Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home সাক্ষাৎ পাতা

অমিতাভ দেব চৌধুরী || একাদশ পর্ব

ভাষা-প্রেমিকের সাথে, রেস্তোরাঁয় || একাদশ পর্ব

Daruharidra by Daruharidra
14/07/2021
in সাক্ষাৎ পাতা
0
অমিতাভ দেব চৌধুরী || একাদশ পর্ব
137
VIEWS

২৯.দারুহরিদ্রা :-  আচ্ছা, যাদবপুরের মতন‌ একটি বিশ্ববিদ্যালয় — সেখানে গিয়ে আপনি কেবল পড়াশোনাই করলেন? প্রেম, রাজনীতি, লেখালেখি করেননি?

অমিতাভ :- এই প্রশ্নের উত্তর তোমাদের নির্দিষ্ট ক্রম অনুযায়ীই দিই। প্রেম? হ্যাঁ পড়েছিলাম। এক সহপাঠিনীর। প্রত্যাখ্যাত হই। সে বলে, সমবয়সীদের মধ্যে প্রেম হয় না। তার বিচারে, একটু বয়স্ক পুরুষ ছাড়া কারও সঙ্গেই প্রেম সম্পর্ক হতে পারে না। ব্যস। পর্বে ইতি। অনেক বছর পর, ফেসবোকামোর প্রথম যুগে, আমি তখন ফেসবুকের পোকা, আমার সেই সহপাঠিনীকে খুঁজে পাই ফলোয়ার হিসেবে। নতুন করে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কী আশ্চর্য, ছাত্রাবস্থায় লেখা আমার কয়েকটি হারিয়ে যাওয়া কবিতা ওর কাছ থেকেই আমি পুনরুদ্ধার করি। ও টুকে রেখেছিল। ফেসবুকের চিঠিতে আমাকে জানিয়েছিল : সারাজীবন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছে। জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই কবিতাগুলো আজও হারিয়ে যায়নি। এটা একটা প্রাপ্তিই, কী বলো? হঠাৎ কখনও সেই সহপাঠিনীর ফোন আসে।

তবে, তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের এক সহপাঠিনী আমার প্রেমে পড়েছিল। ব্যাপারটি উল্লেখযোগ্য কারণ ও আমাকে নিয়ে একটি কবিতা লেখে। নিটোল প্রেমের কবিতা। সে কবিতা প্রকাশিত হয় আমাদের সম্পাদনায় বের-হওয়া দেওয়াল পত্রিকা ‘দেয়াল’ এ। স্বয়ং শঙ্খ ঘোষ দাঁড়িয়ে ওই পত্রিকা পড়তেন। আমাকে একদিন ডেকে বলেছিলেন পত্রিকা চালিয়ে যেতে।

সহপাঠিনীর লেখা সেই কবিতা

 

এবারে রাজনীতির প্রসঙ্গে আসি। যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয় তো, তোমরা জানো, সেই কবে থেকেই রাজনীতির আখড়া। আমিও গিয়ে যথারীতি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। অতিবাম-ঘেঁষা রাজনীতি। ১৯৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাসভাড়া সামান্য বাড়িয়ে দেয়। এই যেমন, যাদবপুর থেকে গড়িয়াহাট অবধি ভাড়া বেড়েছিল মাত্র ৫ পয়সা। আমি যে যুগের কথা বলছি, তখন আমার বন্ধুরা গাঁজা খেত এক টাকায় এক পুরিয়া, চারমিনার তিনটাকায় এক প্যাকেট। বাড়ি আসতাম বিমানে। তার ভাড়া ছিল চুরাশি টাকা। সুতরাং তখনকার বিচারে এই ভাড়া বৃদ্ধি নেহাত ফ্যালনা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিবাম ছাত্র ইউনিয়ন এর প্রতিবাদে হামলে পড়ল ময়দানে। আমরা মিটিং করলাম, মিছিল করলাম, পকেট ভরতি পাথর নিয়ে গড়িয়াহাট গেলাম। সেই পাথরের কল্পিত নিশানা ছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশ যখন সত্যিই চলে এল এবং নির্বিচারে লাঠিচার্জ শুরু করল, পকেটের পাথর পকেটে নিয়ে মফসসলের ছেলে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলাম। বীরত্বের সেখানেই ইতি। কিন্তু আমারই অতি ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু একটু বেশি বীরত্ব দেখাতে গিয়ে পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়ল। অতঃপর দৌড়ঝাঁপ। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল। ত্রিকোণ পার্কে উকিলের বাড়ি। উত্তর কলকাতায় মিটিং মিছিল, ‘মানছি না, মানবো না’। যে কলকাতাকে কখনও চিনব বলে ভাবিইনি তাকেই মাত্র দু-মাসে আগাপাশতলা চেনা হয়ে গেল। একদিন সন্ধ্যের ঘোরঘোর আলোয় রাসবিহারী মোড়ে দাঁড়িয়ে লেবু-চা খাচ্ছি, হঠাৎ নীলাঞ্জন বলল, পেছনে খোচর লেগেছে। ‘অমিতাভ, তুমি পার্থর সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তুমি খুব সাবধান। গোলমেলে বইপত্র যা সঙ্গে আছে, কালই আমাকে এনে দিয়ে দাও, আর হস্টেলে এসে ঢুকে যাও’। হস্টেলে  ঢুকলাম মানে দেবাংশুর গেস্ট। দেবাংশু মানে দেবাংশু সেনগুপ্ত। শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে কবি জয়দেব বসুর অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিল। তখন আমারও অভিন্নহৃদয় বন্ধু। ওর খাট শেয়ার করতে দিয়েছিল। এই সেই দেবাংশু যে পরবর্তীতে টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় ডিরেক্টর। যার ডিরেকশনে ‘মহাপ্রভু‘ সিরিয়ালে যীশু সেনগুপ্ত প্রথম অভিনয় করে। দেবাংশু অকালপ্রয়াত। ওদের বাংলাদেশের বাড়িতে শচীনকর্তা যে কতবার গেছেন সে গল্প প্রায়ই বলত। স্রেফ আমাকে শচীনকর্তার অফবিট গান শোনানোর জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল ইয়া পেল্লাই রেকর্ড প্লেয়ার আর রেকর্ড।

 

দেবাংশু সেনগুপ্তের চিঠি। শুরুর পাতা
দেবাংশু সেনগুপ্তের চিঠি। শেষের পাতা

রাজনীতি করতাম ঠিকই। কিন্তু দাদাদের সঙ্গে তর্ক হত প্রচুর। দাদাদের মতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপল কুমার বসু এঁরা প্রতিক্রিয়াশীল, আমাদের মতে কবি। দাদাদের মতে আমরা যে সব বইপত্র পড়ি সব প্রতিক্রিয়াশীল লেখালেখি। আমাদের মতে দাদারা  শিল্প সাহিত্যের কিছুই বোঝেন না। এ আড্ডা গড়াত অনেক রাত অবধি। তবে গান হত একযোগে। নবজীবনের গান। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান। রণেন রায় চৌধুরীর গান। প্রতিমা বড়ুয়ার গান। সলিল চৌধুরীর গান। আর, আর যার কথা বর্তমান একেবারেই ভুলে গেছে সেই প্রথম লোকসভায় বামসমর্থিত নির্দল এম.পি,  সরোজিনী নাইডুর ছোটো ভাই, সত্যজিতের ‘সোনার কেল্লা’য় সিধু জ্যাঠার ভূমিকায় অভিনয়-করিয়ে, অনেকটা শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের মতো দেখতে, সেই হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নিজের লেখা সুর দেওয়া গান।  

 

 

৩০.দারুহরিদ্রা :- আপনাদের গানের আড্ডায় রবীন্দ্রসঙ্গীত হত না?

অমিতাভ :- অবশ্যই হত। এই প্রসঙ্গেও আমি আমার নিজের সৌভাগ্যকে ঈর্ষা না করে পারি না। আমাদের দু-ক্লাস জুনিয়র ছিল দিতু। খোদ ঠাকুরবাড়ির ছেলে। আমাদের সঙ্গে পিজি হস্টেলেই থাকত। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক ঠিক কী রকম তা একদিন জলের মতো বুঝিয়ে দিয়েছিল কিন্তু এতবছর পর বুঝতে পারছি স্মৃতি প্রতারণা করছে। ঠাকুরবাড়ির চেহারার গরিমার আবছা একটা ছায়া দিতু তার সর্বাঙ্গে ধারণ করে ছিল। আর একটা আশ্চর্য গুণ ছিল তার, অসম্ভব ভালো এসরাজ বাজাতে পারত। তার ঘরের রাতের আড্ডাগুলি ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে কানায় কানায় পূর্ণ। আমাকে একদিন অনেক রাত্তিরে পরজ রাগের সেই অত্যাশ্চর্য রবীন্দ্রসঙ্গীতটি শিখিয়ে দিয়েছিল :

‘আমি হেথায় থাকি শুধু গাইতে তোমার গান’ ।

পার্থ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে দাদাদের বিপ্লবীয়ানাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নেশা করতে ফিল্ডে নেমে পড়ল। বোদল্যেরের শিষ্য হতে হবে। গাঁজা, মদ, চরস, আফিং, স্ম্যাক বা হেরোইন। হাতে বাকি রইল কেবল কোকেন আর এল এস ডি। এই দুই বিগ্রহের চরণ স্পর্শ করতে পারলে নেশাড়ু জীবনে মোক্ষলাভ আমাদের জন্য নির্ঘাত বরাদ্দ ছিল। কিন্তু হল না। বুঝলাম ভেসে যাচ্ছি। বন্ধুদের মধ্যে সবাই অবশ্য এই চক্করে পড়েনি। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ছেলে মৈনাক আমার সহপাঠী ছিল। দারুণ পড়ুয়া, দারুণ ভালো মানুষ। সিনেমাভুবন নিয়ে তার ছিল এক আলাদা নেশার জগত। সে কখনও আমাদের দলে ভেড়েনি। কবি জয়দেব বসু দিনের বেলা ক্লাস আর রাজনীতি করত। রাত দশটার পর আমাদের দলে ভিড়ে পড়ত। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে সৌগত দুরন্ত কবি। স্বয়ং শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার কবিতার তারিফ করতেন। সেও নেশাভাঙের তেমন ধার ধারত না। অসামান্য গান লিখত। তার লেখা একটা গানের কথা শোনাই।

এ পরবাসে বৃষ্টি নামে না।

এ প্রান্তরে নীরবতা

পথ ভেঙে তুমি ক্লান্ত

তারার ঠিকানা তোমার জানা নেই

শহরের নীল অরণ্যে ঘুরে ঘুরে

তুমি কী যে পাও?

আমার বন্ধু এবং মেন্টর পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় চমৎকার কবিতা লিখত। ততোধিক ভালো লিখত গদ্য। ওর একটা কবিতা স্মৃতি থেকে এখানে লিপিবদ্ধ করে রাখি :

 

ভ্রমণকাহিনী জুড়ে উপবাস গল্প হয়ে থাক।

বাস রাস্তার থেকে কাঁটাঝোপ থাক একটানা

আর নদীর সমীপস্থিত নিরালম্ব খড়ের ছাউনি

হাতে তুলে দিক মদ, তুলে দিক নিঃসঙ্গতা

তোমার না–আসা হেতু দুঃখবোধ গাঢ় হোক খুব

বেশ কিছুকাল বাদে নিজের মতন বাঁচা যাবে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমণ্ডলের বাইরের কবিবন্ধুদের মধ্যে ছিল প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপু চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলীপ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে এমএ বা  পিএইচডি করে। আমরা তখন একটা পত্রিকা করতাম। ‘শব্দ’। আর কবিতা লিখতাম মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পত্রিকা ‘অরণি’তে আর সুমিত চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘এ সময়’ পত্রিকায়। ‘এ সময়- এ  প্রকাশিত আমার লেখা একটি কবিতা পড়ে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নাকি ভারী প্রশংসা করেছিলেন। সুমিতদা, যতদূর জানি, এ বছরই মারা গেলেন। ‘এ সময়ে’-ই আমি কবিতা লিখে লেখক জীবনের প্রথম  উপার্জন করি। অতুলনীয় দশটাকা। খামে-পোরা।

 

দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি। শুরুর পাতা
দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি। শেষের পাতা

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছেলের সঙ্গে একবার পুজোয় ওদের গাড়িতে করে কয়েকজন বন্ধু ঘুরতে বের হই। ঘুরতে গিয়ে অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারে নতুন সঞ্চয় হয় দুই জাতের মহুয়া। একটি ফুলের একটি ফলের। ফুলেরটায় গন্ধ বেশি, ফলেরটায় নেশা বেশি। বেড়াতে গিয়ে ঈশ্বর ভরসায় কটিমাত্রবস্ত্রাবৃত হয়ে গিরিডির উশ্রী ঝর্ণায় লাফিয়ে পড়ি। আরেকবার একটা কাণ্ড করেছিলাম, বন্ধু বাবুলকে সঙ্গে নিয়ে ভরা বর্ষায় মাঝিনামক ঈশ্বরসম্বল নৌকোয় মাতলা নদীর মাতাল জল এপার ওপার করেছিলাম। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও মাঝে হঠাৎ আমাদের কবিতা পাঠের আড্ডা জমত, তাঁর ছেলের ঘরে। এমনও হয়েছে, আমরা ওদের বৈঠকখানা দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ছি তাঁর ছেলের ঘরে, ওদিকে বৈঠকখানায় অভিনেতা হয়ত তখন রিহার্সালে মগ্ন। এই গল্পগুলো কী বলো তো ? এগুলো হল ইংরেজিতে যাকে বলে বাস্কিং ইন রিফ্লেক্টেড গ্লোরি। আমি বলি, অন্যের পারফিউমে নিজের ঘাম লুকনো। মফসসল আসলে এক দৃষ্টিভঙ্গির নাম যা আমি এখনও পরিত্যাগ করতে পারিনি। সহ্য যদি কর, তাহলে আরেকটু বলি। স্বনামধন্য মঞ্জুশ্রী চাকি সরকারের কন্যা রঞ্জাবতী। আমাদের সহপাঠিনী। দুরন্ত নাচত। অভিনয় করত। ইংরেজিতে কবিতা লিখত। আমাদের দু-বছরের ছোটো মৌসুমী ভৌমিক তখনও গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নয়। মৌসুমী পরে বার তিনেক শিলচর এসেছে, গানের খোঁজে। প্রায় প্রতিবারই আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে।

মৌসুমী ভৌমিকের লেখা প্রবন্ধে উদ্ধৃত

 

জয়দেব বসু আর সুতপা এসেছিল এম এ পড়তে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। ওদের দুজনকে দেখে আমার মনে হত সাক্ষাৎ অ্যাডাম আর ইভ, ঈশ্বরের বাগান থেকে নেমে এসেছে। পিজি হস্টেলে আমি প্রথমদিকে সিট পাওয়ার আগে গেস্ট হয়েছিলাম আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ইউসুফের। ওই ঘরের ঠিক উল্টোদিকের ঘরে থাকত জয়দেব। তখন জয়দেব ওই ঘরে বসেই মেঘদূত লিখছিল। যে মেঘদূত পরবর্তীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তুমুল প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল।

কবিবান্ধবী সুতপা সেনগুপ্তর সঙ্গে । ছবি ঋণ: তমোজিৎ সাহা।

 

৩১.দারুহরিদ্রা :- আমরা শুনেছিলাম আপনাদের সময়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ যাদবপুরে পড়তেন, আপনার কোনও স্মৃতি মনে পড়ে কি?

অমিতাভ :- ঋতুপর্ণ ঠিক তেমন আড্ডাবাজ ছিল না। আমাদের বছর দুয়েকের জুনিয়র হবে। ঋতুপর্ণর অকালমৃত্যুর পর আমরা কয়েকজন বন্ধু ও বান্ধবী নিজেদের মধ্যে ফোনালাপে হঠাৎ মনের কোণে খুঁজে পাই তাঁর সেই বয়সের আবছা চেহারাটি। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঋতুপর্ণ সম্ভবত নিজের প্রতিভাকে একটু লুকিয়ে রাখত। যাদবপুরের ছাত্রদের মধ্যে আমাদের সময়ের  সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ঋতুপর্ণ। ঠিক তেমনি আমাদের পরবর্তী সময়ে যাদবপুরের ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব কালিকাপ্রসাদ ।

৩২.দারুহরিদ্রা :- যে বয়সে যে কোনও ছোটো শহরের তরুণ কিংবা তরুণী বড় পরিসর পাওয়ার জন্য মহানগরের দিকে ছুটে যায় সেই বয়সে আপনি কেন শিলচর ফিরে এলেন?

অমিতাভ :- আমি কলকাতা ছেড়ে ফিরে এসেছিলাম ভয়ে। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেশা করতে করতে, টানা চারদিন চাররাত হস্টেলে নেশা করতে করতে চতুর্থ মধ্যরাতে আমার চোখের সামনে পাগল হয়ে যায়। ও যে ঠিক কখন পাগল হয়েছিল তা এখনও আমি আবিষ্কার করে উঠতে পারিনি। খালি বিস্মিত হয়েছিলাম ওর ব্যবহারের বদল দেখে। স্বাভাবিকতা ও পাগলামির মাঝখানের সুতোটা যে সত্যিই খুব পলকা তা আমি সেই প্রথম বুঝতে পারি। এও অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারে একরকমের সঞ্চয়-ই, কী বলো?

তবে পরদিন ওকে ওর মা-বাবার কাছে পৌঁছে দিয়ে এসে আমি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিই যে এম এ পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা ছাড়তে হবে। এভাবে ভেসে গেলে আমার অন্তত চলবে না। এই আমার প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস। আমাদের প্রজন্ম আসলে বখে যায়নি। ভেসে গিয়েছিল। একধরনের অবসাদে। এর আগের দশকটাই ছিল মুক্তির দশক। আন্দোলনের দশক, আলোড়নের দশক, মৃত্যুর দশক, হত্যার দশক, প্রতিবাদ আর উত্তেজনার দশক। আর উত্তেজনা থিতু হলেই যা আসে তার নাম অবসাদ। যে কোনও উৎসব-শেষের ফাঁকা প্যান্ডেলের মতো। আমাদের নেশাগ্রস্ততা ছিল একটি সময়ের রাহুগ্রাস। একধরনের আত্মধ্বংস প্রবণতা। হয়ত এজন্যই আমাদের প্রজন্ম বড় বেশি ক্ষীণায়ু। আমার কাকা অমিয় দেব আমাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। প্রথমত আমি থাকতাম হস্টেলে, তাঁর দৃষ্টিসীমার বাইরে। দ্বিতীয়ত স্নাতকোত্তর স্তরের একটি তরুণ তো আর বালক নয়! আমি অনেকদিন আগেই তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। সময়ের প্রবণতা আদ্যন্ত গ্রাস করে ফেলছিল আমায়।

গ্রহণের সেই ঘোর থেকে যে শেষপর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম তা আমার এই কাকারই স্নেহ আর শুভকামনায়। কাকা আমায় কিছু পাইয়ে দেন নি। অর্জন করার সাহসটুকু দিয়েছিলেন। ক’জনের ভাগ্যে তা জোটে, বলো তো ? তাই, এই পাইয়ে-দেয়ার যুগে আমার নিজেরই নিজেকে পৃথিবীর ইনসাইডার মনে হয় না। মনে হয় আউটসাইডার । বেড়াতে এসেছি ।

ভিডিও সৌজন্য : ইউটিউব
Tags: অমিতাভ দেব চৌধুরীউত্তর-পূর্বধারাবাহিক সাক্ষাৎকার
Previous Post

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় || দ্বিতীয় পর্ব

Next Post

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || পঞ্চবিংশতি পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
প্রবুদ্ধসুন্দর কর || পঞ্চবিংশতি পর্ব

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || পঞ্চবিংশতি পর্ব

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath