Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home উপন্যাস

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || প্রথম পর্ব

সংগ্রাহক : সুশান্ত কর

Daruharidra by Daruharidra
02/07/2021
in উপন্যাস
2
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || প্রথম পর্ব
185
VIEWS

পাঠপ্রস্তুতি

 

শ্রীযুধাজিতের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। শুনেছি ‘মেখলা পরা মেয়ে’ উপন্যাসটির কথাও। ষাটের ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোর কথা নিয়ে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। কিন্তু কে যে সেই লেখক কেউ ভালো করে জানেন না। পদবি নেই বলে ধরে নেওয়া হয় যে নামটি ছদ্মনাম। অনেকেই যুধাজিৎ বলেন, কিন্তু শ্রী–টি গায়ে লাগান আছে, সুতরাং নাম হবে শ্রীযুধাজিৎ। শোনা যায় বইটি এককালে নিষিদ্ধ হয়েছিল। সেই সম্ভাবনা ছিলও। সুতরাং ছদ্মনাম হওয়াই স্বাভাবিক। এবং স্বাভাবিক যে বইটি বাজারে মিলবে না। এই নিয়েই একদিন কথা হচ্ছিল ‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ’ এ। গুগলে সন্ধান করে চার ভাগে পুরো বইটা পাওয়া গেল। এবং দারুহরিদ্রার কাছে গিয়ে পৌঁছল। কিন্তু সে যে কোন ঠিকানায় মিলেছিল, তাও বই পাবার উৎসাহে মনে ছিল না। পরে আবার পুরোটাই একত্রে মিলল বিশ্বখ্যাত আর্কাইভ ডট অর্গে। আশা করছি এই ধারাবাহিক যতদিনে বেরোবে আমরা প্রকাশক, মুদ্রক, পরিবেশকের সন্ধান চালিয়ে লেখক অব্দি পৌঁছে যাব। যদিও জানি না তিনি জীবিত আছেন কি নেই। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন পদ্মভূষণ সাংবাদিক তখন ‘দৈনিক যুগান্তর’-এর সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়। প্রকাশ করেছিলেন ‘লিপিবন্ধন’-এর হয়ে দেবী বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের ঠিকানা ৯ শিবনারায়ণ দাস লেন, কলকাতা ৬। মুদ্রক এই একই ঠিকানায় কল্পনা প্রেস প্রাইভেট লিমিটেডের সুবোধ চন্দ্র মণ্ডল। একমাত্র পরিবেশক ছিলেন ‘নব ভারতী’। তাঁদের ঠিকানা ৬, রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট কলকাতা ৯। প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়। সেটি ছেপে দিয়েছিলেন ‘রয়েল হাফটোন কোম্পানি’, ৪ সরকার বাই লেন। তথ্যগুলো আমরা দিয়ে দিলাম, যাতে লেখকের সন্ধানে একটি সমবেত যাত্রা সম্ভব হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে কিছু তথ্য হাতে এসেওছে। সম্ভব হলে সেই সব পরে কখনও বলা যাবে। আপাতত আমরা জেনেছি উপন্যাসটির একটি দ্বিতীয় পর্বও রয়েছে। যেটি আমাদের হাতে পৌঁছয়নি। কিন্তু নিষিদ্ধ তথা ছাপা প্রতিলিপি বাজেয়াপ্ত কেবল এই প্রথম পর্বই হয়েছিল।  সেই নির্দেশিকাটি এখানে রইল।

 

মেখলা পরা মেয়ে বাজেয়াপ্ত করবার নির্দেশিকা

প্রকাশ কাল সর্বত্র দেওয়া আছে ১৯৪৬। কিন্তু সেটি লেখকের নামেরই মতন ছদ্মকাল। নামপৃষ্ঠাতে যেখানে লেখা আছে ‘দ্বিতীয় প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬’ –লেখকের ‘আভাষণ’ তথা ভূমিকার শেষে রয়েছে ‘ডিসেম্বর ১৯৪৬’। কাহিনিভাগ স্পষ্টতই ৪ জুলাই, ১৯৬০–এ কটন কলেজে রঞ্জিত বরপূজারীর হত্যার পরে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা বিশেষ করে মধ্য ও উজান অসমে ছড়িয়ে পড়া জাতি দাঙ্গা নিয়েই। সুতরাং ১৯৬০–এর আগে হতেই পারে না। পরের বছর দেড় দুইও বই আকারে বেরোয়নি সিদ্ধান্তে যেতেই পারি। কেননা এর আগে উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে সেকালের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের কাগজ ‘রূপাঞ্জলি’তে বেরিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকের পরে পাঠক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে ‘বহুলাংশে পরিবর্ধন ও পরিবর্জন’ করে তবেই বইটি ছাপা হয়েছিল। আরও কথা রয়েছে। উপন্যাসের শুরুতেই তখনকার প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর অসম ভ্রমণ ও ভূমিকা নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে। তিনি পীড়িত বাঙালি শরণার্থীদের নিয়ে কোনও আক্ষেপ জানাননি, কেবল পুলিশের গুলিতে নিহত রঞ্জিত বরপূজারীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। অভিযোগটি যদিও অর্ধসত্য। নেহরু তিনদিনের অসম সফরে আসেন ১৭ জুলাই। সঙ্গে ছিলেন কন্যা ইন্দিরা গান্ধি ও সাংসদ নিবারণ চন্দ্র লস্কর। প্রধানমন্ত্রী বিমান বন্দর থেকে সোজা চলে গেছিলেন নগাঁওতে, ইন্দিরা যান দরঙে উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনে। গুয়াহাটি ফিরে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাতেই তিনি দলীয় কর্মীদের তিরস্কার করেন সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের সময় তাঁদের নিষ্ক্রিয়তার জন্যে। জাজেস ময়দানে সমাবেশেও বাস্তুহারাদের বিপন্নতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।১‘ ফলে এর আগে উপন্যাসটি লেখার প্রশ্নই উঠে না। এছাড়াও বইটি উৎসর্গিত হয়েছে “সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের যে সকল সদস্যের ঐক্যমতে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় ‘আসাম হাঙ্গামা’র বিষয়ে সম্মিলিত প্রস্তাব পাশ করা সম্ভব হয়েছিল,তাঁদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে…।” বিধান সভার সেই অধিবেশন বসেছিল ১৯৬০–এর ২রা সেপ্টেম্বর।২‘ দাঁড়াল এই যে এর আগে উপন্যাসটি বই আকারেও প্রকাশ পায়নি।

দুই চার লাইনে ভূমিকা লিখে দিলেও বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় নিয়েও কিছু কথা মনে রাখা ভালো। নিছক প্রখ্যাত সাংবাদিক বলেই এই বইটির ভূমিকা তাঁকে দিয়ে লেখানো হল এমনটা হবার সম্ভাবনা খুবই কম। অসম-বাংলার কাগজগুলো রীতিমত সেইকালে বৌদ্ধিক নেতৃত্ব গ্রহণ করছিল। আর যুগান্তর এই প্রশ্নে বরং সামান্য এগিয়েই ছিল। ৯ জুলাই কথাশিল্পী তারাশঙ্করের সভাপতিত্বে কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে একটি প্রতিবাদী নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তৃতা দিতে উঠে বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় ১০ দফা প্রস্তাব পেশ করলে সামান্য সংযোজন বিয়োজন সহ সেগুলো গৃহীত হয়। সেই বক্তৃতাতে তিনি বাঙালিকে ‘আবার তার বৈপ্লবিক যুগ’-এ ফিরে যেতে বলে রীতিমত সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।৩‘ তাঁর প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বিধায়ক সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় রীতিমত বলেন, সরকার যদি সভার অভিমত না মেনে নেন তবে বাংলাকে ভারত থেকেই বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সেরকম কিছুই হয়নি আমরা জানি। আগ্রাসী না হলেও এঁদের জাতীয়তাবাদ ছিল পশ্চিম বাংলার সংখ্যাগুরু বাস্তবতাতে বলীয়ান। অসমের মানুষের তাতে লাভ ক্ষতি কিছু হবার ছিল না, হয়নি। কী হয়েছিল সেই সব কথা এখানে লিখবার জায়গা নয়। যেটি আমরা লিখতে চাই, সম্ভবত লেখক শ্রীযুধাজিতও পশ্চিম বাংলার মানুষ। অসমে প্রবাসী হয়ে থাকতেও পারেন, নাও পারেন। এই কথা আমরা লিখছি তাঁর প্রথম অধ্যায়ের শুরুটি পড়ে, “আমার লেখার ঘর। একটা মেহগনি কাঠের দোয়াতদান, টেবল ল্যাম্প। একপাশে কটা ভাষা ও শব্দকোষ। চারদিকের আলমারিতে ঠাসা বই। এর মধ্যে রবীন্দ্র–রচনাবলী, শরৎ–গ্রন্থাবলী, এন সাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা, ঋষি বঙ্কিমের গ্রন্থসমূহের সেট সহজেই চোখে পড়ে কেউ এ ঘরে এলে। ঘরটা খুব বড়ও নয়, খুব ছোটও নয়। ডিস্টেম্পার করা দেয়াল। মেঝে মোজেক–এ আবৃত। এ ঘরে জুতোর প্রবেশ নিষেধ। কেননা এ ঘরেই চলে আমার সাধনা—সাহিত্য সাধনা। দেয়ালে টাঙ্গানো কয়েকজন প্রাতঃস্মরণীয় ও বিশিষ্ট ভারত সন্তানের ছবি। তাঁরা হলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ–সারদামণি, স্বামী বিবেকানন্দ, গুরুদের রবীন্দ্রনাথ, নিজ হস্তাক্ষরে বাংলায় “মো, ক, গান্ধী” সহি সহ মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং বর্তমান ভারতের মুখ্য নেতা নেহরু। এছাড়াও আরও একটি চিত্র আছে, তা হ’ল বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী বীণাপাণির। সুতরাং এই ঘরে যে জুতো পরে ঢোকা উচিত নয় আশা করি এ কথা শ্রদ্ধানত চিত্তে আমার সঙ্গে আপনারাও স্বীকার করবেন। একদিকের দেয়ালে টাঙ্গানো আছে আরও দুটি জিনিস। তার একটি হল পরাধীনতার আমলে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের অঙ্কিত নানা দেশীয় রাজ্য কণ্টকিত একটি মানচিত্র। আর ঠিক পাশেই স্বাধীনতাত্তোর ভারতের পাক অংশ বিযুক্ত মানচিত্র। আর যে জিনিসগুলো ছিল একটা উডেন শেলফ—এর ওপর পরপর স্তূপাকৃতি হয়ে তা হ’ল উনিশ শ’ ষাট সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সুরু করে জমানো বেশ কিছু খবরের কাগজ—আনন্দবাজার, যুগান্তর, অমৃতবাজার, ষ্টেটস̖ম্যান, হিন্দুস্তান ষ্ট্যাণ্ডার্ড, লোকসেবক, স্বাধীনতা, জনসেবক, আসাম ট্রিবিউন, নতুন অসমীয়া প্রভৃতি। কাগজগুলোর বুকে ছোট বড় নানা হরফে লেখা আসামের ভারতীয় নাগরিক বাংলা ভাষাভাষী নরনারীর ওপর অমানুষিক অত্যাচারের নানা সংবাদ। হতে পারে সবই সত্যি—নইলে কিছুটা হয়ত মিথ্যা, নয়ত বা সত্যে যা ঘটেছে তার চেয়েও সংবাদ হ’য়ে বেরিয়েছে অনেক কম।” (বানান অবিকৃত) অসমের দুটি কাগজের নাম ছাড়া আর যা যা তথ্য আছে তাতে অসমের আর কিছুই নেই। অসমের সমাজ ইতিহাস নিয়ে একটি বইয়ের উল্লেখও নেই, না আছে অসমের কোনও ‘প্রাতঃস্মরণীয় ও বিশিষ্ট ভারত সন্তানের ছবি।’ পাঠকের প্রশ্ন হতে পারে এভাবে আবার উপন্যাসের শুরু হয় বুঝি? আর হয়েছে যদি তবে কল্পিত চরিত্রের কথাই হবে যে বক্তা পক্ষে (উত্তম পুরুষে) গল্পটি বলছে। না, গোটা উপন্যাস জুড়েই লেখক এভাবে নিজের কথা গদ্যে মাঝে মাঝে জুড়েছেন। শুরুর কথাগুলো তাঁর জীবন সম্পর্কে। কেন এবং কীভাবে উপন্যাসটি লিখছেন। বাকি কথাগুলো তাঁর শ্রদ্ধার নেতা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুযোগ, সেই সুযোগে নিজের ‘ভারত দর্শন’ও। ‘ভারত দর্শন’ বলছি কেননা ওখানে দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারতে সামিল করবার জন্যে বল্লভ ভাই প্যাটেলের প্রশংসাও আছে, কাশ্মীর নিয়ে নেহরুর স্থিতির কঠোর সমালোচনাও আছে। অসমিয়া জাতীয়তাবাদীদের বিপরীতে বাঙালির ‘দেশপ্রেম’-এর স্বরূপ চেনাবার দায়টাও প্রকাশ পেয়েছে। যেটুকু তুলে দিলাম এর পরেই লিখছেন, “একদৃষ্টে আমি অনেকক্ষণ চেয়ে ছিলাম সেই কাগজগুলোর দিকে।… তাই সামনের সুদৃশ্য দোয়াতদানের দিকে ডান হাতটা এগিয়ে গেল, তুলে নিল লেখনী। কলমের নিব ডুবিয়ে দিল মসীতে—মনের মাঝে একটা প্রত্যয় যেন দৃঢ়তা সহকারে অস্ফুটে বলে উঠল—Pen is mightier than sword….” আমাদের ছেড়ে দেওয়া অংশ পাঠক পড়ে নেবেন। যেটুকু দিলাম তাতে স্পষ্ট সেই কাগজ এবং বইগুলো পড়েই লেখক উপন্যাসে হাত দিয়েছেন। তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই বিশেষ। তিনি অসমের লোক হলে যা থাকা খুবই স্বাভাবিক ছিল। এবং তিনি তা চেপে যেতেন না। এর খানিক পরেই রয়েছে উপন্যাসের একেবারের শেষের কিছু আভাস—যেখানে শিলিগুড়ির শরণার্থী শিবিরে আশ্রিতা হয়েছে উপন্যাসের বাঙালি নায়ক শুভ্রেন্দুর অসমিয়া প্রেয়সী শিবানী। সেই শিবিরের অভিজ্ঞতা তাঁর  থাকলেও থাকতে পারে।

এই তথ্যগুলো থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট— লেখক নিজেকে একজন স্বাভাবিক ‘দ্রষ্টা’ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। যে দ্রষ্টা ‘হিন্দু ভদ্রলোক, সুশিক্ষিত, সংস্কৃতিবান, দেশপ্রেমী’ এবং ‘সাহিত্য সাধক’। একজন বাঙালি হিসেবেও তিনি গর্বিত এই ভাবে, “সুতরাং বাঙালী যদি কোন কিছুর জন্য গর্ব করে, সে গর্ব তার সংস্কৃতিকে নিয়ে, তার অনুধ্যান নিয়ে, তার চিন্তার পর্যাপ্ততা নিয়ে, তার মনীষার স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে, ভারতীয় জাতির জন্য স্বার্থত্যাগের স্বর্ণকথা নিয়ে আর ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে।” এহেন বাঙালি মনকে নিয়ে একটি সমস্যার জায়গা আছে। বিস্তৃত লিখবার পক্ষে যথোপযুক্ত পরিসর এটা নয়। আমরা মাত্র বছর পাঁচেক পরে প্রকাশিত প্রবোধ কুমার সান্যালের দেশভাগের প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাস ‘হাসুবানু’র কথা এখানে পাঠককে মনে করিয়ে দিতে পারি। যদিও এক জায়গাতে লিখেছেন, “আমি বাঙালী সমাজের উন্নাসিকদেরও সহ্য করতে পারি নে…” (পৃ:৪৯) –একে সহজভাবে নেওয়া কঠিন হয়। এহেন ‘গর্ব’বোধ তাঁর রচনাকে যেমন গুণযুক্ত করেছে, তেমনি দোষমুক্তও রাখেনি। এর প্রথমটি তো এই যে গল্পকথার মাঝে মাঝেই তিনি গদ্যকথা জুড়ে দিয়েছেন, যা আমাদের মনে হয়েছে উপন্যাসের রসভঙ্গ করেছে। এই নিয়ে তিনি অচেতনও ছিলেন না। মুখবন্ধে এর উল্লেখ আছে। এই গর্বিত প্রকাশ রয়েছে, “সম্ভবত: বাংলা সাহিত্যের কোন উপন্যাসে এমন প্রচেষ্টা এই প্রথম।” যদিও এভাবে উপন্যাস লেখা যাবে না বলে আমরা কোনও অভিমত দেব না। বঙ্কিম থেকে শুরু করে দেবেশ রায় অব্দি বহু লেখকের বাংলা উপন্যাসে একরৈখিক, বহুরৈখিক অথবা বৃত্তাকার কাহিনির ভেতরে তত্ত্ব তথ্যের বর্ণনা মেলে। আমাদের মনে পড়ে দেবেশ রায়ের ‘১৯৯৪–তে প্রকাশিত ‘দাঙ্গার প্রতিবেদন’ উপন্যাসটির কথা। নাম শুনে উপন্যাস মনে হয় না। বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে পরে গুজরাটে মুসলমান বিদ্বেষী হত্যালীলাকে বিস্তৃত ধরবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেখানেও লেখকের তথ্যবর্ণনা মূল কাহিনির সঙ্গে মিলে মিশে রয়েছে। এই উপন্যাসে মনে হয় যেন গল্পভাগের সমান্তরাল একটি তাত্ত্বিক প্রবন্ধ পড়ে যাচ্ছি মাঝে মধ্যে। যেখানে চিন–কাশ্মীর এমন আরও বহু প্রসঙ্গে এসেছে। তথ্যভাগটি নিয়ে তিনি গল্পের নির্মাণ করেছেন। ‘প্রবন্ধভাগ’টি না থাকলে একটি করুণ রসের প্রেম কাহিনি হিসেবে পাঠক টান টান উত্তেজনা নিয়ে উপন্যাসটি পড়ে ফেলতে পারেন। বুঝতে পারি, লেখক তো গল্প বলবেন বলেই যে বই পরে নিষিদ্ধ হবে সেটি ছদ্মনামে লিখবার ঝুঁকি নেননি। যে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা এবং রাজনৈতিক পরিবেশ এই গল্পের কাহিনিভাগকে সম্ভব করল— সেই সম্পর্কে তিনি পাঠককে সচেতন করতে চেয়েছেন সরাসরি। রসে সিক্ত পাঠক-চেতনার উল্লম্ফন সাহিত্য গুণে স্বাভাবিকভাবে ঘটবে– এতটা ভরসা সম্ভবত তিনি করেননি।

ক্রমশ…

Tags: উত্তর-পূর্বধারাবাহিক উপন্যাসনিষিদ্ধ উপন্যাসমেখলা পরা মেয়েযুধাজিৎসুশান্ত কর
Previous Post

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || একবিংশতি পর্ব

Next Post

শুভদীপ দেব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
শুভদীপ দেব

শুভদীপ দেব

Comments 2

  1. অমিতাভ দেব চৌধুরী says:
    12 months ago

    খুব ভালো ও তথ্যমণ্ডিত ভূমিকা । অপেক্ষা জাগিয়ে রাখে ।

    Reply
    • সুশান্ত কর says:
      12 months ago

      ধন্যবাদ। আপনি আছেন বলেই।

      Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath