Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home গদ্য

প্রবুদ্ধসুন্দর কর || অষ্টাবিংশতি পর্ব

নীল উপত্যকার রাখাল || অষ্টাবিংশতি পর্ব

Daruharidra by Daruharidra
25/07/2021
in গদ্য
1
প্রবুদ্ধসুন্দর কর || অষ্টাবিংশতি পর্ব
297
VIEWS

২৬.

একদিন শোনা গেল, ফোর্থ পিরিয়ডের পর আর ক্লাস হবে না। কেরালা থেকে জাগলারদের একটা দল এসেছে স্কুলে। ভোজবাজি দেখাবে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের ভিতরের মাঠের চারদিকে বারান্দায়। স্যার-দিদিমণিরাও ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাজিকরদের সবাই খেলা দেখানোর উপকরণ নিয়ে মাঠে নেমেছে। জাগলিং আমি আগেও দেখেছি সার্কাসে। আমার শৈশবে আমি দুটো সার্কাস দেখেছি। আগরতলা আস্তাবল মাঠে দ্য গ্রেট ইন্দিরা সার্কাস। তখন আমি খুবই ছোটো। পরে আরেকটু বড়ো হয়ে চিলড্রেন্স পার্কে অলংকার সার্কাস। সার্কাসে আমার প্রিয় খেলা ট্রাপিজ। দুয়েকজন ক্লাউনও ট্রাপিজে থাকত। বেশ রুদ্ধশ্বাস খেলা। সৈয়দ শামসুল হকের চিরস্মরণীয় সনেটের একটি পংক্তি প্রায়ই মনে পড়ে—

এ বড়ো দারুণ বাজি, তারে কই বড়ো বাজিকর

যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর।

খেলার শুরুতেই একজন বাজিকর সোনালি রঙের হালকা ধাতব বল নিয়ে লোফালুফির খেলা দেখাল। প্রথমে দুটো বল একহাতে নিয়ে লোফালুফি। এরপর শুরু হল দুহাতে তিনটি বল নিয়ে লোফালুফি। এভাবে চারটি। পাঁচটি। এরপর শুরু হল মার্বেল নিয়ে ভারসাম্য ও নিশানাভেদ। একজন জাগলার কপালে একটি মার্বেল রেখে আরেকটি মার্বেলকে শূন্যে ছুড়ে দিল। অব্যর্থ ভাবে শূন্যে ছুড়ে দেওয়া মার্বেলটি নীচে নেমে এসে জাগলারের কপালে রাখা মার্বেলটিকে স্পর্শ করল। খেলা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। শেষের দিকে দলের সর্দার গোছের একজন বেশ কয়েকটি ছোটো ছোট তরোয়াল বের করে মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মুখ হাঁ করে একটার পর একটা পেটের ভেতর চালান করে দিতে শুরু করল। ছাত্রছাত্রীদের সবার মধ্যেই টানটান উত্তেজনা। হঠাৎই আরে আরে আরে বলে কয়েকজন বড়ো ক্লাসের ছাত্রী বারান্দার এককোণে ছুটে গেল। আমাদের সহপাঠী উমা তরোয়াল গিলে ফেলার খেলা দেখতে দেখতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। উমা কন্ট্রাক্টর চিত্ত দেবের মেয়ে। ওর আরও দুটো বোন আমাদের নীচের ক্লাসে পড়ত। সব ক-টি বোনই রোগা ও দুর্বল। মনে হত জোরে হাওয়া বইলেই পড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত মাথায় ও চোখেমুখে জল ছিটিয়ে উমার জ্ঞান ফেরানো গেল।

স্কুলের প্রেয়ারের পর একদিন দেখলাম বাবার রুমের সামনে ফর্সামতো এক ভদ্রলোকের সঙ্গে বাবা হেসে হেসে কথা বলছেন। লোকটি ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা। চোখে কালো ফ্রেমের মোটা চশমা। গলায় তুলসীর মালা। সন্ধ্যায় ভদ্রলোকের পরিচয় জানতে চাইলে বাবা বললেন, আরে উনি আমার বন্ধু। আমরা হিন্দি ট্রেনিং নিয়েছি একসঙ্গে। সোনাচাঁদ সিংহ। কৈলাসহরে থাকেন। আমাদের স্কুলে ছাত্রীদের নিয়ে ব্রতচারী ক্যাম্প করতে এসেছেন। এবার মনে পড়ল। বাবার হিন্দি ট্রেনিংয়ের বন্ধুদের অনেকের নামই আমি জানি। কয়েকজনকে দেখেও ছিলাম। এর মধ্যে কৈলাসহরের গোলদারপুরের হরিপ্রিয়া সিংহকে বাবা বড়দি ডাকতেন। আমি বড়দিপিসি ডাকতাম। ছোটোবেলায় আমার ধারণা ছিল, হরিপ্রিয়া সিংহ আমার নিজেরই পিসি। আমাদের অভয়নগরের বাড়িতে কত এসেছেন। আগে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এমনই ছিল। তখন আগরতলা হিন্দি কলেজের প্রিন্সিপাল শিখর চাঁদ জৈন। জৈনসাব নামেই সবার কাছে পরিচিত। খুবই অমায়িক মানুষ ছিলেন। ত্রিপুরায় শিক্ষাবিস্তারে তাঁর অনেক অবদান ছিল। বাবা তখন হিন্দি কলেজের লেকচারার। জৈনসাহেবের স্ত্রী মল্লিকা জৈন ছিলেন বাবার সঙ্গে হিন্দি ভাষা ও সাহিত্যের ট্রেনি। পরীক্ষায় কম্পিটিশনে বাবার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারতেন না। তদানীন্তন চিফ সেক্রেটারি, পরে সেবির চেয়ারম্যান দামোদরন বাবার ছাত্র ছিলেন। বাবার সঙ্গে সেইসময় হিন্দি ট্রেনি কয়েকজনের মজার গল্প শুনেছিলাম। তখন শর্মা ম্যাডাম নামে হিন্দি কলেজে এক অবাঙালি অধ্যাপিকা ছিলেন। সাতের দশকে ফর্সামতো, কোঁকড়ানো চুল যে ভদ্রমহিলাকে আগরতলার রাস্তায় স্কুটার চালাতে দেখা যেত, তিনিই সেই শর্মা ম্যাডাম। একবার হিন্দি ট্রেনিরা কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। বিলোনিয়ার এক বয়স্ক হিন্দি ট্রেনি ছিলেন জনৈক লস্কর। বিক্ষুব্ধ ট্রেনিদের শর্মা ম্যাডাম বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বলছিলেন, ভাইয়োঁ হম সব মিলকে বাতচিৎ কর সকতে হ্যায়। সেই লস্কর এতটাই উত্তেজিত ছিলেন, চিৎকার করে বলছিলেন, নহি ম্যাডাম। পহলে চিৎ। ফির বাত। হিন্দি ট্রেনিংয়ের  বাবার ব্যাচমেট বিকাশ চক্রবর্তী ও সোনাচাঁদ সিংহকে নিয়েও মজার মজার গল্প চালু ছিল।

ব্রতচারী মূলত লোক আঙ্গিকে নৈতিক চরিত্র গঠনের একটি দর্শন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় গুরুসদয় দত্ত এর প্রবর্তন করেন। গুরুসদয় ছিলেন আদর্শবান কংগ্রেসি। তাঁর জন্ম ১৮৮২ সালের ১০ মে সিলেটের বীরশ্রী গ্রামে। বাঙালির গানে নৃত্যে বীরত্বব্যঞ্জক ধারা নিয়ে আসার জন্যে তিনি নিজেও কিছু গান ও ছড়া লেখেন। বাবার মুখে ছোটোবেলায় ব্রতচারীর একটি গান প্রায়ই শুনতাম—

চল্ কোদাল চালাই ভুলে মানের বালাই

ঝেড়ে অলস মেজাজ হবে শরীর ঝালাই

যত ব্যাধির বালাই বলবে পালাই পালাই

পেটে ক্ষুধার জ্বালায় খাব ক্ষীর আর মালাই…

গুরুসদয় দত্ত যখন বীরভূমের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, বীরভূমের লেঠেলদের তেল মাখানো সড়কি রায়বাঁশ ও তাদের রায়বেঁশে নৃত্য দেখে সেই মেজাজ নিয়ে আসেন ব্রতচারীর লাঠিনৃত্য ও কাঠিনাচে। লোকসংস্কৃতি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ইন্ডিয়ান ফোক কালচার অ্যান্ড ফোকলোর মুভমেন্ট নামে একটি বই লিখেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ১৯৪১ সালের ২৫ মে তাঁর মৃত্যু হয়। কোলকাতাতে গুরুসদয় দত্তের একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। আগরতলার ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ গুপ্তের মা বেবী দত্ত ও খালেদ চৌধুরী ছদ্মনামের বিখ্যাত প্রচ্ছদশিল্পী চিররঞ্জন দত্ত গুরুসদয় দত্তেরই বংশলতিকার।

সোনাচাঁদ সিংহের জন্ম সিলেটের ঘোড়ামারা গ্রামে। পড়াশোনা কৈলাসহরের আর কে আই ইনস্টিটিউশনে। মনুভ্যালি গার্ডেনেও চাকরি করেছিলেন কিছুদিন। এরপর শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেন। তখন ত্রিপুরা সরকার বিভিন্ন স্কুলে ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ব্রতচারী দর্শন ও শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের পরিকল্পনা নেয়। সোনাচাঁদ সিংহকেও ব্রতচারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রায় পনেরো দিনের প্রশিক্ষণের পর আমাদের স্কুলে ব্রতচারীর অনুষ্ঠান করেছিলেন। বিভিন্ন ক্লাস থেকে পনেরো জনের মতো ছাত্রীদের বেছে নিয়েছিলেন। স্কুলমাঠেই মহড়া। সংগীত ও নৃত্য বংশপরম্পরায় মণিপুরি ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের রক্তে। এর হয়তো একটা বড়ো কারণ রাস। বৈষ্ণব ভাবধারা প্রবর্তনের পর থেকেই এই উৎসব মণিপুরের ঐতিহ্য। পরবর্তী সময় মণিপুরের রাজকুমারীর ত্রিপুরার রাজপরিবারে বিয়ের মাধ্যমে ও দুই সম্প্রদায়েরই পূর্ববঙ্গ হয়ে ধলাই উপত্যকায় অভিবাসনের কারণে এই রাসোৎসব এখনো অম্লান। হালাহালিতে রাস উৎসবে ও যাত্রাপালায় শিল্পীকে টাকা দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধতার সম্মান জানানোর রেওয়াজ ছিল। যাত্রাপালায় তো কোনো কোনো দর্শক মঞ্চে উঠে গিয়ে অভিনেতা বা অভিনেত্রীর পোশাকেই সেফটিপিন দিয়ে টাকা গেঁথে দিতেন। ব্রতচারীর অনুষ্ঠান হয়েছিল স্কুলের ভেতরের মাঠে। ছাত্রছাত্রীরা বারান্দায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে। দেখতে ছোটোখাটো ক্লাস সেভেনের রাসমণি ও স্নিগ্ধাকে রাখা হয়েছিল সামনের সারিতে। এই দুটি মেয়ের উপস্থাপনা এত ভালো হয়েছিল, সিনিয়র দাদাদের বেশ কয়েকজনকেই বারান্দা থেকে নেমে ওদের কাছে গিয়ে টাকা রেখে আসতে দেখে আমার ভেতরেও টাকা দেওয়ার ইচ্ছে কাজ করল। বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে এনে আমিও রেখে এসেছিলাম।

ধলাই নদীতে তখনো ছোটো নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছশিকার করত। তবে পানবোয়া ও চানকাপ এলাকায় ছোটো ছোটো জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করা হত। মাছের স্থানীয় চাহিদা মেটাতেই সেইসব  উৎপাদন ফুরিয়ে যেত। হালাহালি ও এরারপার এলাকায় সম্পন্ন কৈবর্ত পরিবারগুলো পেশা হিসেবে ব্যবসাকেই বেছে নেন। দীর্ঘদিন বসবাসের পরেও কথায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টান ছেড়ে যায়নি। ধলাই উপত্যকার কৈবর্তরা সিলেট হবিগঞ্জ থেকে খুব একটা আসেননি। এরা এসেছিলেন আশুগঞ্জের দক্ষিণে মেঘনা নদীর তীরবর্তী লালপুর থেকে ও কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার শিংপুর থেকে। শিংপুরে ধনু নদী মেঘনা’র একটি শাখা। ধনু নদীর আরেকটি নাম ‘ঘোড়াউত্রা’ যে নদীশাখা কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার সাথে সুনামগঞ্জকে যুক্ত করেছে। পূর্ববঙ্গে কৈবর্ত ও নমশূদ্রদের মুসলমানেরাও সমঝে চলত। শিলাইদহে এক শ্রেণির মুসলমান প্রজাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের মোকাবেলার জন্যে রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েকঘর নমশূদ্র প্রজাদের এনে বসিয়েছিলেন।

কৈবর্তেরা ভারতবর্ষের প্রাচীন সম্প্রদায়। কঃ শব্দের একাধিক অর্থের একটি অর্থ জল। জলে আবর্তিত মনুষ্যগোষ্ঠীই কৈবর্ত। গীতার ধ্যানে একটি শ্লোকে পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ বা কেশবকে কৈবর্ত অর্থাৎ মাঝি বলা হয়েছে। রামায়ণের অযোধ্যা কাণ্ডের ৮৪ নং অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে কৈবর্তদের উল্লেখ আছে। পিতৃসত্য পালনের জন্যে রামচন্দ্র যখন রাজ্য ছেড়ে বেরিয়ে বন্ধু গুহক নিষাদের কাছে ছিলেন, ভরত তখন রামচন্দ্রকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে সেখানে এসেছিলেন। ভরতের আসার খবর পেয়ে গুহক অমঙ্গল আশঙ্কা করে পাঁচশো কৈবর্ত যুবককে বহন করতে পারে এমন একটি নৌকা নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে এই মৎস্যজীবী সম্প্রদায় কেওট নামেই পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে কৃষিজীবীদের মাহিষ্য বা হেলে কৈবর্তও বলে। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে উত্তরবঙ্গে বা বরেন্দ্রভূমে কৈবর্ত্য বিদ্রোহ হয়েছিল। সে বিদ্রোহে অত্যাচারী রাজা দ্বিতীয় মহীপালকে পরাজিত করেছিলেন কৈবর্তবীর দিব্য বা দিব্বোক। সেই যুদ্ধে রাজা দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন। সমগ্র বরেন্দ্রভূমের অধীশ্বর হন দিব্বোক। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত মানস গ্রন্থে এই কৈবর্ত বিদ্রোহের বিস্তারিত বিবরণ আছে। কোনো একসময় চরম সংকটের মুহূর্তে বঙ্গের প্রজারা সম্মিলিতভাবে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। সেই প্রজারাই পরবর্তী সময়ে দিব্বোককে রাজা হিসেবে বরণ করেন। দিব্বোকের উত্তরাধিকারী রুদোক ও ভীম বরেন্দ্রভূমি শাসন করেছিলেন। রাজা ভীম যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে দ্বিতীয় মহীপালের উত্তরাধিকারী রামপাল মিত্র অভিজাতদের সহায়তায় ভীমকে পরাস্ত করেন। ভীমকে পরিবারসমেত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে কৈবর্তদের সম্পর্কে অচ্যুত চরণ লিখেছিলেন, মি. রিজলী সাহেবের মতে ইহারাই বাঙ্গালার আদি অধিবাসী। ইহারাই জালিক দাস। আসাম প্রভৃতি স্থানে হালিক নামক তাহাদের আরেক শ্রেণি আছে। ক্ষত্রিয় পিতা ও বৈশ্য মাতা হইতে ইহাদের উৎপত্তি ও তীবর সংসর্গে ইহাদের পাতিত্য কথিত হইয়াছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখ আছে—

সদ্যঃ ক্ষত্রিয়বীজেন রাজপুত্রস্য ষোষিতি।

বভূব তীবরশ্চৈব পতিতো জারদোষতঃ।।

ক্ষত্রিয়ের ঔরসে রাজপুত রমণীর গর্ভে এই তীবর জাতির সৃষ্টি। জারদোষবশত এরাও পতিত। তীবর শব্দের অর্থ ক্ষত্রিয়ের ঔরসে রাজপুত রমণীর গর্ভজাত সন্তান।

ধলাই নদী উপত্যকায় কমলপুর মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মেঘনা নদী সংলগ্ন অঞ্চল থেকেই এরা চলে এসেছিলেন। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়লে এরা কমলপুর মহকুমাতে চলে এসেছিলেন। অনেকে থেকেও গেছিলেন। কমলপুর মহকুমার চুলুবাড়িতে কৈবর্ত পরিবারের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও দারাং, মরাছড়া, পঞ্চাশি, হালহুলি, মানিকভাণ্ডার, মেথিরমিয়া, হালাহালি, চানকাপ, শান্তির বাজার, কচুছড়া, সালেমার পূর্বদিকে ডাববাড়ি এলাকায় কৈবর্তেরা বসতি স্থাপন করেছিলেন। যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে টাকাকড়ি বেশি আনতে পেরেছিলেন, তারা প্রধান সড়কের কাছাকা‌ছি জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেছিলেন। বাকিরা একটু ভেতরের দিকেই চলে যান। চুলুবাড়ির কৈবর্তদের বেশিরভাগই অবশ্য পরবর্তী সময় চাষবাসের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কুলাইয়ের কচুর মতোই চুলুবাড়ির বেগুনের বেশ কদর। কৈবর্তেরা কঠোর পরিশ্রমী। জেলে, মাঝি, মালো বা মল্লবর্মনেরা কৈবর্ত সম্রদায়ের। যদিও মহকুমায় মল্লবর্মন পদবির লোকজন বিশেষ নেই। মল্লবর্মন বা মালোদের পেশা ছিল শুকনো মাছ বা শুঁটকি তৈরি করা। শুঁটকি উৎপাদনের এলাকাটিকে বলা হয় খলা। মাসের পর মাস খলাতে থেকে মালোরা মাছ কেটে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করতেন। ধলাই উপত্যকার কৈবর্তরা আড়ম্বরের সঙ্গেই মনসাপূজা করেন। দুর্গাপূজা ছাড়াও তাদের সর্বজনীন আরেকটি উৎসব শীতকালে হরিনাম সংকীর্তন।

ক্রমশ…

Tags: আত্মজৈবনিক গদ্যউত্তর-পূর্বধারাবাহিক গদ্যনীল উপত্যকার রাখালপ্রবুদ্ধসুন্দর কর
Previous Post

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || চতুর্থ পর্ব

Next Post

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় || চতুর্থ পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় || চতুর্থ পর্ব

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় || চতুর্থ পর্ব

Comments 1

  1. চঞ্চল চক্রবর্তী says:
    11 months ago

    আগের বেশ টানটান গতিময় পর্বের পর এই পর্ব তুলনায় সামান্য শ্লথ। অসুস্থ শরীরে যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করে এই লিখে চলাকে কুর্নিশ।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath