জানতাম না। নগেনের মুখে মণিপুরি দুটো গালিই আমি শুনেছি। নথু ও নমাই নথু। নগেন আমাকে মোষের পিঠেও চড়তে শিখিয়েছিল। মোষের মতো শান্ত প্রাণী খুবই কম। নগেন আমাকে শিখিয়েছিল, মোষ যখন খাড়াই বেয়ে ওঠে মোষের পিঠে বসে তখন সামনের দিকে ঝুঁকে থাকতে হয়। আর মোষ যখন ঢালু রাস্তায় নামে, মোষের পিঠে বসে তখন শরীরকে পেছনের দিকে টেনে রাখতে হয়। নয়ত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অভিজিৎ বা বাগানের সৌমিত্রর মুখেও আমি কোনোদিন কোনো অশ্লীল শব্দ শুনিনি। অভিজিৎ এক নিষ্পাপ মুখ। ক্লাসে খ্যাপা বলতে যা বোঝায়, তেমনই ছিল বিশ্বজিৎ ও কাজল সিংহ। আমরা পাগলা কাজল বলেই ডাকতাম। বিশ্বজিতের চুল ছিল খাড়া খাড়া। এ ধরনের চুলের ছেলেরা নাকি বেশ রাগি ও মেজাজি হয়। বিশ্বজিৎও তাই ছিল। নাকফুলের দুই ভাই স্বপন ও তপন পড়ত আমাদের ক্লাসে। স্বপনের মৃগীরোগ ছিল। মাঝেমধ্যেই ক্লাসে অসুস্থ হয়ে পড়ত। মুখ দিয়ে লালা ঝরত। সঙ্গে খিঁচুনি। সহপাঠী ছেলেদের মধ্যে সজল, চন্টু, সঞ্জীব, পঞ্চু, কাজল, জয়দেব স্কুলে না এলে ফাঁকা ফাঁকা লাগত। সহপাঠী মেয়েদের মধ্যেও এমন কয়েকজন ছিল বই-কি। একটা প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই মাথায় ঘুরে ফিরে আসত। কুঞ্জমালা সিংহের মাতৃভাষা মণিপুরি, কিন্তু পাঠ্যবই বাংলা কেন? রমেনকেই বা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় পাঠ্যবই না পড়ে বাংলাতে কেন পড়তে হবে? গ্রহণ দেববর্মার পাঠবই -ই বা কেন বাংলা! একই প্রশ্ন কাজ করত ছোটোবেলায় যখন মামাবাড়ি যেতাম। দীপামাসিদের কেন অসমিয়া ভাষার টেস্টপেপার পড়তে হয়? ১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান নাকি বাংলাদেশের মাজমা, মুর্মু, হেমব্রম ইত্যাদি সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু সাঁওতালদের বলেছিলেন, এবার তোরা বাঙালি হয়ে যা। সত্যিই বলেছিলেন?

স্বপনপুরী সিনেমাহল চালু হওয়ার পরে দু-জন বন্ধুর দেখা হলে বা স্কুলে, পার্কে, বাজারে, সবজায়গায় একই প্রসঙ্গ। সদ্য দেখা সিনেমা। এক মহল দো স্বপ্নো কা। ধর্মেন্দ্রর অ্যাংরি ইমেজ। কোনো সাদাকালো হিন্দি বই এলে তো আর কথা নেই। বাপ বাপান্ত। দুদিনের বেশি শো চলত না কিছুতেই। দারা সিং অভিনীত এরকম একটি বই দেখে যারপরনাই বিরক্ত হয়েছিলাম। ঝিন্দের বন্দি চমৎকার লেগেছিল। একদিন নগেন এক টাটকা খবর নিয়ে এল। হালাহালির বাদল সিংহরায়ের ভাই সঞ্জুদার স্ত্রী-র কাজিন! বাদলদাদের পরিবারের সবাইকেই চিনি। ভাগ্নে কিশোর আমার ইয়ারমেট। কমলপুরে থাকে। নগেনের সে কী টানটান উত্তেজনা! প্রেমানারায়ণ তখন বেশ কিছু ছবির পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করছেন। যাই হোক, নগেনের আনা খবর একেবারে মিথ্যে নয়।

ক্রমশ…
Tags: উত্তর-পূর্বধারাবাহিক গদ্যপ্রবুদ্ধসুন্দর কর
Previous Post

কমলিকা মজুমদার

Next Post

অমিতাভ দেব চৌধুরী || সপ্তম পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
অমিতাভ দেব চৌধুরী || সপ্তম পর্ব

অমিতাভ দেব চৌধুরী || সপ্তম পর্ব

Comments 2

  1. চঞ্চল চক্রবর্তী says:
    1 year ago

    কৌতুহল রইল।

    Reply
  2. অমিতাভ দেব চৌধুরী says:
    1 year ago

    চমৎকার !! সমাজ ইতিহাস ছুঁয়ে গালাগালির নেপথ্যচারী দর্শন–অনবদ্য !!

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath