ছোট বয়স একরকম, তবে একটু বড় হয়ে জগৎ খাঁ সাহেবের জীবনের অদ্ভুত কাহিনীটিকে আমার ঠিক ভূত বা অশরীরী আত্মার গল্প বলে মনে হয়নি। বরং বেশি মনে হয়েছে অন্ধকার আর অপরিচয়ের গল্প বলে। ঘটনাটার পেছনে কতটুকু ইতিহাস আর কতটুকু মিথ জানি না, তবে একটা কথা তো ঠিক, সব মিথের পেছনেই লুকিয়ে থাকে অপরিচয়ের অনাস্বাদিত অন্ধকার। আর আরও ভিতরে, হয়ত, থাকলেও থাকতে পারে এক অন্য আলোর উদ্ভাস, যা বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে ঠিকরে বেরিয়েও আসতে পারে।
জগৎ খাঁ-এর ছেলে উপেন খাঁ ছিলেন সেকালের এল-এম-এফ ডাক্তার। তাঁর বাবার জীবনের রহস্যময় ঘটনাটি তাঁকে, তাঁর জীবন যাপনকে সংযত করেছিল মনে হয়। আ্যডভেঞ্চারের দিকে, অপরিচয়ের দিকে, অজানার দিকে তাঁকে কোনোদিন কেউ পা বাড়াতে দেখেনি। তবে প্রেম করতে না পারার অক্ষমতায় বা সামাজিক বিধিনিষেধের শিকার হয়ে এক অপরিচিতাকে সম্বন্ধ করে বিয়ে করতে হয়েছিল শুধু। যাই হোক, এল-এম-এফ পাশ করে এসে তিনি রাজ এস্টেটের ছোট ডাক্তারের চাকরিতে বহাল হয়ে যান। সাথে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও চলছিল। ছোটবেলায় নিজের চোখে তাঁর ডাক্তারি দেখেছি। চেম্বারের পেছনে একটা ছোট্ট খোপঘর— সেটাই ছিল তাঁর নিজস্ব ল্যাবরেটরি। লাল-নীল মিক্সচার বানিয়ে সরু ফানেলে ধরে উল্টো করে সযত্নে রুগীর গলায় ঢেলে দিতেন। রুগ্ন ছিলাম বলে আমাকেও সে মিক্সচার ঢোক ঢোক ক’রে গিলতে হয়েছে বহুবার।
মজার ব্যাপার, যখনই তিনি তাঁর বাড়ির বহির্মহলের বারান্দার খোলা চেম্বারে বসতেন, মুসলমান রুগীদের স্রোত বয়ে যেত। তাঁর খাঁ উপাধি, সন্দেহ নেই, মুসলমান সমাজে তাঁর পসার বৃদ্ধিতে প্রভূত অবদান রেখেছিল। ব্যবসা তিনি বেশ ভালোই বুঝতেন, ফলে তাঁর হিন্দু ব্রাহ্মণত্ব রোগীদের সমক্ষে কদাচ প্রকাশ করতেন না। গলার পৈতেও যথাসম্ভব লুকিয়েই রাখতেন, এরকম শুনেছি। চেহারায় একটা পাঠান সুলভ ভাবও তো ছিল, ঠিক তাঁর বাবা জগৎ খাঁর মতো! রুগীদের মিক্সচারই শুধু নয়, সাথে হলুদ-সাদা বড়িও দিতেন, যা সেবন করে দিব্যি সুস্থ হয়ে উঠত তাঁরা।
যা বলছিলাম, পরিচয় এক জিনিস, সম্যক পরিচয় আরেক। পরিচয়ের অনেক পরত থাকে। আপাত পরিচয়ের ভিতরেও লুকিয়ে থাকে কতো অপরিচয়, কতো ছলনা। জীবনের বাঁকে বাঁকে অপেক্ষায় থাকে কতো না-দেখা, না-জানা, না-বোঝা বিষয়, এমনকি নির্বিষয়ও। সহজে তো দেখা হয় না। কী করেই বা হবে? কুলুঙ্গিতে কী রাখা আছে, তাই ভুলে যায় মানুষ! কতো তালপাতার, সাঁচিপাতের পুথি, লেখাজোখার কতো শজারুর কাঁটা অপরিচিতির অন্ধকারে হারিয়ে গেছে, তারই ইয়ত্তা নেই। তবে কারুর কারুর জীবনে ডাক আসে— কোনও বিচিত্র মুহূর্তে অঘটন ঘটে যায়। পথে হয়ত শামুকে পা কেটেছে, রক্ত ঝরছে, আবার চোখ তখন চলে যাচ্ছে পাশের ডোবায় ফুটে থাকা শাপলার সারিতে আর অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতে হচ্ছে সেই অপরূপ আলো। কেন হয় এমন? টিনের চালের খোপে যে চড়ুই দম্পতি বাস করে, কোনও ঝড়ের রাতে তাদের ভয়-বিহ্বল ডানার সাথে ঘটতে কি পারে না এক ঘন, নিবিড় পরিচয়? প্রশ্ন ওঠে মনে, সেই অপরিচয়ের, দূরত্বের বিপুল, অপরিমেয় দিগন্তও কি মানুষকে ডাকে? যাই হোক, এই অপরিচয়ের ঘনঘটা সব চাইতে বেশি থাকে বোধহয় ছোটবেলায়।
বেজি পাগলিকে, বেজি পাগলির মাকে তো এমনিতে চিনতামই, কিন্তু প্রকৃত চিনেছিলাম কি? বা চেনার চেষ্টা করেছিলাম, কোনোদিন? কপালে বড় ক’রে গোল সিঁদুরের ফোঁটা, সারাদিন বিভিন্ন জাতের কালাই কুলোয় ক’রে বাছতেন, ঝাড়তেন, রোদে শুকোতে দিতেন; তারপর সেই কালাই নিয়ে হাটে চটের বস্তা বিছিয়ে বসতেন। চোখের সম্মুখে ধূলিধূসর ডালের পসরা, বুকের ভিতরে হয়ত তখনও কবেকার ছেড়ে আসা ঘাট, যাতে ছলাৎ ছলাৎ আছড়ে পড়ছে কালীগঙ্গার ঢেউ। নিজেকেই কি অচেনা মনে হয় না, এরকম মুহুর্তে! সবসময় যে হাটে তিনি নিজেই বসতেন, এমন নয়, কখনও বা তার এক ছেলে বসত, আরেক সুন্দরী মেয়ে ছিল তাঁর, সেও বসত। বাড়িতেও তো কতো কাজ সারাদিন! তবু তার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ ক’রে হয়ত তাঁর মনে কু-ডাক ডাকত আর তখনই সব ফেলেঠেলে খুঁজতে বেরোতেন বেজিকে। এদিকে চড়ুই পাখির ঝাঁক কালাইয়ের দানা খেয়ে সাবাড় করে ফেলছে, সে হুস নেই। মনে আছে, ডোবার পাড়ে দাঁড়িয়ে চিক্কুর পাড়তেন একটানা— বেজি-ই, বেজি-ই, বেজি-ই। অতীতের পাগার থেকে উঠে আসা সেই ডাকও আমি যে শুনতে পাই, একলা দুপুরে, অনাহত নাদের মতো।
উপেন খাঁ ডাক্তারের তিন ছেলে— রুনু, কচি আর ঘোঁতা– তিনজনই চাকরিসূত্রে বাইরে থাকত। বড় দু’জন নৈহাটিতে। ছোট ছেলেও ডাক্তার, সে থাকত বাটানগরে। একমাত্র মেয়ে শ্যামলী, বিয়ে হয়ে বহু বছর ধরে কলকাতাবাসী। বয়সের ভার আর একাকিত্বে ভোগে ভোগে খাঁ সাহেব ও তাঁর স্ত্রী একসময় সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন আর তার অল্প ক’দিনের মধ্যেই গৌরীপুরের সংসারের পাট চুকিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নৈহাটি চলে গেলেন, ছেলেদের আস্তানায়। গোটা বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমাদের বাবার হাতে ছেড়ে দিয়ে। উপেন খাঁ-র বাড়িটা তখন সত্যিই খা-খা করত। ক্রমেই বাড়িটা হয়ে উঠল যেন ভূতের বাড়ি। তবে এর মধ্যেই একটা ব্যাপার হল, আমাদের বহির্মহলের যে ঘরে নিয়ম করে রোজ রাতে গানের আসর বসত, সেটা এবার উঠে এল উপেন খাঁ-এর বেডরুমে। রাত দশটায় শুরু হত জলসা আর চলত অনেক রাত পর্যন্ত। কালাচাঁদ পোদ্দার ধরতেন মান্না দে, একের পর এক… আর একজন ছিলেন, প্রায় অলৌকিক গান ছিল যার গলায়, নাম মতিয়ালাল প্রসাদ। মতিয়ালাল প্রধানত গাইতেন গজল- ঠুমরি ও রাগপ্রধান গান। এই গানের জলসার করুণ পরিণতিও আর এক ইতিহাস। সে কাহিনীও একদিন লিখতে হবে। উপেন খাঁ-এর সাধের কুল বাগানে আমরা পিকনিক করতাম বন্ধুরা মিলে। অতিথি-অভ্যাগতরা, বিশেষ করে সমবায় বিভাগের, কখনও-সখনও এলে, থাকতেন ও-বাড়িতে। উপেন খাঁ প্রথম প্রথম এক-দুবছর অন্তর আসতেন আর যখন আসতেন দীর্ঘদিন ধরে থাকতেন। বাড়ির মায়া তো শরীরের মায়ার মতোই। পরের দিকে সে ক্ষমতাও তিনি হারিয়ে ফেলেন। কারণ তখন তিনি এক ন্যুব্জ, অশীতিপর বৃদ্ধ মাত্র। মনে আছে, একবার তিনি এসেছিলেন ভাস্কর পন্ডা নামের এক উড়ে রাঁধুনিকে বগলদাবা করে। ভাস্কর পন্ডার বয়সও খুব বেশি না, তবে বেশ লম্বা, হাট্টাগোট্টা চেহারা, শ্যামল-সুন্দর মুখশ্রী, আর স্বভাবে শিশুর মতো সরল। কী একটা যেন ছিল ভাস্কর পন্ডার ভিতরে, যার কল্যাণে আমরা সবাই দু’দিনের মধ্যেই তার বন্ধু হয়ে গেলাম। ডাকতামও ভাস্করদা বলে। তাকে থাকতে দেয়া হল খাঁ-বাড়ির বহির্মহলের চেম্বার-সংলগ্ন একটি ঘরে। রাঁধুনি হলেও ভাস্করের ছিল প্রবল ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা। রান্নাবান্নার পর, দুপুর থেকেই মহামায়ার মাঠে আরম্ভ হয়ে যেত লাল-হলুদ ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা, বিশেষ ক’রে হাবলু নামের লোহাপট্টির দিকের আরেক ঘুড়িবাজের সঙ্গে। আমরাও ঘুড়ি ওড়াতাম— আমি আর মৌ, তবে সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার কায়দা কানুন ততো জানা ছিল না। হাবলু আমাদের একের পর এক ঘুড়ি নিতান্ত অবহেলাভরে কেটে দিত প্রত্যেকদিন আর হা হা করে হাসত। কিন্তু ভাস্করদা জানত কী করে সুতোয় মাঞ্জা দিতে হয়। নৈহাটির ছেলে বলে কথা। এরোরুটের সঙ্গে তুঁতে, কাচের গুঁড়ো, আরও যেন কী কী সব মিশিয়ে নিয়ে আগুনে জ্বাল দিতে দেখতাম। তারপর একরকম নীলাভ আঠার মতো তৈরি করে লাটাইয়ে পেঁচানো সুতোয় আগাপাস্তলা লাগাত। আমরা রিলের সুতো হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুলে লম্বা ক’রে টেনে অনেকদূর পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়াতাম। ভাস্করদা তখন সুতোয় মাঞ্জা লাগাত। এভাবেই ওকে আপ্রাণ সাহায্য করতাম আমরা। হাবলুকে যে করেই হোক একটা শিক্ষা দিতেই হবে, মনে তখন শুধু এই এক ভাবনা। এর আগে একবার মহামায়ার মাঠের নাটমন্দিরের ওদিকটায় ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে হাউমাউ কাঁদতে কাঁদতে ভাস্করদাকে ফিরে আসতে দেখেছি। পরে শুনেছি, হাবলুদের দলেরই কেউ ওকে খুব মেরেছিল বিনা কারণে। সে যাই হোক, ভাস্করদা হাবলুর দর্পচূর্ণ করার প্ল্যান কষছে দেখে আমরাও তখন খুব উত্তেজিত।
এদিকে ভাদ্র মাস। বাজারের সব কুকুর-কুকুরীরা সব দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঁশের ঘুণ ধরা চ্যাগাড় দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে, এবাড়ি-ওবাড়ি। আমাদের যা হয়, ওদেরও তো সেটাই হবে, নয়কি? ‘এ ভরা ভাদরে’ হয়ত ওদের অবস্থাও সেই একইরকম ‘ফাটি যাওত ছাতিয়া’। আমরা মানুষকেই বুঝি না আর ওরা তো পশু। কুকুরের ভয়ে স্বাধীন ভাবে হাঁটাচলা করতে পারছি না একদম। তা হয়েছে কি, একদিন দুপুরবেলা গোগ্রাসে দুটো ভাত গিলেই কুকুরের ভয়ে আমি দৌড়ে দৌড়ে চলে গেলাম ভাস্করদার ঘরে। ঘরে ঢুকেই দেখলাম, ছোট্ট একটা কাঠের টুলের ওপর নীলাভ আঠার কৌটো, তখনও একটু যেন গরম, ধোঁয়া-ধোঁয়া। ভাস্করদা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে। জানলার বাইরে একজোড়া সঙ্গমরত কুকুর-কুকুরী। ক’দিন ধরেই প্রত্যক্ষ করছি, কুকুরগুলোর অদ্ভুতভাবে জোড়া লেগে যাওয়ার, জুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। এদিকে মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না কী করে এটা হয়। মনে মনে ভাবলাম, ভাস্করদা না আমার বন্ধু, অতএব জিজ্ঞাসা করেই দেখি না!
তখন আমার কিছু বোঝার বয়সই হয়নি আসলে। জানলার বাইরে আঙুল তাক করে দেখিয়ে দিয়ে বললাম––
ভাস্করদা, ও ভাস্করদা, দেখো না, দুটো কুকুর কেমন জোড়া লেগে গেছে।
ভাস্করদা মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল সে দৃশ্য একবার। গম্ভীর, একটুও হাসল না। মুখে একদম স্বাভাবিক ভাব বজায় রেখেই উত্তর দিল—
ও তুমে বুঝিবি নাহি। একরকম আঠা অছি। ওই আঠা লেগে গেছি।
একথা শুনে আমি তো আরও অবাক, বললাম— আঠা? তা ওরা তো কুকুর! আঠা পাবে কোথায়? আমার বিস্ময়ের ঘোর যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না।
ভাস্করদা এইবার ফিক করে হেসে ফেলল—
ধুর বুকা, এই তো আঠা। মু-ই তো লাগায়ে দিছি– মাঞ্জার আঠা। সকাল থেকে ভৌ ভৌ করিছিলা বড়। মাঞ্জা দোব কি, বড় ডিসটাব করিছিলা। তাই…
মনে ভীষণ জোরে একটা ধাক্কা খেলাম যেন। মাঞ্জার আঠা? ভাস্করদা কিনা দুটো কুকুরের পেছনে লাগিয়ে জুড়ে দিয়েছে? দেয়া যায়, সত্যি! মাগো মা, ভাস্করদা নিশ্চয়ই জাদুমন্তর জানে! থ বনে গেছি একদম।
ভাস্করদা বলে চলে— তুমে দেখিলি ত এই মাঞ্জার কী শক্তি! কাল হাবলুর কী হাল করি সব্বাই দেখিবি এইবার…
হাবলুর আগামীকালের কালো, হেরো মুখটা কল্পনা করে খুব ফুর্তি হচ্ছে। বেশ হবে, এইবার। ব্যাটার খুব বাড় বেড়েছিল। এইবার মজাটা পাবে। নিশ্চিন্ত হয়ে এক দৌড়ে ঘরে ফিরে এলাম আবার। এসেই সোজা নোংরা পায়ে লাফ মেরে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছি, মায়ের পাশে। মা-কে জড়িয়ে ধরে রোজ দুপুরেই একটু ঘুমিয়ে নিই। কিন্তু ঘুম কোথায়? মাথায় তো তখনও মাঞ্জার আঠা ঘুরছে।
মা, তুমি জানো, ভাস্করদা না মাঞ্জার আঠা দিয়ে দুটো কুকুরকে জোড়া লাগিয়ে দিতে পারে! গোল গোল চোখ ক’রে এক নিঃশ্বাসে মা-কে জানাই। মা-র চোখমুখের এক্সপ্রেশনটা এখন আর মনে পড়ে না। তবে আমাকে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে, আঁচলের খুঁট দিয়ে আমার স্যান্ডো গেঞ্জির কোণাটায় গিঁট দিয়ে বললেন— এসব ভাবে না, বাবা, ঘুমোও এখন। তারপর ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি, ব্যবসায়ী কানাইলালের বাড়ির তিনতলার ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে ভাস্করদা আর হাবলুর ঘুড়িগুলো ভোকাট্টা হয়ে নেতিয়ে নেতিয়ে উড়ে যাচ্ছে পুকুর পেরিয়ে, আখড়া পেরিয়ে, সৎসঙ্গ মন্দির পেরিয়ে সোজা ভেড়ভেড়ির মাঠের দিকে।
পরদিন দুপুরবেলায়, ঘুড়ি কাটাকাটি আরম্ভ হতেই ভাস্করদার পাঁচ-পাঁচটা ঘুড়ি হাবলুর ঘুড়ির সুতোর হুড়কো প্যাচে পড়ে পরপর কেটে গেল। কানাইলালের তিনতলা নয়, একটা পচে ওঠা, পূতিগন্ধময় প্রাচীন ইঁদারার পৈঠার ধারে দাঁড়িয়ে প্রাণপনে লাটাই নাচিয়ে, ঘুড়িকে ঘোত খাওয়াচ্ছিল ভাস্করদা। তবু কিছুতেই যেন পেরে উঠছিল না হাবলুর সাথে। দমকা হাওয়ায় তার সুতো-কাটা ঘুড়িগুলো ছিটকে যাচ্ছিল কোন দূরাকাশে।
খানিকটা দূর থেকে হলেও বারবার আমার চোখ চলে যাচ্ছিল ভাস্করদার বিপন্ন, বিষন্ন, ফ্যাকাশে হয়ে ওঠা মুখটার দিকে। পরাজয়ের সঙ্গেও সেই আমার প্রথম পরিচয়।
বিকেলে একবার ভাস্করদার ঘরের দিকে দৌড়ে গিয়ে উঁকি মেরে দেখে এসেছি। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। মাঞ্জার কৌটোটারও দেখি গাল তোবড়ানো— সিঁড়িতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কী করব? শ্লথ পায়ে ফিরে আসছি মনখারাপ ক’রে। পায়ের হাওয়াই স্যান্ডেলও খুলে ছিটকে যেতে চাইছে যেন। হঠাৎ দেখি আমাদের ছোটবেলাকার প্রিয় ‘সাইকেল-কাকু’— সাদা জামা খয়েরি প্যান্ট–টিংটিং বেল বাজাচ্ছে আর থেকে থেকেই সুর ক’রে হাঁক দিচ্ছে— ‘জিনপরী আংটি, মধুমালা লজেন্স’। আজ যে ভাস্করদার খুব মনখারাপ, ঠাকুর! কেন ওকে বারবার হারিয়ে দাও? যাই, মা-র কাছ থেকে বরং দশটা পয়সা চেয়ে আনিগে। ভাস্করদার জন্য এক প্যাকেট ‘জিনপরী আংটি মধুমালা লজেন্স’ যে কিনতেই হবে আজ।
চলুক
থ্যাঙ্কস
Outstanding. আগে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব পড়েছিলাম। আজ ভালো করে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ পর্ব পড়লাম।Brother, I am just falling short of words to express my gratitude to you for bringing in front of me the bye gone days of Gauripur so vividly. In most of the scenes, it was a walk-through of my own past life …. I could relate so easily to my childhood & boyhood days…. বেশির ভাগ নিজ চোখে দেখা, কিছু বড়োদের মুখে শোনা… সব আবার নতুন করে চোখের সামনে ভেসে উঠলো…. বাংলাদেশের যুদ্ধের সময়ের সেই কামানের আওয়াজ, বাড়ির উঠোনে গর্ত করে bunker বানানো, ভেন্টিলেটরের কাঁচে কাগজ স্যাটানো যাতে আলো বাইরে না যায়.. আর সর্বোপরি refugee মানুষের দু্র্দশা… ভাবলে এখনো চোখে জল আনে। আমাদের দাজু পাঠশালায় রিফুজী কি জিনিস অবাক শিশুর চোখে দেখতাম …ঐবার বিজয়া সম্মেলনীতে হরি সভায় মনাইদার গাওয়া ” গভীর রাতে শুনতে পাবে…..কান্না, …. একটু ভাতের ফ্যান দেননা ” ….তোমার মতো আমারও কচি মনে গভীর দাগ কেটেছিল। তোমাদের আর উপেন খাঁর বাড়ি, পেছনের জংগল, বেজী পাগলীর হাসি, ত্রিনেশ দাসগুপ্ত স্যার, শচীন দত্তের দোকান সব আবার হুবহু জীবন্ত হয়ে উঠেছে তোমার অতি সুন্দর বর্ননায়। As if you have given expression in language of my own thoughts… and that shows how big you are as a social writer.. Bravo.. Hat’s off. Keep on writing about our own Gauripur… more about our childhood characters ..big and small, even like” Bulbul chanachurwala” , “Bokabhai”etc. Also write about astrology practised by your father Chuni Chatterjee & Jyatha Moni Chatterjee.. They were famous for it and I remember so many clients of the duo in our family and relatives at that time. I have sent your writings to all my relatives thru whatsApp and they are responding to it positively.
I WILL SURELY BE WAITING FOR YOUR NEXT RELEASE. 💖💖💖