Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home সাক্ষাৎ পাতা

কবি গৌতম বসু’র দীর্ঘ সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: কবি তপন রায়

Daruharidra by Daruharidra
21/06/2021
in সাক্ষাৎ পাতা
1
764
VIEWS

‘সব দর্শক যখন অতীত/ তখনও অনেক ভূমিকা থেকে যাবে/ এই জল প্রকৃত শ্মশানবন্ধু, এই জল রামপ্রসাদ সেন’ বা ‘…সবই আছে, কিন্তু এমনভাবে,/ ভাতের হাঁড়ির নীচে আগুন নেই, জল, নদীতে জল নেই, আগুন; উদ্বেগ এইজন্য।’ – এই চিরন্তন পংক্তিগুলাের রচয়িতা যিনি, তাঁকে একবার চাক্ষুষ দেখার জন্য ১৯৯২ এক দুপুরে প্রবল ঘােরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম তাঁর বাড়িতে। শুধু একবার তাঁকে দেখব, তাঁর কথা শুনব প্রাণভরে, এই ছিল আমার সেদিনের স্বপ্ন। তিনি, কবি গৌতম বসু। যাঁর সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ ‘নয়নপথগামী’-র আলােচনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কবি কালীকৃষ্ণ গুহ কিছুদিন আগে ‘রিভিউপ্রিভিউ’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ সংখ্যায় লিখেছিলেন গৌতমের প্রথম কাব্যপুস্তিকা ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’ (১৩৮৮) বেরনাের পর কী ঘটেছিল তা অনেকেই জানেন। ‘এই জল প্রকৃত শ্মশানবন্ধু, এই জল রামপ্রসাদ সেন’ পংক্তিটি একটা কবিতা যুগে গায়ত্রীমন্ত্রের রূপ পেয়ে গেল। বাংলা কবিতা থেকে কৃত্তিবাসী প্রস্বরটি তার ভৌতিক বিস্তার সহ যেন চুরমার হয়ে গেল।… অনেকেরই কবিতা লেখা থমকে দাঁড়াল, শুরু হল পথ বদল। অনেকের মূল্যবােধ পাল্টে গেল— সেই সঙ্গে ভাষাবােধ, বুলি, জীবনাচরণ। অথচ আশ্চর্য এই বইটি ঘনিষ্ঠ মহলের বাইরে পাঠক সমাজের মধ্যে তেমন প্রচারিতই হল না। ১৬ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকাটি কী ইতিহাস তৈরি করল তা ভবিষ্যতে বােঝা যাবে হয়তাে। এ-বিষয়ে এই সময়ের একজন অগ্রণী কবি ও ভাবুক অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র যা বলেছেন তা মনে করা যেতে পারে । ‘… সেদিন যদি সত্য সত্যই আসে কোনােদিন, তবে সেই যুগান্তপারের হে পাঠক, হে পাঠিকা, আমরা নিশ্চিত জানি, যে, শ্রী গৌতম বসুর পদপ্রান্তে, তােমাদের সেদিন, কৃতজ্ঞচিত্তে, প্রণত হইতেই হইবে।’

আজকের এই সাক্ষাৎকার কিন্তু সেই দুপুরের কথাবার্তার ফসল নয়। বস্তুত সেদিন দেখাই হয়েছিল। কথাবার্তা বিশেষ হয়নি। তার প্রসন্ন-সান্নিধ্যই আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছিল সেদিন। মুগ্ধতার সেই রেশ আজও বহন করছি আমি। এবং বার্তালাপ, সে তাে একপ্রকার শুরু হয়েই গিয়েছিল মনে-মনে। তাঁর একেকটি বই, পড়ে-পাওয়া গদ্যগুলাে, দু’একটি সংক্ষিপ্ত, প্রাণময় পােস্টকার্ড আমাকে জাগিয়ে রেখেছে এই ক’বছর। অপেক্ষা করেছি দীর্ঘ আড্ডার, জেনে-নেবার, বুঝে-নেবার সেই মুহূর্তগুলাে কবে আসবে।

বছর দুয়েক আগে হঠাৎ খবরটা পেলাম। ‘আদম’ পত্রিকার সম্পাদক কথায়-কথায় সেদিন ফোনে বললেন ‘গৌতমদা তাে এখন আপনাদের শিলিগুড়িতেই আছেন। বদলি হয়ে এসেছেন।’ আমি উত্তেজনায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম। আমাকে দীর্ঘদিন বিষণ্ণ দেখে হয়তাে গৌতমদাকে পাঠিয়ে দিলেন। রবিবারের সন্ধ্যাগুলাের জন্য আমি এখন উন্মুখ হয়ে থাকি। কিন্তু সব রবিবারই তাে আর সত্যিসত্যি রবিবার নয়। গৌতম বসু শিলিগুড়িতে আছেন, যেন কিছুটা অজ্ঞাতবাসেই। সুতরাং অপেক্ষা আর আকাঙ্ক্ষা, শেষ পর্যন্ত থেকেই যাচ্ছে।

এই সাক্ষাৎকার, অতঃপর, ২০০৮ -এর দ্বিতীয়ার্ধের গুটিকয় রবিবারের সান্ধ্য আড্ডারই ফলশ্রুতি। কিন্তু একে কি সেই অর্থে সাক্ষাৎকার বলা যাবে? কেন না সাক্ষাৎকার নেব বলে সেজেগুজে টেপরেকর্ডার হাতে কবির ড্রইং রুমে হাজির হওয়ার মতাে জমকালাে ঘটনা এখানে নেই। বরং এখানে আছে লাহিড়ীদার চায়ের দোকান অথবা জনবহুল বিধান রােড কি সেবক রােডের ফুটপাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটা। থেমে কোথাও আবার চা খাওয়া। হয়তাে আমি কিছু একটা প্রশ্ন করলাম। হয়তাে বােকা বােকাই শােনালাে প্রশ্নটা। গৌতমদা মুচকি হেসে আন্তরিকভাবেই জবাবটা দিলেন। পরে আমার মনে হয়েছে, অনেকদিন পর যদি এই কথাগুলাে আবার ভুলে যাই। গৌতমদাকে বললাম। টেপরেকর্ডার চালিয়ে কথা বলা খুব বিচ্ছিরি ব্যাপার। তার চেয়ে, যদি কাগজে প্রশ্নগুলাে পরপর সাজিয়ে দিই তাহলে কি আপনি আমার কথা ভেবে জবাবগুলাে লিখে জানাবেন। তাছাড়া আমার কাছে তাে ভালাে টেপ-রেকর্ডার নেই। আপনি যখন আবার কলকাতা ফিরে যাবেন, আমি মাঝে মাঝে পাতাগুলাে উল্টে দেখব। পড়ব। ভাবব। আমার ভালাে লাগবে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে গৌতমদা হেসে ফেললেন। স্নেহের হাসি। বললেন, ‘ঠিক আছে।’ সেই শুরু। এই সাক্ষাৎকারকে বরং কাগজেকলমে আড্ডা-ই বলা যায়। এবং একান্ত ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য এই সন্দেশ আমি কৌটোবন্দী করে ফেললাম।

কিন্তু সন্দেশের কৌটোর কথা পিঁপড়েরা কীভাবে যে টের পেয়ে যায়। এই পিঁপড়ে তাে আবার মহাবাহু অভিজিৎ। সুতরাং সব প্রতিরােধ, আড়াল-আবডাল বন্যার জলের মুখে ভেসে গেল। শুধু বলতে পেরেছি ‘জানি না, গৌতমদাকে রাজি করানাের দায়িত্ব তােমার।’

অতএব, ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য সংরক্ষিত গােপন এই কৌটো এখন আপনাদের সঙ্গে আমরা শেয়ার করছি, পাঠক।

 

প্র. ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’ লেখার সময় আপনি কি এই বইটির প্রভাবক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন? আপনি কি বুঝতে পারছিলেন সমকালীন ও পরবর্তী প্রজন্মের কবি / পাঠকদের এই বইটির কাছে ফিরে ফিরে আসতে হবে?

– না

প্র. নিয়তি কিংবা প্রেরণায় আপনি বিশ্বাস করেন ?

– করি। এরই সঙ্গে আমি পরিশ্রমের উল্লেখ করতে চাই। আমাদের সামনেই পরিশ্রমের উপযােগিতার দৃষ্টান্ত রয়েছে, রবীন্দ্রনাথ। আমার ধারণা, রবীন্দ্রনাথের প্রতিতুলনায় দ্বিজেন্দ্রনাথ এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, উভয়েরই ক্ষমতা বেশি ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যতটা ভেবেছিলেন, যতটা অনুশীলন করেছিলেন, কান পেতে যতদূর শােনার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর প্রতিভাবান দুই দাদারা তার কণামাত্র করেননি। ফলে, আমরা কি দেখলুম? রবীন্দ্রনাথের সিদ্ধিলাভ দেখে, রাগে, দুঃখে, আমি বলব ভয়ে এবং ঈর্ষায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ রাঁচিতে পালিয়ে গেলেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ আশ্রয় নিলেন ছােট ভাইয়ের শান্তিনিকেতনে। কোথায় যেন পড়েছিলুম, শান্তিনিকেতনে দ্বিজেন্দ্রনাথের প্রাত্যহিক আহার ছিল পেটে পােলাও ভরা একটি ছােট মুরগি! শৌখিনতার বাইরে এসে দাঁড়াতে পারলেন না দ্বিজেন্দ্রনাথ এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। শিল্পসাধনায়, বিজ্ঞানচর্চায়, দর্শনচর্চায়, খেলাধুলােয় যাঁরাই সিদ্ধিলাভ করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের জীবনে প্রেরণা, নিয়তি এবং পরিশ্রমের একটা সংযােগ ঘটেছে বলে আমার মনে হয়। পথিকৃৎদের মুশকিল অন্য জায়গায় নিজেদের কাজ সম্পর্কে তাঁদের কোনাে স্পষ্ট ধারণা থাকে না, তাঁরা অন্ধকারে হাতড়ে-হাতড়ে এগিয়ে চলেন। রবীন্দ্রনাথ, যাঁকে আমরা সর্বজ্ঞ মনে করি, তিনিও লিখেছেন ‘পথ আমারে সেই দেখাবে যে আমারে চায়— এবং একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলাে’! Degas যখন তাঁর ছবিগুলাে আঁকছিলেন তখন তৈলচিত্রাঙ্কনের যে পদ্ধতিটি ওঁরা ব্যবহার করছিলেন সেটি ছিল নতুন। Degas লিখছেন: একটা অদ্ভুত সময় আমরা পার হচ্ছি; এই যে Oil painting -এর চর্চা করছি, তার বিন্দুবিসর্গ আমরা জানি না। আমার বন্ধু অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র একবার লিখেছিলেন, যিনি পথপ্রদর্শক তিনি একটা মশাল নিয়ে হাঁটছেন, তাঁর অনুগামীরা এগিয়ে চলার জন্য যেটুকু আলাের প্রয়ােজন, তা পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পথপ্রদর্শকের অবস্থা কী? তাঁর সামনে গাঢ় অন্ধকার, তিনি তাে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না! তুমি যে প্রসঙ্গ উত্থাপন করছ – প্রেরণা, নিয়তি – এদের একটা ভূমিকা আছে। অনির্বাণের সেই কথায়। বড় মাপের মানুষদের মধ্যে পরিশ্রম, প্রেরণা এবং নিয়তি মিলে মিশে একপ্রকার শক্তির জন্ম দেয়  – সজ্ঞা, intuition- এঁরা অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে হয়তাে পান না, কিন্তু একটা আভাস পান।

প্র. কবিতা ব্যাপারটা আপনার কাছে ঠিক কীরকম?

– এই প্রশ্নের ফাঁদে আমি পা দিচ্ছি না। কিছু প্রসঙ্গ আছে যার আশে পাশে ঘােরা যায় কিন্তু ছুঁতে নেই। ছুঁলেই তাদের শুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যায়।

প্র. সাহিত্য ছাড়া অন্য কোনাে শিল্পমাধ্যম যেমন চলচ্চিত্র, চিত্রকর্ম, সঙ্গীত ইত্যাদি কি আপনার কবিতা কিংবা চিন্তাভাবনা কোনােভাবে প্রভাবিত করেছে?

– সমস্তই তাে প্রভাব, সমস্তই ঋণ। সিনেমা বিদ্যাটি তত কাছের জিনিস বলে মনে হয় না। গান, আমার ব্যক্তিগত ধারণা, শিল্পের শ্রেষ্ঠতম মাধ্যম। প্রাকৃতিক ধ্বনিকে নিজের মতাে সাজিয়ে নিয়ে তাকে মানুষ যে স্তরে উন্নীত করেছে, সেটা আমার কাছে ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে। ধ্বনিকে যান্ত্রিক উপায়ে ধরে রাখার প্রযুক্তি নতুন। তবু, গান কীভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হল, এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ল – এটা চরম বিস্ময় উদ্রেক করে। ছবি ভাস্কর্য এবং স্থাপত্যের কথাও আসছে এই সঙ্গে – অন্য একদিন এ-বিষয়ে আলােচনা করা যাবে। ছােট তারকভস্কির একটি কালজয়ী চলচ্চিত্রে একটা কথা পেয়েছিলুম, যা এত স্পষ্টভাবে অন্য কোথাও পাইনি। the unselfishness of art.

প্র. ভিড়ের মধ্যে আপনি কবিতা লিখতে পারেন?

– না

প্র. মানুষ, না নিসর্গ। আপনার ব্যক্তি এবং কবিজীবন কোথায় সবচেয়ে comfort বলে আপনি মনে করেন?

– প্রকৃতি এবং মানুষ – উভয়ের সান্নিধ্য ছাড়া জীবন আরাে অপূর্ণ থেকে যেত। কিন্তু মানুষকে আলাদা করছি কেন, প্রকৃতি থেকে?

প্র. ব্যক্তিজীবন থেকে আপনার কবিজীবন ঠিক কতটা এবং কীভাবে আলাদা করবেন আপনি?

– এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। দু’রকমই দেখি। কবিতায় আমি একটা কথা বললুম, আমার ব্যক্তিজীবন অন্য পথে হাঁটছে—আমরা তাে বলি, এ মিথ্যা, সময়ের প্রহারে মিথ্যা কবিতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কথাটি তাে ঠিক। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও কি নেই? আমার কাছে ব্যতিক্রমের একটি নিদর্শন: পণ্ডিত রবিশঙ্কর। নানা প্রকার ক্ষুদ্রতা দেখা গেছে ওঁর মধ্যে, যার উল্লেখ আমি করতে চাই না। যখন উনি সেতারে হাত রাখেন, তখন কিন্তু উনি সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। Classicism-কে রবিশঙ্কর যে-স্তরে উন্নীত করেছেন তা অবিশ্বাস্য। কী করে সম্ভব হল এটা? আমি জানি না।

প্র. কিছুদিন আগে ‘আদম’ পত্রিকায় মহাকাব্যের ভাষা, তার ক্ষয় ইত্যাদি নিয়ে খুব ছােট কিন্তু সারবান এক প্রবন্ধ লিখেছিলেন আপনি। আমার তৃষ্ণা মেটেনি বরং বেড়ে গেছে। এই অবসরে আপনি এই বিষয়ে কিছু বলুন!

– ভাষার ক্ষয় ও মৃত্যু আমার প্রিয়তম বিষয়, কিন্তু প্রসঙ্গটি এতই বিরাট ও গভীর যে তাকে ধরবার ক্ষমতা আমার অনায়ত্ত। লেখাটা বাড়াবার ইচ্ছে আছে। কয়েকটি সূত্র ঠিক মতাে লিখে উঠতে পারিনি আগে, সেগুলাে সংশােধন করতে হবে।

প্র. গৌতমদা, আপনি বেশ কিছুদিন হল শিলিগুড়িতে আছেন। বলতে গেলে প্রায় আত্মগােপন করেই আছেন। তা, শিলিগুড়ি বা বৃহৎবঙ্গের এই অংশে এসে কেমন কাটছে আপনার দিনগুলাে! শিলিগুড়ি কি আপনাকে কবিতা লেখার অবকাশ বা চিন্তা-ভাবনা করবার মেজাজে রাখতে পারছে?

– উত্তরবঙ্গে এসে জীবনের একটা দিক খুলে গেল। কত নতুন মানুষ, কত দৃশ্য! এখানকার আর্থসামাজিক জটিলতা সম্পর্কে কোনাে ধারণাই ছিল না, এখন একটু-একটু বুঝতে চেষ্টা করছি। লেখার ওপর এসবের কোনাে প্রভাব পড়ছে কি না তা বলার আমি কেউ নই।

প্র. একটা পরিবর্তিত ভূগােল, তার ইতিহাস, সামাজিক কাঠামাে বা ইকোলজি একজন প্রকৃত কবিকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করে বলে আপনার মনে হয়?

– শুধুমাত্র মাথা প্রয়ােগ করে ভূগােল, ইতিহাস, ইকোলজি বুঝলে কবিতার ক্ষেত্রে কোনাে উপকার হবার কথা নয়। আমার মনে হয়েছে, একজন কবির ক্ষেত্রে, পড়াশুনাে করা আর পড়াশুনাে না-করা—দুটোই সমান বিপদের ব্যাপার। দু’দিকে দু’রকম ব্যর্থতা দেখি যে! সাধারণ স্তরে কবিতা হৃদয়ের ব্যাপার, এই স্তরে খুব বেশি পড়াশুনাে না-করে, যেটুকু পড়া হয়েছে সেটুকু ঠিকঠাক বুঝে নিতে পারলে, কবিতাও কিছু দূর গড়াবেই। উচ্চতম স্তরে কিন্তু কবিতা প্রজ্ঞা, wisdom; এখানে সমস্ত বিদ্যা এক হয়ে যায়। একজন কবি নিজেকে বাঁশির অবস্থায় যদি নিয়ে যান, সেখানে ভূগােল, ইতিহাস, ইকোলজি বায়ুর মতাে তাঁর দেহে প্রবেশ করে গাইতে থাকবে। এটা সম্ভব, রবীন্দ্রনাথ পেরেছিলেন।

প্র. পঞ্চাশের কবিতা নিয়ে খুব কথাবার্তা, হইচই সবসময় হচ্ছে। আপনার কথা যদি একটু জানা যেত?

– এতক্ষণে একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে আসা গেল। দশক বিভাগে অনেক গােলমাল আছে। মণীন্দ্র গুপ্ত কোন্ দশকের কবি? নারায়ণ মুখােপাধ্যায়? আমি অবশ্য বুঝতে পারছি তুমি কাদের কথা বলতে চাইছাে। ওঁদের লেখা পড়ে বড় হয়েছি, প্রথমেই পড়ে নিতে হয়েছিল ভারবি-র ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থমালা। গ্রহণ বর্জনের প্রাথমিক কাজ এখানেই সারা হয়ে গেছিল। যাঁদের বেছে নিলুম এবার তাঁদের বইগুলি খুঁজে খুঁজে পড়া, সে এক যুগপৎ বিস্তর ঝামেলা ও প্রভূত আনন্দের ব্যাপার। ঝামেলা বাড়ল উৎপলকুমার বসু এবং প্রণবেন্দু দাশগুপ্তের ক্ষেত্রে কারণ ভারবির শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থমালায় এঁরা ছিলেন না। তখন তাে কিছুই বুঝতুম না, এখন বুঝতে পারি যে পঞ্চাশের কবিদের লেখার সঙ্গে আমার সম্পর্কটি খুবই জটিল, আসলে। প্রথমে, কিছু খুঁজে পাইনি বলে আর না-পড়া এবং কিছু খুঁজে পেয়েছি বলে আরাে পড়া। এর পরে, যাঁদের মধ্যে কিছু খুঁজে পেয়েছি তাঁদের লেখা বেশি না-পড়া কারণ তাঁরা ছাতা, চটি নিয়ে আমার কুটিরে ঢুকে পড়ে সেখানেই অবস্থান করছেন! এখন, সেই বিপদ কেটে গেছে বলেই তাে মনে হয়, এখন মুক্তমনে তাঁদের লেখা পড়ি। অন্য সময়ের ক্ষেত্রে যা প্রযােজ্য, এ-ক্ষেত্রেও তাই, এঁদের লেখায় perennial আর temporal-এর একটা সহাবস্থান দেখা যায়। আমার স্বভাবের আড়ষ্টতার কারণে এঁদের অনেকের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যােগাযােগ ঘটেনি। আলােক সরকার, অলােকরঞ্জন দাশগুপ্ত, উৎপলকুমার বসু, যুগান্তর চক্রবর্তী – এই চারজন বাদে কবিতা সম্পর্কে কারাের সঙ্গে কথা হয়নি কখনাে, অনেকের সঙ্গে মৌখিক পরিচয় নেই, অনেকেই আমার লেখাও পড়েননি। আমার প্রিয়তম কবিরা হলেন: অলােকরঞ্জন দাশগুপ্ত, আলােক সরকার, উৎপলকুমার বসু, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, বিনয় মজুমদার, শঙ্খ ঘােষ, মােহিত চট্টোপাধ্যায়, যুগান্তর চক্রবর্তী এবং নারায়ণ মুখােপাধ্যায়। শব্দগুলি কীভাবে সাজাতে হয়, কেমন করে শুরু করতে হয়, কোথায়, কীভাবে থামতে হয়, কবিতা লেখার এই ঘরােয়া ব্যাপারগুলাে সম্পর্কে আলােকদা ও উৎপলদার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে এক সময়ে, এই দু’জনের সান্নিধ্য আমার সম্পদ।

এর পরের লেখকদের সম্পর্কেও কিছু বলার আছে, কারণ আমি যখন লিখতে শুরু করেছি এঁরা অনেকেই তখন প্রতিষ্ঠিত তরুণ কবি। বড় আকারে ভেবেছিলেন পবিত্র মুখােপাধ্যায়, কিন্তু আমার ধারণা সে-জায়গাটা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। নতুন যারা আসছেন তাঁদের মধ্যে আবার যদি কেউ বড় করে ভাবতে চান, তাহলে পবিত্র মুখােপাধ্যায়ের লেখা তাঁকে পড়তেই হবে। আমার প্রিয় লেখক: কালীকৃষ্ণ গুহ, ভাস্কর চক্রবর্তী, অশােক দত্তচৌধুরী, মানিক চক্রবর্তী, শংকর দে, সুনীথ মজুমদার।

প্র. আপনার সমকাল এবং পরবর্তী দশকগুলােতে বাংলা কবিতা কী ছিল আর কী হয়েছে সেই সম্পর্কে একটু আলােকপাত করুন?

– স্পর্শকাতর বিষয় তাে শেষই হচ্ছে না গাে। আমার সময়ের অনেক কবিই আমার অনেক আগে থেকে লিখছেন দেবদাস আচার্য, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, অমিতাভ গুপ্ত, শম্ভু রক্ষিত, সুব্রত রুদ্র, রণজিৎ দাশ, সুভাষ ঘােষাল, বিশ্বদেব মুখােপাধ্যায়, অরুণ বসু, গৌতম চৌধুরী, একরাম আলি, অনন্য রায়, জহর সেন মজুমদার। ‘দেবী’, ‘আলাে’, ‘মৃৎশকট’ এবং ‘প্রিয়ধ্বনির জন্য কান্না’ – এই চারটি বইয়ের কথা ভাবলে বিপুল গর্ব অনুভব করি, পাঠক হিসেবে নিজেকে ইতিহাসের অংশ বলে মনে হয়। তারপরের ঘটনাগুলাে তাে চোখের সামনেই ঘটে গেল। এই তাে সেদিন ছেপে বেরুলাে ‘জলপাই কাঠের এসরাজ’, ‘শীতকাল ও ক্রীসমাসের সনেটগুচ্ছ’, ‘হননমেরু’, ‘মাতা ও মৃত্তিকা’, ‘অতিজীবিত’, ‘দেবদারু কলােনী’, ‘পুরােনাে এ-জীবন আমাদের নয়’, ‘অষ্টবসুর বিভা’, ‘দক্ষিণ বাংলার জন্ম’, ‘শ্যামাপদ ও আকাশের দেবী’, ‘ছাইফুলস্তূপ’, ‘ঈশ্বরের বিভা’, ‘যখন আনন্দঋতু’। সেই সব দিন আর ফিরবে না। আমাদের সময়ে আরও কয়েকজন আছেন, যাদের মূল বই বেরিয়েছে পরে – দেবাশিস তরফদার, অমিতাভ মণ্ডল, বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী, ফল্গু বসু, অসিত সিংহ এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এতগুলাে বছর পেরিয়ে এসে নিজেদের কাজ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন কিন্তু অনুকূল নয়। যতটা সম্ভাবনা ছিল ওই সময়ের লেখকদের মধ্যে তার অনেকটাই কাজে প্রতিফলিত হয়নি। সময় যত এগােবে আমাদের অনেকের কাজ আরাে, আরাে ঝাপসা হতে থাকবে। আমার নিজের কাছে কথাগুলি চরম বেদনাদায়ক, কিন্তু এমনই তাে দেখতে পাচ্ছি। দুটো পথ আছে: এক, সারা জীবন কবিমনকে ধরে রাখা অথবা, দুই, যুগান্তর চক্রবর্তীর মতাে একটিই কালজয়ী গ্রন্থ লিখে ফেলা। দুটি কাজই অসম্ভব কঠিন। সময়ের মার, সাংঘাতিক মার।

আমাদের পরে যাঁরা তাঁদের মধ্যে প্রথমেই সুতপা সেনগুপ্ত, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল পুরকায়স্থ এবং প্রদীপ সিংহের নাম মনে পড়ছে। ‘অন্ধকারের নৌকো’ কী একখানা বই! রাহুল লিখলাে ‘বর্ষাতি নেই তাই ভিজে গেছি বাঙলা ভাষায়’! আমার বিনীত ধারণা, এখানেও সমস্যা একই, সারা জীবন কবিমন ধরে রাখতে না-পারা। এর চিহ্ন সর্বত্র। ওই সময়ের লেখকদের মধ্যে অমিতাভ দেব চৌধুরীর লেখা আমি আবিষ্কার করেছি অনেক পরে, তাঁকে একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক মনে হয় আমার। আরও পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বই ও অগ্রন্থিত কবিতা পড়ে সেই সম্ভাবনা দেখতে পাই, যা হয়তাে আমাদের সময়ের লেখকদের মধ্যে এক সময়ে দেখা হত। সচেতনভাবেই আমি কোনাে নাম উল্লেখ করছি না কারণ আমার পাঠের অভিজ্ঞতা সীমিত। যেহেতু সামগ্রিক চিত্রটি আমার সামনে নেই সেহেতু কোনাে মন্তব্য করা, আমার মনে হয়, অনৈতিক। তরুণদের প্রতি আমার কিন্তু দুটি অভিযােগ আছে : ১. তাঁরা গদ্যরচনা সযত্নে পরিহার করে চলেন এবং ২. ‘অভিমান’-এর মতাে কোনাে কাগজ তাঁরা গড়ে তুলতে পারেননি। বড় কবিদের উচ্চতা তাঁদের গদ্যরচনায় ধরা পড়ে। সেই রকম গদ্যরচনা কোথায়? চুলে পাক ধরার আগেই তাে তেমন গদ্যরচনা লেখা শুরু করতে হবে! না-হলে, এই বিরাট ঐতিহ্য কীভাবে বহন করবেন তরুণ কবিরা?

প্র. জীবনানন্দর কবিতার ভাষা কি পরবর্তী বাংলাকবিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে?

– ভাষাতত্ত্ব বলছে ভাষার মাধ্যমে যােগাযােগ স্থাপনের অনেক অন্তরায় আছে। একটি শব্দ ব্যবহার করে তুমি আমাকে যা বােঝাতে চাইছ, সেই শব্দটির অর্থ আমার কাছে অন্য, ফলে আমি অন্য কিছু বুঝছি। তােমার প্রশ্নের উত্তরে আমি যদি বলি, হ্যাঁ, জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলাকবিতার ক্ষতি করেছেন, তাহলে তুমি যা বুঝবে আমি তা বলতে চাইনি। এখানে ‘ক্ষতি’ শব্দের অর্থ তােমার কাছে লােকসান। আমার কাছে ওই শব্দটিরই অর্থ বদল, বিবর্তন, এমনকী, অগ্রগতি।

আমার বিশ্বাস, প্রত্যেকটি জীবের সঙ্গে ক্ষয় ও মৃত্যুর যেমন একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, ভাষার ক্ষেত্রেও তাই। ভাষা একটি Living organism, তারও ক্ষয় ও মৃত্যু আছে। যিনি যত বড় লেখক, বিশেষত তাঁর মধ্যে ধ্রুপদী সত্তা যদি প্রবল হয়, তিনি তত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন তাঁর ভাষাকে। জীবনানন্দের মধ্যে ধ্রুপদী সত্তা প্রবল, সেইজন্য তাঁর কারণে বাঙলাভাষা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। একটি দৃষ্টান্ত: জীবনানন্দের কবিতা পাঠের অভিজ্ঞতা আমাদের মনে কাজ করছে সব সময়ে এইজন্য ‘মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান’ এই লাইনটির অপার অর্থ আমি ধরতে পারছি না। আমি ভাবছি, কি ন্যাকা-ন্যাকা লাইন রে বাবা! রবীন্দ্রনাথের অবস্থান কী? তাঁর দ্বারাও বাঙলাভাষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু তার মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। কারণ রবীন্দ্রনাথে Classical element কম, তিনি ভাষা গড়তে-গড়তে এগিয়েছেন। তবু, ক্ষতি তাে হয়েছেই। ধরা যাক, গােপাল উড়ের সেই কবিতা

‘ঐ দেখা যায় বাড়ি আমার চারদিকে মালঞ্চ বেড়া

ভ্রমর গুঞ্জরে তাহে

আবার কোকিলেতে দিচ্ছে সাড়া।।

ময়ূর ময়ূরী সনে, আনন্দিত কুসুমবনে

আমার এই ফুলবাগানে কভু নাই বসন্ত ছাড়া।।’

এই পক্তিগুলাে তােমার কেমন লাগল আমি জানি না, আমাকে কিন্তু একশােটি শ্রেষ্ঠতম বাংলা কবিতা বাছতে বললে, এই লেখাটি রাখবই। দুঃখের কথা এই যে, রবীন্দ্রনাথের সুবিশাল কীর্তির কারণে এই বিশেষ ভাবমণ্ডলটি নষ্ট হয়ে গেছে। অতুলনীয় এই লাইনগুলি মরে গেছে, তপন। তুমি আমি আর এভাবে লিখতে পারব না। এছাড়াও ভাষার ক্ষয় ও ক্ষতির অন্যদিক আছে, সে সব দীর্ঘ আলােচনা, বিচার আর সংঘাতের ব্যাপার।

প্র. গৌতমদা, আপনার একেবারে প্রথমদিকের কবিতা আর ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’-এর কবিতা রচনার দিনগুলাে সম্পর্কে, কবিতাগুলাে সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছে হয়। যদি একটু বলেন?

– প্রথম বইয়ের লেখাগুলি যখন লেখা হচ্ছিল সেই সব দিনগুলাে ছিল অনিশ্চয়তায় ঘেরা, বলার মতাে কিছু নেই। তার আগের একটা কথা বলি। আমি তখন এদিক ওদিক থেকে টুকে খুবই নিম্নমানের লেখা প্রসব করে চলেছি মহানন্দে; আমার বন্ধু অভিরূপ সরকার আমায় একটা পরামর্শ দিল। আমি কিছু লেখা নিয়ে এক রােববার সকালে হাজির হলুম আলােক সরকারের রাসবিহারী অ্যাভেন্যুর বাড়ি। আলােকদা লেখাগুলি শুনে বললেন: এই লেখাগুলি থেকে আমি অন্ততপক্ষে একশােটা ভুল বার করতে পারি, কিন্তু আমি কিছুই করব না। ভুলগুলাে তােমাকে নিজেই খুঁজে বার করতে হবে। কবিতা কতদূর লিখতে পেরেছি জানি না, কিন্তু সেই শিক্ষাপর্বের কী মূল্য আছে আমার জীবনে, তা একমাত্র আমিই জানি।

প্র. আপনার এক একটা গ্রন্থ-প্রকাশের ব্যবধান দেখা গেছে, প্রায় বারাে বছর। এই যে এক যুগ পরপর এক একটা মহারচনা প্রকাশিত হয়ে চলেছে, এটা কি নিছক কাকতালীয় না এর পেছনে কোনাে পরিকল্পনা, কোনাে ইঙ্গিত পাঠকের জন্য অপেক্ষা করে আছে?

– বইগুলির মধ্যে সময়ের দীর্ঘ ব্যবধান আছে, এটা সত্য। বন্ধুরা এ-নিয়ে মজাও করেন। শেষতম বইটির খবর পেয়ে দেবাশিস তরফদার বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখলেন—বই বেরুল কী করে ? দশবছর তাে কাটেনি! এর নেপথ্যে কোনাে রহস্য নেই, পরিকল্পনা তাে নেই-ই। কবিতা নিয়ে ভাবতে-ভাবতেই বছর ঘুরে যায়, লেখা আর হয় না। কবিতা লেখার বৃত্তি খুব সুখদায়ক অভিজ্ঞতা নয়, আমার কাছে।

প্র. “অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’-এর ছন্দব্যবহার সম্পর্কে কিছু শুনতে ইচ্ছে হয়। এই বিষয়, ভাষা, এই রিদম, এই সুর আপনি কি স্বপ্নে পেয়েছিলেন? না কি এর পেছনে রয়েছে কোনাে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা আজকের পরিভাষায় যাকে বলা যায় Projectwork?

– প্রথম বইয়ের লেখাগুলাের ছন্দ সম্পর্কে বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত কয়েকটি কথা বলেছিলেন যা আমি সম্যক বুঝতে পারিনি। যদি বুঝতে পারতুম, কাজে দিত। সে আর হল না। আমার ছন্দজ্ঞান দুর্বল, কানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে লিখে যাই, লেখাগুলােয় কী ছন্দ আছে আমি জানি না। কোনাে নিয়মের মধ্যে পড়ে না বােধহয় পংক্তিগুলাে, তােমায় গড় গড় করে পড়ে যেতে হবে, take it or leave it। কিন্তু ছন্দ বিষয়ে আমার কিছু উদ্ভট ভাবনা আছে। ১. অমূল্যধন is a genius ২. এমন কোনাে বড় কবির কথা আমার মনে পড়ে না, যিনি ছন্দকে ঢেলে সাজাননি; ভবিষ্যতের ছন্দশাস্ত্রে ছাপ রাখা একজন বড় কবি হওয়ার necessary condition। ৩. যাঁরা বেঁধে দেওয়া গঠনের বাইরে এসে দাঁড়াতে পারেননি, তাঁরা সব ডাহা ফেল। শৃঙ্খলা থেকে মুক্তির বাতাস টেনে বের করে আনতে হবে, সেই বাতাস বইবে পংক্তিগুলির ভিতরে, উৎকর্ষ এইখানে। পয়ার তাে আগেও ছিল, বিনয় মজুমদার তাকে কোথায় নিয়ে এলেন, ভাবাে। আমার বিনীত মত, সাম্প্রতিক কালে কালীকৃষ্ণ গুহ কাব্যছন্দের একটা নতুন দিক দেখিয়েছেন। ৪. বাংলাভাষায় যে ধ্বনি মাধুর্য রয়েছে তার পুরােটা আমাদের ছন্দশাস্ত্রে এখনাে ধরা পড়েনি বলে আমার মনে হয় আমি এই ভাবে বুঝি: ছন্দ লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হচ্ছে সুর। ধ্বনি ও নীরবতার একটা রসায়নের ভিতর দিয়ে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌছতে চাইছি। যেখানে আমরা ধ্বনি ও নীরবতার ভারসাম্য ঠিকঠাক আনতে পারছি না সেখানে রিকশার হুডের মতাে ছন্দ উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা ভাবছি, আরে, লােকটা তাে দারুণ ছন্দ জানে! আসলে, ঠিক এর উল্টোটাই সত্যি। রিকশার হুডখানা নামিয়ে রাখতে হবে ভাই, সুরের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমার খুব আক্ষেপ হয়, চিঠিপত্রের বাইরে মধুসূদনের কোনাে গদ্য রচনা পাওয়া যায় না, যদি পাওয়া যেত ধ্বনিপ্রয়ােগ ও যতিপাতের ভারসাম্য এবং সুর সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্টতর হত। রবীন্দ্রনাথ ও দিলীপ রায়ের মধ্যে ছন্দ সম্পর্কে যে আলােচনা হয়েছিল এক সময়ে, সেখানেও এই সূত্রগুলি আছে। নিজের লেখার ক্ষেত্রে, তিনজনের ছন্দজ্ঞান থেকে বিস্তর চুরি করার কথা স্বীকার না করলে পাপ হবে—Gerard Manley Hopkins, R. S. Thomas এবং বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

প্র. ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’ পড়তে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে কোনাে এক উপন্যাসই বুঝি পাঠ করছি। আপনি কি কোনাে মহা উপন্যাসই লিখতে চেয়েছিলেন আসলে ?

– কাব্য ও গদ্যের মধ্যে প্রভেদটা যে ঠিক কোথায়, তা আমি এখনাে নির্ধারণ করতে পারিনি। Narrative -এর সঙ্গে এর কোনাে সম্পর্ক নেই। প্রিয় ঔপন্যাসিকদের যে-কোনাে লেখার যে কোনাে পাতা খুলে পড়তে-পড়তে আমি এই রহস্য ভেদ করতে চেষ্টা করেছি, পারিনি। প্রাথমিকভাবে কয়েকটা কথা মনে হয়। কবিতা বলছে ‘Who if I cried, would hear me among the angelic /orders?’ গদ্য কিন্তু তেমন করে বলছে না; গদ্য অনেক, অনেক শান্ত, ধৈর্যশীল, বলছে: It was the best of times, it was the worst of times.’। কাব্য বিষন্ন, গদ্য নিস্পৃহ।

প্র. গৌতমদা, আপনার সাম্প্রতিক বই ‘নয়নপথগামী’র প্রচ্ছদ প্রথম দর্শনেই চমকে দিচ্ছে পাঠককে। আপনার অপরাপর বইগুলাের পাশে এই বই রাখলে প্রথমে বিশ্বাস হয় না এই বইয়ের প্রণেতা কবি শ্রী গৌতম বসু। আপনি কি সচেতনভাবেই পাঠককে এই ধাক্কাটা দিতে চেয়েছেন? এই প্রচ্ছদভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন?

– নয়নপথগামীর প্রচ্ছদ অনেকেরই ভালাে লাগেনি। অরুণাভ সরকার, নির্মল হালদার ও অঞ্জনা কাঞ্জিলাল বিস্তর বকাবকি করেছেন আমায়। ছবিটি ছাপার ব্যাপারে কারিগরি বাধা অতিক্রমের জন্য অরুণাভই কিন্তু উঠে পড়ে লেগেছিল, ভালােবাসা এমনই বস্তু! এই চটি বইয়ের একটাও লেখা যদি কেউ না পড়েন, আমার দুঃখ হবে না, আমি চাই মানুষ ছবিটি দেখুক, প্রত্যক্ষ করুক হতভাগ্য বিংশ শতাব্দীকে। আখমাতােভা কুড়ি বছর ধরে একটি দীর্ঘ কবিতা রচনা করেছিলেন। এমন দৃষ্টান্ত খুব বেশি আছে কী? মান্দেলস্থাম, পাস্তারনাক, আখমাতোভা – বই প্রকাশ তাে দূরের কথা, এঁরা কবিতা প্রকাশ করতে পারতেন না, নগন্য লেখকদের দাপিয়ে বেড়ানাে দেখেছেন, সহ্য করেছেন কত লাঞ্ছনা, তবু লিখে গেছেন। এঁদের কি কোনাে তুলনা হয়?

প্র. আপনার কবিতাসমগ্র’র ভূমিকায় আপনি কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে লিখেছেন। আপনার সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সময় আমি বহুবার আপনাকে ওই নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করতে শুনেছি। সেই সম্পর্কে আপনি এখন কিছু বলুন আমাদের ?

– বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমায় প্রথম নিয়ে যায় অভিরূপ। মাত্র কয়েকবারই ওঁর সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছে। একবার শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির একতলার একটা ছােট্ট ঘরে কবিতাপাঠের আয়ােজন করা হয়েছিল। বীরেনবাবু সেখানে কবিতা পড়েছিলেন। পুরােনাে কিছু লেখা পড়বাে?’ – এই বলে ‘রাত্রি শিবরাত্রি’-র প্রায় পুরােটাই পড়ে ফেললেন। শুনতে শুনতে ভাবলুম, কান্নার, প্রার্থনার, ক্রোধের ঢেউ একের পর এক এসে আমায় ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। একটাই তাে মানুষ, তারই মধ্যে এত কিছু? আমি কোনােভাবেই তাঁর কাছের মানুষ ছিলুম না, কিন্তু আমার প্রথম বই বেরুবার পর যে চিঠিটি আমি সর্বপ্রথম পাই, সেটা তাঁর।

প্র. উত্তর আধুনিকতা ও পােস্টমডার্নিটি, পােস্টকলােনিয়াল এবং সাবঅলটার্ন লিটারেচার ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে একটু শেয়ার করবেন?

– সাহিত্যে সংগঠন দু’রকম হয়। প্রথমে আছে রাষ্ট্র, নােবেল কমিটি, এই অকাদেমি ওই অকাদেমি, প্রকাশন সংস্থা, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি। দ্বিতীয় প্রকার সংগঠন হচ্ছে ভাব সংগঠন অর্থাৎ বিভিন্ন কাব্য আন্দোলনগুলি। আমি এঁদের কারুর প্রভুত্ব মানি না। ব্যক্তি হিসেবে আমার যে কোনাে রকম ক্ষমতা নেই এটা আমি ভালাে মতাে জানি কিন্তু এটাই আমার অবস্থান। কবিতা আমার কাছে মুক্তির জায়গা, এখানে কোনাে আপস নেই।

প্র. গৌতমদা, একটু আগে একটা প্রশ্নে আমি ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’ প্রসঙ্গে খুব সচেতন ভাবেই Project শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম। হয়তাে ঠিকমতাে বােঝাতে পারিনি। আসলে Project শব্দটাকে আমি গবেষণা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চাইছিলাম। ভাবতে চাচ্ছিলাম এর পেছনে আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক ইতিহাসের এক অতিসূক্ষ্ম এবং দীর্ঘ গবেষণা রয়ে গেছে। যেন কবিত্বশক্তি আর কবিমনের মায়া এসে গবেষকের মন্ত্র গােপন সংকেতে, রূপান্তরিত করেছে। এই সুযােগে আমি কবি গৌতম বসুর কাছে গবেষক গৌতম বসুর ভূমিকা বা তার সম্ভাবনার কথা শুনতে চাচ্ছি

– গবেষণা যেমন একটি সৃজনকর্ম হয়ে উঠতে পারে, একটি সৃজনকর্মেও গবেষণার উপাদান থাকতে পারে, থাকেও। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি প্রধান উপন্যাসের শুরু হচ্ছে এই ভাবে: একজন কামার সিদ্ধান্ত নিল যে সে তার উৎপাদন বন্ধ করে দেবে, কারণ সে তার কাজের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। অর্থবিজ্ঞানের যে কোনাে ছাত্র জানেন এটি Terms of Trade-র সমস্যা এবং এ বিষয়টি ঘিরে প্রচুর কাজ হয়েছে। তারাশঙ্কর সেগুলাে পড়েছিলেন বলে তাে মনে হয় না। কী করে ধরলেন তবে ব্যাপারটা? এর উত্তর সহজ: দেখা এবং শােনা, অন্তর্দৃষ্টি। আমরা দেখতে পাই না তাই লিখতেও পারি না। যিনি দেখতে পাচ্ছেন, তিনি লিখতেও পারবেন। আমি মনে করি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃতাত্ত্বিক। এই ধারাটি মরে যায়নি এখনাে, দেবেশ রায়ের লেখায় বেঁচে আছে, অভিজিৎ সেনের গােড়ার দিকের লেখায় আছে, সৈকতের গল্পে আছে।

প্র. Project ব্যাপারটার একটা অন্যমাত্রাও আমি এখানে যুক্ত করতে চাচ্ছি, গৌতমদা। যেমন ধরুন, স্বতঃপ্রণােদিত Projectwork বা গবেষণাকর্ম ছাড়াও, কেউ হয়তাে কোনাে Agency বা House-এর কাছ থেকে বরাত পেলেন। ধরা যাক, উপন্যাসের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে—হচ্ছে। ইউরােপ, আমেরিকায় তাে উক্ত বরাতপ্রাপ্ত লেখক লাইব্রেরি, ইন্টারনেট, field work বা workshop ইত্যাদির সঙ্গে ইমাজিনেশন-কে কাজে লাগিয়ে তাঁর Creative text তৈরি করলেন। এখন এই বিশেষ subject বা বিশেষ অঞ্চল বা বিশেষ কালখণ্ড সম্পর্কে সেই লেখকের নিজস্ব প্যাসন বা অভিজ্ঞতাটা এখানে খুব জরুরি বলে মনে না-ও করা হতে পারে। তাে, গৌতমদা, এই জাতীয় Creative text বা গবেষণাধর্মী উপন্যাস (কাব্য) সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে ইচ্ছে করছে?

– সামন্ততান্ত্রিক যুগে সাধারণ মানুষ, না জেনেই, শিল্পবস্তুর জন্য অর্থবিনিয়ােগ করতেন খাজনা জমা হত রাজকোষে, সেখান থেকে রাজা মন্দির মসজিদের জন্য টাকা যােগাতেন। ইউরােপে রাজার সঙ্গে-সঙ্গে ধর্ম প্রতিষ্ঠানও এই কাজ করতেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম শিল্পকর্মের প্রায় সমস্তটাই এই পদ্ধতিতে গড়ে উঠেছে — তুমি Projectwork বলছ, আমি একটি পুরোনো কথা ব্যবহার করছি— ‘commissioning of works of art’। তুমি ভারতবর্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছ স্থলপথে তােমার ক্যারাভান বামিয়ান বুদ্ধের নীচ দিয়ে এগিয়ে চলেছে, তােমার কী অবস্থা হবে, ভাবাে। অনেক রাজা শিল্পবােদ্ধা ছিলেন, অনেকেই ছিলেন না, যাঁরা ছিলেন না তাঁরাও কার হাতে কাজ তুলে দিতে হবে অন্তত এটুকু বুঝতেন। সভ্যতার ইতিহাসে পেট্রনদের গুরুত্ব অপরিসীম। খাজনার টাকা তাঞ্জাভুরের মন্দির নির্মাণে ব্যয় না হয়ে, যদি আফিম কেনায় খরচ হত, তাহলে ভালাে হত কি? অনেক শিল্পীর ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে পৃষ্ঠপােষকরা ট্যাঁ-ফোঁ করতে সাহস পেতেন না। যেমন মিশেল অঞ্জেলাে। গ্রুনেওয়াল্ডের মতাে অনেক শিল্পী পৃষ্ঠপােষকের আনুকূল্য পাননি। যাঁরা এই system-এর বাইরে ছিলেন সেই লােকশিল্পীদের অবস্থা ছিল আরও খারাপ, সমাজ দু’মুঠো চাল দিত তাঁদের দয়া করে, তাঁরা যে মানব সভ্যতার চৈতন্যের ধারক এবং বাহক এ কথাটা কেউ বুঝতে পারেনি।

ধনতন্ত্রের উত্থানের সঙ্গে এই সুপ্রাচীন ব্যবস্থাটি এক আকস্মিক ভাঙনের মুখে এসে পড়ল, কিন্তু শিল্প মৃত্যুহীন। রিলে রেসের দণ্ডটি তুলে নিলেন Dickens-র মতাে সাংবাদিক। সংবাদপত্রের ভূমিকা এখন অনেক বদলে গেছে, কোথাও কোথাও তারাই রাজাদের শূন্য স্থানে অধিষ্ঠান করছে। এর ফল যে সম্পূর্ণভাবে অশুভ, আমি তা বলব না। কিন্তু sponsorship থেকে কালজয়ী সাহিত্য উঠে আসবে, এমন মনে হয় না। কালজয়ী সাহিত্যের জন্য আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে সেই মাঝির দিকে, যিনি একদা লিখেছিলেন ‘এ ভবসাগর রে, কেমনে দিবাে পাড়ি’। তাঁর ভাবসন্তানরাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এমন লেখকের Sponsor দরকার পড়ে না, পদ্মা নদী তাঁর Sponsor।

প্র. আচ্ছা, গৌতমদা, এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাব। অমিতাভ গুপ্তর ‘সরমা ও পরমা’ প্রবন্ধের কথা মনে পড়ছে এখন। মনে পড়ছে ‘জনপদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘আমপাতার মুকুট’-এর কবি অভিরূপ সরকারকে লেখা আপনার অসামান্য চিঠিগুলাের কথা। এটা সেই সময়ের কথা যখন ইতিমধ্যে এই বইগুলাে আমাদের হাতে এসে গেছে – ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’, ‘অতিশয় তৃণাঙ্কুর পথে’, ‘যখন আনন্দ ঋতু’, ‘যাত্ৰামন্ত্র’, ‘ঘন কৃষ্ণআলাে’…। অমিতাভ গুপ্ত, অঞ্জন সেন প্রমুখের কলমে ‘উত্তর আধুনিক চেতনা’-র কথা পড়ছি। সমস্ত মিলিয়ে এক নতুন আলাের জগৎ যেন। তাে, সেই সময়কার কথা, উত্তর আধুনিক চেতনা বা আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মতামত বা ধারণা আপনার নিজের মুখে শুনতে চাই।

– তুমি একরাম আলি ও অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্রের বইয়ের উল্লেখ করছ, এঁদের সঙ্গে কিন্তু উত্তর আধুনিকতা কাব্য আন্দোলনের কোনাে সম্পর্ক নেই। এমন-কি, এভাবেও বলা যায়, অমিতাভ গুপ্তের ‘আলাে’-র সঙ্গে উত্তর আধুনিকতার কোনাে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। ‘আলাে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে, তখন অমিতাভ গুপ্তের বয়স মাত্র বাইশ বছর। উত্তর আধুনিকতার কথা উঠছে এর পনেরাে বছর বাদে। অমিতাভদা যা বলছেন তাঁর দুটি দিক আছে, একটি আবেগের, অন্যটি বিশ্লেষণের। বিশ্লেষণের দিকটা আমায় তত স্পর্শ করেনি, কারণ আমার পড়াশােনা বেশ নড়বড়ে আবেগের দিকটা খুব টানে; অমিতাভদা বলতেন একটাই মহাকবিতা লেখা হচ্ছে, সেটা লিখছে অনেকে। অমিতাভদা একশাে শতাংশ কবি, ওঁর কথার অর্থ আবেগ ও কল্পনা দিয়েই ধরতে হবে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একাধিক অসঙ্গতি যদি দেখিয়ে দেন কোনাে পণ্ডিত, আমি অবাক হব না। একবার ওঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে বাড়ি গেছি, শুভদ্রা বউদি দরজা খুলে দিলেন; ভিতরে গিয়ে দেখি খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে, সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে, উনি ভাবছেন। আমার ধারণা তত্ত্ব নয়, কবিতা এবং প্রাত্যহিক আচরণের ভিতর দিয়ে অমিতাভদার কথা বুঝতে হবে। পুরুলিয়ায় কবিদের মধ্যে লাঠালাঠির সম্পর্ক বিষয়ে উনি অবহিত ছিলেন কিন্তু তার বীভৎসতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হয়তো ছিল না। একবার পুরুলিয়ায় গিয়ে এটা লক্ষ করে বাকি সময়টা কাটিয়ে দিলেন দুই দলকে মিলিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়। ঐক্যের একটা বােধ অমিতাভদার মধ্যে কাজ করে—তত্ত্ব দিয়ে এই জায়গায় পৌঁছােনাে যাবে না, এটা প্রেমের এলাকা।

প্র. এবার আমরা আবার ‘অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’ এ ফিরে যাব। বইটির ১৯ নং কবিতাটি এভাবে শুরু হয়েছে ‘রিকশার উদরে যে তিন মদ্যপ রাত্রি ছিঁড়ে খেত/ তারা ভালাে হয়ে গেছে, ..।’ যেন একটা আখ্যান শুরু হচ্ছে। এই ‘তিন মদ্যপ’ কারা, গৌতমদা, যারা এখন ভালাে হয়ে গেছে?

– আরাে অনেকের মতাে, একসময় টিউশন করে আমায় হাতখরচা চালাতে হত –  বেশ রাত হত বাড়ি ফিরতে। মাথায় কবিতার ভূত, কলকাতায় কোনাে বন্ধু নেই, সেই সময়েরই একটি দৃশ্য এটি। ধরাে, তিনটে বেহেড মাতাল একখানা হাতেটানা রিকশায় উঠেছে, তৃতীয়জন অন্য দু’জনের কোলে বসে টলছে, প্রথমজন বেহুশ, তার মাথাটা রিকশার পেছন থেকে ঝুলছে, অন্য দু’জন কী করতে চাইছে, কোথায় যেতে চাইছে, তা তারাই জানে। আর আছে পুরনাে টায়ার কেটে তৈরি করা চটি পরা এক রিকশাচালক। কত যে ক্লান্ত, দুঃখী মানুষ থাকেন কলকাতায়।

প্র. মনে করুন ‘…এই জল প্রকৃত শ্মশানবন্ধু, এই জল রামপ্রসাদ সেন’ এবং ‘…আমার সঙ্গে বলাে অন্নপূর্ণা ও শুভকাল’— এই প্রবাদপ্রতিম ধ্রুবপদগুলাের স্রষ্টা আপনি নন। বাংলাভাষা ও ঐতিহ্যের চিরসম্পদ। এখন এতদিন পর এই পদগুলাে সম্পর্কে আপনার ব্যক্তি-প্রতিক্রিয়া কী? কীভাবে নেবেন এঁদের, পাঠক হিসেবে ?

– ভাবনার স্তরে থাকার সময় লেখার সঙ্গে লেখকের রক্তের সম্পর্ক থাকে। লেখাটি শেষ হয়ে গেলেই, দূরত্ব। তােমার উক্তির মধ্যে যে ভালােবাসা দেখছি তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেই বলতে চাই, বিগত ত্রিশ চল্লিশ বছরে যা লেখা হয়েছে তার মূল্যায়নের সময় এখনাে আসেনি। কলকাতা মহানগরীর রাস্তায় ঘুরেঘুরে এই পংক্তিগুলি আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলুম একসময়ে, এই কুড়িয়ে পাওয়া অন্য কারুর হাতেও হতে পারত। হলে, আমার জীবনটা অনেক সােজা সাপটা হত, আমার বাবা মাকে আমার কল্যাণের জন্য এতটা দুশ্চিন্তা ভােগ করতে হত না।

প্র. একেবারে শুরুতে আমি প্রেরণা / নিয়তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছিলাম। প্রেরণা এবং সজ্ঞাকে কীভাবে অনুভব করেন গৌতমদা ? এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী?

– এই অঞ্চলে আমার কোনাে অভিজ্ঞতা নেই। মহামানবদের জীবন থেকে কিছু কিছু অনুমান গড়ে তােলা যায়, এই পর্যন্ত। একটি তরুণ, নির্ভার মন না-পেলে প্রেরণা তার কাজ করতে পারে না বলে আমার ধারণা। তরুণ আইনস্টাইন ট্রামে চেপে patent আপিসে যেতেন রােজ এবং ভাবতেন এই ট্রামের গতি যদি বাড়ে এবং বাড়তেই থাকে, তাহলে কী কী হতে পারে। আমার কাছে প্রেরণার এটি একটি দৃষ্টান্ত। চিন্তার স্তরে এই প্রকার Breakthrough-র জন্য বােধহয় বাইরের সহায়তা প্রয়ােজন। আমার বিশ্বাস, ভানুসিংহের পদাবলীতে রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণভাবে প্রেরণার উপর ভর করে লিখে গেছেন। এর পর শুরু হয়েছে অবিরাম প্রচেষ্টা, পরিশ্রম। পদার্থবিদ্যায় আমার কোনাে জ্ঞানই নেই তবু মনে হয়, এক সময়ে এসে আইনস্টাইন দেখতেন প্রাকৃতিক নিয়মগুলি সমীকরণের আকারে চোখের সামনে ভাসছে, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থাকেই আমি সজ্ঞা বলতে চাইছি।

প্র. আপনি কীভাবে এবং কখন বুঝতে পারেন যে একটা লেখা হয়ে উঠল ?

—তুমি তাে লেখ, তুমি তাে নিজেই জানাে যে একটি লেখাই নির্ধারণ করে দেয় কীভাবে এবং কোথায় থামতে হবে। আসলে লেখাটা থামছে না কিন্তু, ওটা সাময়িক বিরতি। লেখকের কানে লেখাটি এতক্ষণ বিড় বিড় করছিল, এখনও করছে কিন্তু আরও নিচু স্বরে, কবি আর শুনতে পাচ্ছেন না, তাই তাঁর লেখাও সমাপ্ত।

‘আমারে তুমি অশেষ করেছো’—রবীন্দ্রনাথ কি এমনি-এমনি বানিয়ে লিখলেন কথাগুলাে?

কত যে গিরি কত যে নদীতীরে

বেড়ালে বহি ছােট এ বাঁশিটিরে

কত যে তান বাজালে ফিরে ফিরে

কাহারে তাহা কব।।

প্র. লেখা চলাকালীন আপনার শারীরিক-মানসিক অবস্থা কীরকম থাকে? অফিস-বাড়ির কাজকর্ম, বাজার-হাট-দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজকর্ম করতে কি তখন ভালাে লাগে? সব ঠিকঠাক চলে? এই মুহূর্তে কী লিখছেন, কী ভাবছেন আপনি?

– লেখা চলাকালীন যে-কোনাে লেখকই খুব গােলমালে পড়ে যায়, আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমি লক্ষ করেছি, রিকশা, ঠেলাগাড়িও বুঝতে পারে এই লােকটার মধ্যে লেখা তৈরি হচ্ছে। আগে, দিনের বেলায় লাইনগুলাে মােটামুটি গুছিয়ে নিয়ে রাত্রিবেলায় লিখতুম। এখন নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে, নিজেকে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করছি। এইসঙ্গে কিছু কিছু গদ্যরচনা বিষয়েও ভাবছি।

প্র. আপনার প্রিয় গ্রন্থ ? যা আপনি সবসময় মাথার কাছে রাখতে চান?

– এই বয়সে এসে মনে হয় একজন মানুষের খুব বেশি সংখ্যক বইয়ের প্রয়ােজন নেই। গুনে দেখিনি এখনাে, তবে মনে হয় সংখ্যাটি পঞ্চাশ-ষাটের বেশি হবে না। কিন্তু, পঞ্চাশ-ষাটের সংখ্যায় পৌঁছানাের জন্য একজন মানুষকে বেশ কয়েক হাজার বই পেরিয়ে আসতে হয়। একজন পাঠকের এই যাত্রা খুবই আশ্চর্যময় এক কাহিনি। পঞ্চাশ-ষাটটি বই তাঁর মনের মধ্যে অবিরাম আনা-গােনা করে, কখনাে কখনাে কোনাে একটি বই খুলে চোখ বুলিয়ে নেয় সে, যেন তার পরের দিন সকালে তার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পঞ্চাশ-ষাটটি পবিত্র ভূতের সঙ্গে বসবাস করে সে। যদি তুমি একটিই বই বাছতে বল, আমি মহাভারতের উল্লেখ করব। যদি একাধিক বই বাছতে বল, আমি প্রশ্নটি থেকে নিষ্কৃতি চাইব, কারণ এই ধরনের নির্বাচন মনের ওপর অসম্ভব চাপ সৃষ্টি করে। মূল মহাভারত আমি চোখেও দেখিনি। মহাভারত পড়া শুরু হয়েছিল শিশুসাহিত্য সংসদের সচিত্র মহাভারত থেকে, তারপর যােগীন সরকার, তারপর রাজশেখর বসু এবং কালীপ্রসন্ন সিংহ। বইটিতে একটা বিভাজন রেখা আছে বলে আমার মনে হয়: উদ্যোগপর্ব। উদ্যোগপর্বের আগে পর্যন্ত মহাভারত খুবই উচ্চমানের কাহিনি, পারিবারিক কলহের বিবরণ। উদ্যোগপর্ব থেকে কিন্তু একটা উত্তরণ লক্ষ করা যায়, এটার জন্য ওটা, ওটার জন্য সেটা— এইসব প্রশ্ন গৌণ হয়ে যায়। আমরা যত এগােতে থাকি বুঝতে পারি, মহাভারতের, প্রধান বার্তা হচ্ছে প্রক্ষালন। যে মলিনতা নিত্য জমা হয়ে চলেছে আমাদের জীবনে তার প্রক্ষালনের ব্যবস্থা আছে। এমন একটা বই আর লেখা হবে না, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

আরও একবার একটা পুরনাে গল্প শােন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, পাণ্ডবরা রাজ্য ফিরে পেয়েছেন কিন্তু এত নরহত্যার জন্য তীব্র অপরাধবােধে তাঁরা আক্রান্ত। শেষে ঠিক হল পাপমােচনের জন্য তাঁরা মহাদেবের কাছে যাবেন, কারণ একমাত্র মহাদেবই পারেন এত পাপ গ্রহণ করতে। মহাদেব তখন কাশীতে অধিষ্ঠান করছেন, তিনি খবর পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়লেন কারণ এত পাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা তাঁরও নেই। পাণ্ডবদের এড়িয়ে চলার জন্য তিনি পালিয়ে এলেন পাহাড়ে, গুপ্তকাশীতে। পাণ্ডবেরা কাশী পৌঁছে দেখলেন মহাদেব অন্তর্ধান করেছেন, খবর পেয়ে তাঁরাও পথ অনুসরণ করে এলেন গুপ্তকাশী। মহাদেব ততক্ষণে গুপ্তকাশী থেকে পালিয়ে চলে এসেছেন আরও দুর্গম এলাকায়, যেখানে আজ কেদারনাথের মন্দির দাঁড়িয়ে আছে। পাণ্ডবেরা হাল ছাড়লেন না, কেদারনাথে এসে মহাদেবের পায়ে পড়লেন। মহাদেব এবার আর তাঁদের ফিরিয়ে দিতে পারলেন না। কেদারনাথের মন্দিরের দেওয়ালে পঞ্চপাণ্ডব আজও বিরাজ করছেন। আমার কাছে এটিই মহাভারতের মূল বার্তা, ক্ষমাপ্রার্থনা, repentance |

প্র. প্রিয় কবি? প্রিয় ব্যক্তিত্ব?

– একজন বাছতে গেলে উত্তর খুব সহজ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’। এই প্রসঙ্গে অন্য কোনাে সময়ে বিস্তারিত আলােচনা করা যাবে। প্রিয় ব্যক্তিত্ব বলতে কী বােঝাতে চাইছ বুঝলুম না, সেই জন্য প্রশ্নটি নিজের মতাে করে নিচ্ছি। আমি মনে করি মানবচেতনা হচ্ছে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠতম কীর্তি, এই চেতনার ভিতর দিয়ে প্রকৃতি আবার নিজেকে দেখতে পায়, পরিপূর্ণতা পায়। মনুষ্যচেতনার কয়েকটি শিখর আছে যেগুলি recorded history-র মধ্যে পড়ে না যেমন ভগবান বুদ্ধ, যিশুখ্রিস্ট, হজরত মহম্মদ, আদি শঙ্করাচার্য, বেদব্যাস, বাল্মীকি। যাঁরা recorded history-র মধ্যে পড়েন, তাঁদের মধ্যে যদি কোনাে একজনকে শ্রেষ্ঠ মানব বলে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি দা ভিঞ্চির উল্লেখ করব। মনুষ্যচেতনার সমস্ত গুণ একটিই শরীরের ভিতরে প্রকাশ পাচ্ছে, এমনটি আর দেখা যায় না। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি একেবারে একা একজন মানুষ, তাঁর ধারে কাছে আর কেউ নেই।

প্র. প্রিয় উপন্যাস?

—কোনাে একটি বইয়ের কথা উল্লেখ করতে পারছি না, আবার একাধিক বইয়ের নাম উল্লেখ করতে চাইছি না কারণ তাতেও, অনেক বই বাদ পড়ে যাবে। এ প্রশ্নটা থাক।

প্র. কমলকুমার এবং বিভূতিভূষণ— এই দুজনের মধ্যে বাছতে বললে আপনি কাকে বাছবেন?

– বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্র. বিভূতিভূষণ এবং দস্তইয়েভস্কি। এই দুজনের মধ্যে কে?

– এ-প্রশ্নের ও কোনাে জবাব নেই আমার কাছে।

প্র. তরুণ কবিদের কাছে, ভাবীকালের কবিদের কাছে আপনার বার্তা আমরা পৌঁছে দিতে চাই। কিছু বলুন?

– তরুণ কবিদের প্রতি আমার বার্তা? আমি তাে তাঁদের বার্তার অপেক্ষায় থাকি।

প্র. লেখার সময় এবং লেখার পরেও কোনাে নির্দিষ্ট গােপন পাঠক / বা পাঠকগােষ্ঠীর কথা আপনার কি মাথায় থাকে? আপনি কি ওয়াকিবহাল – কে বা কারা পড়বেন এই লেখা বা বই?

– লেখার প্রক্রিয়াটি বিশ্লেষণ করার বিদ্যে এখনাে অর্জন করেনি মানুষ। লেখার সময়ে আর অন্য কিছু মাথায় রাখা বােধহয় সম্ভব নয়। লেখক তখন সাধারণ কাজে ভুল করে, ডানদিকে যেতে গিয়ে বাঁদিকে চলে যায়। লেখাটি একসময় শেষ হয়, তখন লেখকের মধ্যে এক গৃহিণীও আছে, বাকি কাজগুলাে সেই করে। ‘অধর ছুঁয়ে বাঁশিখানি চুরি করে হাসিখানি’– এই লাইনটি রবীন্দ্রনাথ যখন লিখেছিলেন তখন কোনাে পাঠকের চেহারা তাঁর সামনে ছিল না বলে তাে মনে হয়।

প্র. ভবিষ্যতে কি মানুষ কবিতা লিখবে-পড়বে? কবিতার কি আর প্রয়ােজন হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে?

– এই প্রশ্নটি নিয়ে কোনাে সংকটের ছবি আমি দেখি না। কবিতা লেখার চর্চা যদি উঠেও যায়, কোনাে ভয় নেই। জীবন চলবে, শিল্প বেঁচে থাকবে, the unselfishness of art বেঁচে থাকবে। ‘তােমার মহাবিশ্ব মাঝে হারায় নাকো কিছু’।

 

কবি গৌতম বসু প্রয়াত হন ১৮ জুন ২০২১। তার বহু আগে ২০১০ সালে গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত 'মহাবাহু' লিটল ম‍্যাগাজিনের অষ্টম সংখ‍্যায় (বর্ষা ১৪১৭) একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় গৌতম বসুকে নিয়ে। 'মরণলেখ-১' দীর্ঘ কবিতাটি এবং গৌতম বসুর সাক্ষাৎকারটি মহাবাহু-র ওই সংখ‍্যাটি থেকে পুনর্মুদ্রিত হল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন কবি 'তপন রায়'। মহাবাহু পত্রিকার সম্পাদকদ্বয় সঞ্জয় চক্রবর্তী ও অভিজিৎ লাহিড়ী-র সৌজন‍্যে লেখা  দু'টি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।

 

‘মহাবাহু’-র এই সংখ্যাটির পিডিএফে পড়তে পারবেন ‘কাঠের নৌকা’ তে –

https://kathernouko.blogspot.com/2010/12/blog-post.html?m=1

 

Tags: গৌতম বসুতপন রায়দীর্ঘ সাক্ষাৎকার
Previous Post

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || অষ্টাদশ পর্ব

Next Post

কবি গৌতম বসু’র দীর্ঘ কবিতা

Daruharidra

Daruharidra

Next Post

কবি গৌতম বসু'র দীর্ঘ কবিতা

Comments 1

  1. সৌম্য দাশগুপ্ত says:
    1 year ago

    অসামান্য এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই!

    সৌম্য দাশগুপ্ত

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath