৫৪.দারুহরিদ্রা : আমাদের মনে হয়, আপনার মধ্যে একধরনের ব্যর্থতার অনুভব কাজ করে। এতকিছু লেখার পরেও আপনি নিজেকে একজন সফল কবি বলে ভাবেন না। এটা কি আপনি কোনও পুরস্কার টুরস্কার পাননি বলে?
অমিতাভ : কোনও পুরস্কারই কোনও কবিকে প্রতিষ্ঠা দিতে পারে না। আমি এ কথা বুক ঠুকে বলছি, কারণ আমার একবার সৌভাগ্য হয়েছিল অনুবাদের জন্য সাহিত্য অকাদেমি প্রতিবছর যে পুরস্কার দেয়— তার ফাইনাল জুরি তিনজনের একজন হবার। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে যাব না, তবে এসব পুরস্কার কোনও লেখক বা কবির বই বিক্রির ক্ষেত্রে যতটা জরুরি, তাঁর অমরত্বলাভের ক্ষেত্রে ততটাই অনাবশ্যক।
পুরস্কার পরিচিতি দেয়। খ্যাতি দেয়। সম্ভ্রমের জোগান দেয়। কিন্তু কবিত্বের হানি ঘটায়। একজন প্রকৃত কবি সেলেব্রিটি হতে চান না। আরও ভালো লিখতে চান। ফুরিয়ে যেতে চান না। যে রাস্তায় কেউ এতদিন হাঁটেনি, সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে চান। সাফল্য সন্তুষ্টির বিষ কবিকে দিয়ে পান করিয়ে নেয়। সন্তুষ্টি এসে গেলে একজন কবি ফুরিয়ে যান। মরে যান। তিনি নিজে হয়ত তা জানতেও পারেন না।
আমার ব্যর্থতার বোধই ভালো।
৫৫.দারুহরিদ্রা : আচ্ছা, কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে কি কানেকশনস থাকাটা জরুরি?
অমিতাভ : কোটা সিস্টেমে কবি হওয়া যায় না। কবিত্বহীন কবি ‘সোনার পিত্তলমূর্তি’। যার গলায় সুর নেই তাঁকে কি গায়ক বানানো যায়? যিনি রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যান, তাঁকে কি ডাক্তার বানানো যায়? অথচ আজকাল অনেক সংবাদপত্রওয়ালা, অনেক ফেসবুকওয়ালা একে ওকে ধরে কবি লেখক বানিয়ে দিচ্ছেন!! এ ধরনের কবি লেখক হতে গেলে অবশ্যই কানেকশনসের দরকার।
তবে আমি যাঁকে কবি বলে ভাবি তাঁর কখনও কোনও কানেকশনস লাগে না। তিনি যদি সত্যিকারের কবি হন, তাহলে তাঁর কবিতা একশো বছর বা তারও বেশি সময় ধরে প্রকৃত পাঠকের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে। না হলে তিনি কিসের কবি? কবিতা এবং শিল্পের জগৎ রাজনীতির জগৎ নয়। গণতন্ত্রের জগৎ নয়। এই জগতে গণতন্ত্র অচল। এটা একেবারেই রাজতন্ত্রের জগৎ।
আজ যদি আমার মৃত্যু হয় এবং দৈবাৎ যদি আমি মৃত্যুর পরে কবিদের কোনও অমর সভায় সামান্যতম জায়গাও করে নিতে পারি, তাহলেও আমার কিন্তু জীবনানন্দ দাশের পদস্পর্শ করার অধিকার মিলবে না। রবীন্দ্রনাথের তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি হয়ত বড়োজোর কবি গৌতম বসুর পায়ের কাছটিতে গিয়ে বসার যোগ্যতা লাভ করতে পারি। এইমাত্র।
৫৬.দারুহরিদ্রা : ‘মহিলাকবি’ বলে কি কোটা করে মেধা ভাগ অথবা কবি ভাগ করা যায়?
অমিতাভ : অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক ক্ষেত্রে নারীত্বের অবমাননা ও অসাম্য নির্মূল করার জন্য কোটা প্রথার নিশ্চয় প্রয়োজন আছে। কিন্তু মৌলিক প্রতিভা প্রকাশের ক্ষেত্রে এ রকম কোনও কোটা মোটেই কাজ করে না। করা উচিতও নয়। কোটা প্রথায় মহিলাকবি হিসেবে মেয়েদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণ তো আসলে মেয়েদের প্রতিভারই অপমান করা। একটা যুগে বাঙালি পুরুষরাই মেয়েদের কথা লিখতে জানতেন। সতীনাথের জাগরীর মা-কে মনে পড়ে? অতুলপ্রসাদের অনেক গান তো আসলে নারীজীবনেরই ভাষ্য। মেয়েদের গলায় গীত না হলে এই গানগুলি তাই শুনতে অতটা ভালোও লাগে না। আবার মেয়েরাই তো পারেন ছেলেদের কথা সবচেয়ে সূক্ষ্মভাবে লিখতে। পুরুষমাত্রই তো আর ধর্ষক নয়! পুরুষরা নিজেদের যতটুকু চেনে, মেয়েরা তাদের এর চাইতে অনেক বেশি চেনেন। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে নারীবাদের উগ্রতা কমে এলে পুরুষদের নিয়ে সত্যিকারের মনে রাখার মতো লেখাগুলো মেয়েরাই লিখবেন।
৫৭.দারুহরিদ্রা : মঞ্চের কবি। কবির মঞ্চ। আদৌ জরুরি প্রকৃত কবির জন্য?
অমিতাভ : না, একেবারেই জরুরি নয়। মঞ্চ তো গায়কদের জন্য। অভিনেতা অভিনেত্রীদের জন্য। নৃত্যশিল্পীদের জন্য। রাজনৈতিক বক্তাদের জন্য, ধর্মপ্রচারকদের জন্য, তার্কিকদের জন্য, অধ্যাপকদের জন্য। কবির আসল মঞ্চ তো কাগজ কলম, পত্রিকা, প্রকাশিত বই, পাঠকের মন। তারপরেও মঞ্চে কবিদের গল্পকারদের ডাক পড়ে। সাধারণত শ্রোতাবিহীন প্রেক্ষাগৃহে কবিরা নিজেদের কবিতা নিজেরাই শোনেন। হাততালি দেন। তাঁরা আপনি নাচেন, আপনি গান, আপনিই নিজের হয়ে করতালি দেন। শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামীর মতো পাঠ যেহেতু খুব কম কবিই করতে পারেন, বেশিরভাগ পাঠই হয় নীরস, একঘেয়ে, শ্রবণকটু। তারপরেও মঞ্চ সম্পর্কে কবিদের একটা লোভ থেকে যায়। আমার নিজেরই এককালে ছিল। সেজেগুজে চুলে কলপ দিয়ে মঞ্চে উঠে কবিতা পড়াটাকে মনে হত জীবনের পরম প্রাপ্তি। অনেক জায়গায় কবিতা পড়েছি।
তারপর একটা সময় মনে বিতৃষ্ণা এল। একের পর এক আহ্বান ফিরিয়ে দিতে শুরু করলাম। নানা অছিলায়। অনেক সময় নিজের জায়গায় অন্য কবিকে, অন্য বক্তাকে পাঠিয়ে দিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে মনান্তরের সম্ভাবনাকে নির্মূল করলাম। বিশ্বাস না হলে উষারঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রবুদ্ধসুন্দর কর, সঞ্জয় চক্রবর্তী, প্রসূন বর্মণ, তমোজিৎ সাহাদের জিজ্ঞেস করতে পারো। একান্তভাবে দায়বদ্ধ না হলে আমি আজকাল মঞ্চে যাই না। অনুজপ্রতিম প্রবুদ্ধসুন্দর, বান্ধবী সুতপা সেনগুপ্তর অনুরোধে ২০১১ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে রিফ্রেশার কোর্সে একটি ক্লাস নিতে গিয়েছিলাম। তেমনি, ১৯৯৯ সালের কলকাতা কবিতা উৎসবে তখনও–পর্যন্ত–চূড়ান্ত–মুখচোরা আমি দুই বন্ধু জয়দেব বসু ও রাহুল পুরকায়স্থের চাপে বাধ্য হয়েছিলাম মঞ্চে উঠে দর্শকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিতে। প্রসঙ্গত রাহুল পুরকায়স্থ সাহিত্য অকাদেমির ট্র্যাভেল গ্রান্ট নিয়ে— যা আর কেউ কখনও করে না— ঘুরতে এসেছিল তখনও পর্যন্ত সত্যিসত্যিই ‘কবির শহর’ (এখন আর নয়) শিলচরে। রাহুলের সঙ্গে সেই থেকে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব। রাহুল আমাদের সময়ের অন্যতম প্রধান কবি। এককালে, আবার বলছি, মঞ্চে ওঠার প্রচুর লোভ ছিল। আমাদের মধ্যে মিলনকান্তি দত্ত আর পল্লব ভট্টাচার্যের এরকম লোভ একেবারেই নেই।

আমি বোধহয় এই লোভ এখনও পুরোপুরি জয় করে উঠতে পারিনি। তোমাদের প্রশ্ন আমাকে নিজের মুখোমুখি হতে বাধ্য করল।
৫৮.দারুহরিদ্রা : আপনার বেশকিছু কবিতায় রাজনীতি খুব প্রত্যক্ষভাবে এসেছে। আমরা জানতে চাইছি আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান ঠিক কী?
অমিতাভ : আমার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড তো তোমাদের বলেছি-ই। বামপন্থী বাড়ির ছেলে। দক্ষিনপন্থা আমায় কখনও টানেনি। তবে ভারতবর্ষ বড় বিচিত্র দেশ। এদেশে বামেরও দক্ষিণ হয়, দক্ষিণেরও বাম।

মাঝে মাঝে একা একা রেগে উঠতে বাধ্য হই। প্রেশার বাড়ে। প্রেশার কমাতে কবিতা লিখি। এই আর কী! এ কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে বামপন্থা বিশ্লেষণের নানা কোণ, সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভাবনার জোগান দেয়। আর আমি ঘোষিত বামপন্থী না হলেও আমার বেশিরভাগ বন্ধুই বামপন্থী। বামপন্থার সংস্পর্শে আসার ফলেই তো ভাবনার এরকম বিদ্যুৎ-ঝলক আমি মাঝেমধ্যে খুঁজে পেয়েছি। যেমন, স্টেটসম্যানে প্রকাশিত আমার এই চিঠিটিতে হয়তো বামদর্শনের এই বিশ্লেষণপ্রবণতার প্রভাব আছে।
৫৯.দারুহরিদ্রা : দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক পত্রিকা ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’–এর সাহিত্য পাতার সম্পাদনার দায়িত্বে থাকার পর হঠাৎ করে ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ ছেড়ে দিলেন কেন?
অমিতাভ : আমি একটানা আঠারো বছর দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গের রবিবারের সাহিত্য পাতার সম্পাদনা করেছি। আঠারো বছর অনেক সময়। আজকের যুগে অনেক দাম্পত্যই এতবছর টেকে না। দৈনিক পত্রিকা তো সময়ের আয়না। আর একজন মানুষ তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পছন্দ-অপছন্দকে, নিজের নির্বাচনের ধরনকে ক্রমাগত পাল্টাতে পারে না! কোনও মানুষেরই তাই সংবাদপত্রের মতো একটি মাধ্যমে একটানা বেশিদিন জড়িত থাকতে নেই। তাতে সংবাদপত্রেরই ক্ষতি হয়। আমার মনে হচ্ছিল আমার যা করার ছিল, তা এই দীর্ঘ আঠারো বছরে করা হয়ে গেছে। এখন সাময়িক প্রসঙ্গের রবিবারের পাতার বদল দরকার। আমার সময়ে আমি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলাম ধারাবাহিক রচনা প্রকাশের ওপর। লিটল ম্যাগাজিন একটা মেয়াদের পরে বের হয়। তাতে প্রকাশিত ধারাবাহিক লেখার পুরোনো কিস্তিগুলো পাঠকের স্মৃতিতে থাকে না। তাই দীর্ঘ লেখার একটা সময় পর্যন্ত খুব অভাব ছিল বরাক উপত্যকায়। ২০০৭ সাল থেকে শ্রীমান তমোজিৎ সাহাকে আমার সহকারী হিসেবে পেয়েছি। তমোজিতের হাতেই আমি রবিবারের পাতার দায়িত্ব সমঝে দিয়েছি। তমোজিতের নিজের লেখালেখির চেয়েও সম্পাদনাকর্মের দিকে ঝোঁক বেশি। সে-ই খুঁজে খুঁজে বের করে এনেছে আজকের বরাক উপত্যকার প্রধান দুই কলাম লিখিয়ে-কে। রম্যাণি চক্রবর্তী ও সোমাভা বিশ্বাসকে। আমাদের সময়ে সাময়িক প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি বেরিয়েছে একের পর এক ধারাবাহিক লেখা। সুজিৎ চৌধুরীর দুই পর্বের স্মৃতিকথা ‘হারানো দিন হারানো মানুষ’, ‘অতন্দ্র’-‘ইশারা’-‘ইত্যাদি‘ পত্রিকার নির্বাচিত পুনর্মুদ্রণ, কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের কারাকাহিনী ‘স্মৃতি শুধু জেগে রয়‘, বিজিৎকুমার ভট্টাচার্যর ‘বিকেলের আলো’, বিমল চৌধুরীর ‘আউলা ঝাউলা’, জগন্নাথ চক্রবর্তীর আঞ্চলিক অভিধানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, দেবাশিস তরফদারের কিশোর উপন্যাস ‘শিলং দূরে নয়’, বিজয়া দেবের উপন্যাস, সপ্তর্ষি বিশ্বাসের গোয়েন্দা উপন্যাস, সঞ্জয় ভট্টাচার্যর লেখা পারিবারিক স্মৃতিকথা, হিরণকুমারী দত্তর লেখা কামিনীকুমার চন্দের জীবনী, আমার নিজের লেখা একটি উপন্যাস ও একটি কিশোর উপন্যাস। আরও আরও অনেক ধারাবাহিক লেখা। এ ছাড়া আমরা জোর দিয়েছিলাম চিত্রশিল্পী ও চিত্রশিল্প নিয়ে লেখা প্রকাশের ওপর। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান লেখক ছিল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গণেশ নন্দী। আমি তো এমনকী লক্ষ্মীপুজোর দিন মেয়েদের আঁকা আলপনা দিয়ে পেজ করেছি। বিখ্যাত চিত্রকর বীরেন্দ্রলাল ভৌমিকের নোটবই নিয়ে পেজ করেছি। অনেক প্রয়াত ব্যক্তিত্বের ওপর পেজ হয়েছে। শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, সুজিৎ চৌধুরীর ওপর টানা চারপাতার পেজ করেছি। নর্মাল স্কুল নিয়ে, খাসপুর নিয়ে, কবিগান নিয়ে পেজ হয়েছে। অবশ্যই অধ্যাপক অমলেন্দু ভট্টাচার্যর সৌজন্যে। এ ছাড়া দেবব্রত চৌধুরী ও সন্দীপন ভট্টাচার্যর ফিল্ম স্ক্রিপ্টও ছাপিয়েছি। সিনেমা নিয়ে, শিলচরের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে পেজ হয়েছে।
৬০.দারুহরিদ্রা : আমরা জানি আপনার প্রথম পরিচয় আপনি কবি। কিন্তু কবি হওয়ার পাশাপাশি আপনি একজন কথাসাহিত্যিকও। এবারে কেউ যদি বলেন যে আপনি গদ্য কিস্যু লিখতে পারেন না! তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়াটা ঠিক কী হবে?
অমিতাভ : আমি মেনে নেবো। যে ধরনের গদ্য আমার ভালো লাগে, তা আমি এখনও লিখে উঠতে পারিনি। যেমন, বঙ্কিমবাবুর গদ্য এবং, একেবারেই আলাদা জাতের হলেও, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গদ্য। কমলকুমারের গদ্য। আমাদের দেবাশিস তরফদারের গদ্য। গদ্যে আমি আসলে কবিতারই বীজ খুঁজি। সেদিন হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, দেবাশিস তরফদারের গদ্যে কবিতার মতো লাইন ভাঙা থাকে। সচারচর গদ্য যেভাবে একটানা ছাপা হয়, সেরকম না হয়ে দেবাশিসদার গদ্যে মাঝেমধ্যেই সেন্টার অ্যালাইনমেন্ট থাকে।
আরেকজনের কথা একটু বলি। আমি আসলে এই ইন্টারভিউতে আমার সময়ের কবি-লেখকদের-ই ধরতে চাইছি। আমার অগ্রজ এবং অনুজদের কথা তেমনভাবে বলছি না। শ্যামল ভট্টাচার্য আমার সময়ের একজন প্রধান কথাকার। শ্যামলের অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারকে আমি সত্যিই হিংসে করি। ভারতীয় এয়ারফোর্সে ছিল ও। সিয়াচেন সীমান্তে ছিল। অফুরন্ত তার তথ্য ও নানা রকমের জানার অর্জন। শ্যামলও প্রচুর ভাষা জানে। বাংলা ছাড়া চারটে ভারতীয় ভাষা সে খুব ভালোভাবেই জানে। হিন্দি, পাঞ্জাবী, রাজস্থানী আর ডোগরি। এই শ্যামলই ভালোবেসে আমার একটি গল্প তামিল ভাষায় অনুবাদ করিয়েছিল। বিখ্যাত অনুবাদক সুব্রমনিয়ন কৃষ্ণমূর্তিকে দিয়ে। আরও অনেক গল্পের সঙ্গে।
তবে কিনা আমি প্রচুর ভালোবাসা ও প্রশ্রয় পেয়ে অনেকেরই মাথায় উঠে বসেছি। কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ ও গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্য তাঁদের নির্বাচিত সংকলনে আমার লেখা গল্প ছাপিয়েছেন। আরও দুই কথাকার স্বপ্না ভট্টাচার্য ও শেখর দাশেরও স্নেহ আমার ভাগ্যে জুটেছে। তরুণতর কান্তারভূষণ নন্দী ও মেঘমালা দে মহন্ত তাদের গল্প-পত্রিকায় আমার গল্প ছাপিয়েছে। গৌহাটির জোতির্ময় সেনগুপ্ত ফেসবুকে আমার একটি অতি দীর্ঘ গল্প পাঠ করেছে। সাহিত্য অকাদেমির ১৯৫৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত প্রকাশিত পঞ্চাশ বছরের নির্বাচিত ভারতীয় সাহিত্য সংকলনে শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার-অনূদিত আমার একটি গল্প ছাপা হয়েছে এবং, কী আশ্চর্য, হিন্দু পত্রিকায় ওই সংকলনের রিভিউতে তাবড় তাবড় লেখকদের পাশাপাশি আমার গল্পটি সম্পর্কেও দু-লাইন লেখা হয়েছে। তোমরাই সুযোগ করে দিলে। নিজের ঢাক নিজেই পেটালাম।
আসলে মহাকাল নির্মম। সমকালের স্নেহ-মমতার অনেকখানিই মহাকাল হরণ করে। আমার ওই বড়জোর দু-তিনটে গল্প বেঁচে থাকলেও থাকতে পারে।
যদি আরও বছর বিশেকের আয়ু পাই, নিজের গদ্যরীতিকেও ভেঙে ফেলব। নতুন ছাঁদে বড় একটি উপন্যাস লেখার মাঝেমধ্যেই পরিকল্পনা করি আমি।
৬১.দারুহরিদ্রা : আপনি একজন সিনিয়ার কবি। সেই হিসেবে এখানকার তরুণ কবিদের জন্য কী করেছেন?
অমিতাভ : যে কোনও কবিই যে কোনও কবির প্রতিদ্বন্দ্বী। এ কথা বলে খোদ উৎপলকুমার বসু আমার প্রণাম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘কখনও কোনও কবিকে প্রণাম করবে না।’ তরুণতর বা নতুন কবিরা নিজেদের প্রতিভার জোরে দাঁড়ায়। কেউ কারও জন্য কিছু করে না। কবিতার বইয়ে বিশিষ্ট কাউকে দিয়ে ভূমিকা লিখিয়ে নেওয়ার প্রথাকে আমি তাই অপছন্দ করি। সিনিয়ার কবি কি চাকরির কোচিং সেন্টারের মালিক আর জুনিয়র কবি কি চাকুরিপ্রার্থী? প্রকৃত কবিকে রূপমুগ্ধ সন্ন্যাসী হতে হয়; কখনও ভিক্ষুক হতে নেই।

অষ্টাদশ পর্ব অর্থাৎ এই সুদীর্ঘ ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারের অন্তিম পর্বটি আগামী রোববারে প্রকাশিত হবে।
এদেশে বামেরও দক্ষিণ হয়, দক্ষিণেরও বাম
“Ever tried. Ever failed. No matter. Try again. Fail again. Fail better.”- Samuel Bekette
চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার মধ্যেও এক ধরনের কৃতিত্ব আছে I সাক্ষাৎকারটি উপভোগ করছি I