Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home গদ্য

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || একবিংশতি পর্ব

নীল উপত্যকার রাখাল || একবিংশ পর্ব

Daruharidra by Daruharidra
01/07/2021
in গদ্য
2
229
VIEWS

 

 

হালাহালির লোকজনের রসবোধ অসামান্য। গল্প হলেও সত্যি এরকম অনেক মজার ঘটনাই লোকমুখে আজও চালু আছে। কালীপদ চৌধুরী যেমন হালাহালি এলাকার গণসোনাদ্দা তেমনি জুন্টুদার বাবা হরিপদ চৌধুরীকে সবাই ডাকত মনাভাই। দুর্গাপদ চৌধুরী ছিলেন ছোটোবড়ো সবারই দাদাভাই। পঞ্চুর ঠাকুরদা মহেন্দ্র পালকে সবাই ডাকত মামা। কন্ট্রাক্টর চিত্ত দেব হালাহালিতে সবার ছোড়দা। কাপড়ের দোকানের মালিক দেবীশঙ্কর মিশ্র ছিলেন সবারই ঠাকুরদাদা। এরকম সম্ভবত প্রত্যেক এলাকাতেই এক আধজন থাকেন। বাবা যখন গার্লস বোধজং স্কুলে পড়াতেন, সেই স্কুলে এক গ্রুপ ডি ছিলেন সবাই মামা বলে ডাকত। এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও। মামা ছিলেন রাজধানী আগরতলার বনমালিপুর এলাকার পুরোনো ক্লাব স্ফুলিঙ্গের কর্মকর্তা। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাগুইআটি শাস্ত্রীবাগানে যে ছাত্রাবাসে থাকতাম সেখানে আমাদের সঙ্গে বালুরঘাট হিলি-র তীব্রাংশু শেখর দাস হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারি পড়তেন। আমরা তো বটেই, গোটা এলাকার লোকেরা কাকু বলেই ডাকত। কাকুর ভাইপো বিপুল একসময় শাস্ত্রীবাগানে থাকত। যেহেতু বিপুলের কাকা তাই সবারই কাকু।

একবার হালাহালির পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবার সোনাদ্দা কালীপদ চৌধুরী প্রার্থী। হালাহালি বাজারে তখন বদ্রী ঋষিদাস নামে এক চর্মকার জুতো সেলাই করত। এলাকায় বদ্রী মুচি নামেই পরিচিত। এলাকারই কিছু দুষ্টু লোক বদ্রীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কালীপদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। কালীপদ চৌধুরী গোঁড়া ব্রাহ্মণ। সেই ব্রাহ্মণ হয়ে কিনা মুচির সঙ্গে নির্বাচন লড়বেন! বাধ্য হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। পশ্চিম হালাহালি গ্রামে একবার দুটি লোকের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে সালিশি বসে। তৎকালীন সি পি আই এমের সক্রিয় কর্মী নরেন্দ্র সিংহও সেই বিচারসভার একজন মুরুব্বি। নরেন্দ্র সিংহের ছিল ট্যারা চোখ। পরে চোখের অবস্থা এতই খারাপ হয়, প্রায় অন্ধই হয়ে গেছিলেন। সেই সভায় নরেন্দ্রর কথার মারপ্যাঁচে সেদিনের দোষী লোকটি নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছিল আর নির্দোষ লোকটি দোষী। রাগে, ক্ষোভে সেদিনের নির্দোষ লোকটি হতাশ হয়ে বিচারের শেষে বলে উঠেছিল, পুকুর নষ্ট করে ফেনায় (কচুরিপানা)/ আর গ্রাম নষ্ট করে কানায়। হালাহালির টিচার রহমত আলি একটু খ্যাপাটে ধরনের। সবাই আড়ালে পাগলা বলে ডাকে। রহমত আলি একদিন সি পি আই এম পার্টি অফিসে কয়েকজন ছেলে ছোকরার নামে বিচার দিলেন। ভোর চারটেয় সময় রহমত আলি যখন হাঁটতে বেরোন এই ছেলেগুলো নাকি অ্যাই পাগলা, অ্যাই রহমত পাগলা বলে আওয়াজ দেয়। সেদিন পার্টি অফিসে নরেন্দ্র সিংহও উপস্থিত। নরেন্দ্র রহমতকে বলল, ভোর চাইরটার সময় এই অন্ধকারে তুই কেমনে বুঝলে তারাই তরে পাগলা পাগলা কয়? এতে রহমত আরও রেগে গিয়ে নরেন্দ্রকে বললেন, আমি তর মতো কানা না বে! এই রহমত আলিরই একবার বদলির অর্ডার এলে পদ্মমোহন সিংহকে গিয়ে খুব করে অনুরোধ করেছিলেন বদলি স্থগিত করানোর জন্যে। পদ্মমোহন সিংহ তখন সমন্বয়ে কমিটির শিক্ষকনেতা। পদ্মমোহন কোনো চেষ্টাই করেননি রহমত আলির বদলি নিয়ে। পদ্মমোহন তখন থাকতেন হালাহালি স্কুলের উল্টোদিকে শ্বশুরবাড়িতে। পদ্মমোহনের শ্বশুর ব্রজলাল সিংহও একটু খ্যাপাটে। এক সন্ধ্যায় রহমত রেগেমেগে সেই বাড়িতে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন, অই পদ্ম, বাইরে আয়, তুই কত বড়ো নেতা হইছস দেখতাম আয়। ঘর থেকে কেউই বেরোচ্ছে না। রহমত আলি চিৎকার করেই যাচ্ছে। হঠাৎই লাঠি হাতে ব্রজলাল সিংহ বেরিয়ে এসে রহমতকে তেড়ে গিয়ে বললেন, হু আর ইউ? ব্রজলালের রুদ্রমূর্তি দেখে রহমত আলি দৌড়ে পালিয়ে এসেছিলেন সেই সন্ধ্যায়। পরদিন জানাজানি হতেই বাজারে সবাই রহমতের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে রহমত বলেছিল, আমি কিতা পাগল বে, পদ্মর শ্বশুর আমার থিকে আরও বড়ো পাগল!

হালাহালিতে মণিপুরিদের আরেকটি খেলার খুব চল ছিল। খেলাটির নাম কাঙশানাবা। এই কাঙ খেলাটি ১১২২ খ্রিস্টাব্দে রাজা লোয়তোংবা মণিপুরে চালু করেন। মণিপুরে এটি এখন খুবই জনপ্রিয়। জাতীয় খেলা হিসেবেও ঘোষিত। শজিবু চেরাউবা অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তি থেকে নববর্ষের সাতদিন এই খেলা খেলতেই হয়। কাঙ শব্দের আরেকটি অর্থ রথ। নববর্ষ থেকে শুরু করে আষাঢ় মাসের অমাবস্যা হয়ে ফেরা রথ পর্যন্ত আড়াই মাস সময় এই কাঙশানাবা বা কাঙ খেলা হয়। খুবই প্রাচীন খেলা এটি। এই খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পূর্বপুরুষদের তর্পণ ও সমাজের মঙ্গল কামনা। আগে খেলাটি ছিল রাজকীয়। দুই রাজার মধ্যে এই খেলায় জেতার জন্যে বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারিত হত। পরে খেলাটি রানিদের কাছে চলে আসে। এরপর এটি সাধারণ মানুষের খেলা হিসেবে জনপ্রিয় হয়। এই কাঙ অর্থাৎ ঘিলাটি মোষের শিং বা তেঁতুলকাঠ বা কচ্ছপের খোল বা হাতির কাটা দাঁত ঘষে মেজে তৈরি হয়। ঘিলাটির দৈর্ঘ্য সাত থেকে আট ইঞ্চি। প্রস্থ চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি। উচ্চতা দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ঘষে মেজে নেওয়ার পর কাঙ বা ঘিলাটিকে ঝিনুক বা পদ্মফুলের পাপড়ির মতো দেখায়। মণ্ডপে বা কোর্ট কেটে খেলা হয়। কাঙশান্নাবার কোর্টটি লম্বায় পঁচিশ মিটার। প্রস্থে পাঁচ মিটার। কাঙ বা ঘিলাটি যাতে সহজেই পিছলে যেতে পারে সেজন্যে তুষ, নতুন চাল ও কলাই ডাল ছড়িয়ে দেওয়া হয় কোর্টটিতে। খেলাটির বিশেষ কিছু নিয়ম কানুন আছে। অংশগ্রহণকারী দুটি দলের প্রত্যেকটিতে সাতজন করে খেলোয়াড় থাকবে। কোর্টের অন্যপ্রান্তে সাতটি কড়ি থাকবে। টসের পর জয়ী দলের খেলোয়াড়েরা কাঙ ছুড়ে কড়িগুলিকে একে একে লক্ষ্যভেদ করবে। এরপর বিপক্ষ দলের পালা। কাঙ ছুড়ে মারার দুটি নিয়মের একটি হচ্ছে চেকফেই। দু-পা ফাঁক করে কড়ির নিশানার দিকে ছুড়ে মারা আর অন্যটি হচ্ছে লামধা। পা-হাঁটু মুড়ে বসে ডানহাতের মধ্যমা দিয়ে ছুড়ে মারা। প্রথমে চেকফেই করে কড়িতে দুবার কাঙ লাগাতে হয়। পরে লামধা অনুসারে কড়ি লক্ষ্যভেদ করতে পারলে এক পয়েন্ট। যে দলের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হবে সে দলকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।

কাঙশানাবা দু-রকমের, কাঙ থ্রো ও কাঙ পাকপি। কাঙ থ্রো ছোটো। রাউন্ড শেপ। অনেকটা তেঁতুল বিচির মতো দেখতে। প্রায় ৩-৪ সেমি ব্যাস। কোনো এক গাছের বিচি বা গোটা। পাহাড়ে নাকি পাওয়া যায়। কাং পাকপি বড়ো। কাঙ থ্রো মণিপুরি ছেলে ছোকরারা ও মহিলারা বাড়িঘরে খেলে। হালাহালিতে বেশিরভাগ কাঙ খেলার দল আসত কুচাইনালা থেকে। সুরমা, পঞ্চাশি এলাকা থেকেও দল আসত হালাহালিতে। সুরমা, পঞ্চাশি, কুচাইনালা এলাকায় মণিপুরি সম্প্রদায়ের বসবাস। আবার হালাহালির দলও সেইসব এলাকায় গিয়ে কাঙ খেলত। হালাহালির বারেন্দ্র মাস্টার খুব ভাল কাঙ খেলতেন। বৃকোদর, গৌরকিশোর আরো অনেকেই ভালো খেলতেন। এরারপারের পুবে কুচাইনালার এক খেলোয়াড় নাকি  কাঙ কড়িতে লাগলেই ‘দেখো সখি’ বলে আওয়াজ তুলে এক পা তুলে জোরে জোরে হাততালি দিত। এই চিৎকার ও হর্ষধ্বনিতে খেলা আলাদা প্রাণ পেত। সজিবু চেরাউবা তো বটেই, আষাঢ় মাসেই কাঙ খেলা জমে উঠত খুব। সম্ভবত ওই জন্যেই রথকেও কাঙ বলা হয়। আষাঢ় মাস শেষ হলে বলা হয় কাঙ মাঙে। মাঙে বা মাঙবা মানে অশৌচ। এর মানে আর কাঙ খেলা যাবে না। বারেন্দ্র মাস্টারদের আগে নামকরা কাঙ খেলোয়াড় ছিলেন সহপাঠী অমলেন্দুর দাদু জয়ো সিংহ ও সহপাঠী কুঞ্জমালার দাদু গোলাপ সিংহ। এই দু-জনই অন্ধকার রাতে জোনাকি ধরে মাটিতে রেখে লক্ষ্য করে কাঙ ছুড়ে ছুড়ে প্র্যাকটিস করতেন। কাঙ খেলাতে অনেকে মন্ত্রও ব্যবহার করত যাতে কাঙের গতিমুখ পাল্টে যায় বা ছুড়ন্ত কাঙ মাঝপথে থেমে যায়। হালাহালির এই রাজকীয় কাঙ নাকি এখন কাঞ্চনবাড়িতে খেলা হয়। ঠিক কাঙের মতো না হলেও বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের মণ্ডপে এই ধরনের একটি খেলা চালু ছিল। এই খেলাটির নাম গিল্লা খেলা। গিল্লা খেলার ঘিলাটি মাকুর মতো দেখতে। এটি ছুড়ে নিকোন বা কড়ি লক্ষ্যভেদ করা হত। হালাহালির পুরোনো বাসিন্দারা বলেন, হালাহালিতে এই গিল্লা খেলা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি। কাঙ খেলার উৎস নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলা না গেলেও লোকসংস্কৃতিবিদেরা কড়ি ও ঝিনুক বা পদ্মপাপড়ি স্ত্রী জননাঙ্গ অর্থাৎ সৃষ্টির প্রতীক। আর কাঙ ছুড়ে মারার মধ্যে একধরনের অমঙ্গল দূর করার প্রতীকী ব্যঞ্জনা রয়েছে।

একদিন বিকেলে দেখলাম একটি পালকির ভেতর বর বসে আছে। সঙ্গে বরপক্ষের পুরুষ মহিলারা হেঁটে হেঁটেই পশ্চিম হালাহালির দিকে যাচ্ছে। এর আগে আমি পালকি দেখিনি কখনো। সেই ছোটোবেলায় ক্লাস টুতে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পালকির গান ছড়াটি আমাদের পাঠ্য ছিল। পালকি চলে পালকি চলে / গগনতলে আগুন জ্বলে…। চারজন বেহারা বরকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও পেছন পেছন পালকিটি দেখার জন্যে ছুটে গেলাম। তখন সরোজিনী নাইডুর একটি কবিতা আমাদের পাঠ্য ছিল। সং অব দ্য প্যালাঙ্কিন বিয়ারার্স। পালকি বা দোলা নিয়ে ভূপেন হাজরিকার সেই বিখ্যাত গান দোলা এ দোলা গানটি আমেরিকাতে ইংরেজিতে অনুবাদ করে গাইতে গিয়ে দোলার কোনো প্রতিশব্দ আমেরিকান লেক্সিকনে পাওয়া যায়নি। তখন ভূপেন হাজরিকা দোলার বদলে ডলার শব্দটি ব্যবহার করে গানটি গেয়েছিলেন। পরদিন স্কুলে গিয়ে শুনি আমাদের সহপাঠী রত্না শর্মার বিয়ে হয়ে গেছে। রত্না পশ্চিম হালাহালির বসুমতী ঠাকুরাইনের মেয়ে। রত্নার বাবা ব্রাহ্মণ। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের ব্রাহ্মণদের বিয়ের লোকাচার বিষ্ণুপ্রিয়া সমাজের রীতি, রেওয়াজ অনুসারেই হয়। মাংকলকাপি বা মঙ্গলাচরণের দিনই বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়। এরপর হেইচাপতের দিনে বরের বাড়ি থেকে কয়েকজন গিয়ে কনের বাড়ির লোকেদের মিষ্টিমুখ করিয়ে আসে। লহং বা বিয়ের দিন বরের বাড়িতে বরের একজন সঙ্গী বা লগরগ সারাদিন বরের সঙ্গেই থাকে। ছাতাধরা থেকে শুরু করে দামানগ বা বরকে সহযোগিতা করে এই লগরগ। এই লগরগকে অবশ্যই বিবাহিত ও সন্তানের বাবা হতে হবে। বিয়ের দিন বর আসে পালকি চড়ে। বিয়ের ফটকে গেট আটকে দাঁড়ায় বরের শ্যালক শ্যালিকা সম্পর্কের ছেলেমেয়েরা। নগদ অর্থের পরিবর্তে বরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কনের মা, দিদি ও বৌদি বরকে বরণ করে। এরপর বরকে পোশাক বদল করে কনের বাড়ির দেওয়া পোশাক যেমন পরতে হয় তেমনি কনেকেও বিয়ের আগে বরের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা পোশাক পরতে হয়। সম্পর্কে কনের ছোটোভাই ঠ্যাংহান ধনা বা বরের পা ধুইয়ে মুছে দেয়। বিনিময়ে তাকে নগদ অর্থ বা উপহার দিতে হয় বরকে। এরপর বরকে কাঠের পিঁড়িতে বা চৌকিতে বসিয়ে শুরু হয় কনের গুরুজনদের সঙ্গে পরিচয়পর্ব। গোল করে কাটা কলাপাতায় পানসুপারি সাজিয়ে একে একে গুরুজনদের হাতে দিয়ে বর প্রণাম করে। একে বলে পানাতাংখা। কনের সঙ্গী বা কইনার লগরগ এরপর কনেকে ঘর থেকে বের করে এনে পিঁড়িতে বসায়। এই কইনার লগরগ বা সঙ্গীকে অবশ্যই বিবাহিত ও সন্তানের মা হতে হয়। দাপদিয়া লহং বা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা কোনো নারী কনের সঙ্গী হতে পারে না। বর ও কনেকে পিঁড়িতে বসিয়ে পুরোহিত কুশের দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে দেন। তখন কনের আত্মীয়স্বজন সাংসারিক দানসামগ্রী তাঁদের বাঁধা হাতে ছুঁইয়ে উপহার দেন। কীর্তনও শুরু হয়। কীর্তনে মৃদঙ্গবাদক ও দু-জন দোহার  থাকে। কীর্তনের তালে তালে কুঞ্জে উপবিষ্ট বরকে কনে জাকা বা ফুলের সাজি হাতে নিয়ে প্রদক্ষিণ করে। একেকবার প্রদক্ষিণ করে কনে বরের দিকে ফুল ছিটিয়ে দেয়। সপ্তম বারের প্রদক্ষিণের পর কনে বরকে দুটি মালা পরিয়ে দেয়। কুঞ্জের কাজ হয়ে গেলে দু-জনকে আবার পিঁড়িতে পাশাপাশি বসানো হলে বর তার গলার একটি মালা কনেকে পরিয়ে দেয়। পুরোহিত বরের গায়ের শাল চাদরের সঙ্গে কনের ওড়নার গিঁট বা গাথি বেঁধে দেন। তিনজন পুরোহিত নতুন দম্পতিকে আশীর্বাদ করার পর বর-বউ ঘরে গেলে গিঁট খোলার জন্যে কনের বাড়ির মহিলাদের নগদ টাকা বা গাথিরধন দিতে হয়। শুরু হয় বরের সঙ্গে শ্যালিকাদের খুনশুটিপর্ব। চিমটি কাটা, নানা কথায় বরকে ব্যতিব্যস্ত করা। এইসব লগরগকেই সামাল দিতে হয়। বিয়ের রাতেই কনেকে নিয়ে বর নিজের বাড়িতে চলে আসে। কনেকে পালকিতে চাপিয়ে নিয়ে আসা হয়। বরের বাড়ির বারান্দায় গীতাপাঠ চলতে থাকে। কনে ঘরে প্রবেশ করে। দুই পক্ষের মধ্যে উপহার বিনিময় হয়। কনের বাড়ি থেকে আসা দু-জন মহিলা ও একজন পুরুষ মিলে ফামপারানি বা বিছানা এমনভাবে সাজায় যে অন্তত সাতটি শয্যাসামগ্রী এতে ব্যবহার করতেই হয়। বিয়ের পর রত্না আর স্কুলে আসেনি।

 

ক্রমশ…

Tags: আত্মজৈবনিকউত্তর-পূর্বধারাবাহিক গদ্যপ্রবুদ্ধসুন্দর কর
Previous Post

অমিতাভ দেব চৌধুরী || নবম পর্ব

Next Post

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || প্রথম পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || প্রথম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || প্রথম পর্ব

Comments 2

  1. Suraj Das says:
    1 year ago

    খুব ভালো লাগছে।

    Reply
  2. Chanchal Chakraborty says:
    1 year ago

    ঠিক আছে।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath