Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home গদ্য

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় || দশম পর্ব

গদাধরের বাউদিয়া || ধারাবাহিক

Daruharidra by Daruharidra
06/09/2021
in গদ্য
5
শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় || দশম পর্ব
133
VIEWS

 

 

সেকালের গৌরীপুরে দু’জন সাধারণ মানুষ জীবদ্দশাতেই প্রায় কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। একজন পরিচিত ছিলেন ‘আধমনী কৈলাশ’ নামে, অপরজনের নাম ছিল ‘অম্বুরি মশাই’। আধমন চালের ভাত এক বসাতেই গলাধঃকরণ করার ক্ষমতা রাখতেন কৈলাস নামের জনৈক দেহাতি পালোয়ান আর সেটাই তাঁর এহেন নামের মাহাত্ম্য। লম্বা, দৈত্যাকার, পেশীবহুল শরীর। যৌবনে আধমনী কৈলাশ গৌরীপুরের গণেশ আখড়ায় নাম লিখিয়ে কুস্তি ও লাঠিচালনায় বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষমতার সুনজর তাঁর ওপর পতিত হয় এবং ফলস্বরূপে একসময় রাজার কুখ্যাত লেঠেল বাহিনীর দায়িত্বও তাঁর কাঁধেই এসে পড়ে। এ হল সেই লেঠেল বাহিনী, যে বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে আগমনি অঞ্চলের ‘ঘুল্লা বিদ্রোহ’ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল এক কালে। এখনও গৌরীপুরের লাঠিয়ালদের কথা জীবিত অতিবৃদ্ধদের কেউ কেউ বলে থাকেন। জনপ্রিয় একটি ছড়াও এখনও প্রচলিত আছে–

বলরামপুরের বাঁশ

কোচবিহারের রাস

বিজনির মাটি

গৌরীপুরের লাঠি

সে যাই হোক, জীবনের বেলা যখন পড়ন্ত, তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই লাঠিয়ালের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আধমনী কৈলাশ পেশান্তরিত হলেন আর অতঃপর তিনি গ্রহণ করলেন অভিনব এক ভক্ষকের পেশা। এই পেশায় তাঁর একটাই কাজ ছিল— বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে, উৎসব-পার্বণ আদিতে টাকার বিনিময়ে রাক্ষসের মতো কাড়ি কাড়ি ভাত গিলে বেড়ানো। এক সিটিং-এ আধমন চালের ভাত খাওয়া দেখার জন্য প্রচুর লোকের সমাগম হত; কখনও কখনও পয়সা-কড়ি দিয়েও দূর দূর থেকে লোকে এই ‘খেলা’ দেখতে আসত। এই ক্ষমতা ঈশ্বর বোধহয় শুধু ভারতীয়দেরই দিয়েছেন— খাওয়াকেও তাঁরা ‘খেলা’য় পরিণত করতে পারে। শুনেছি না খেয়ে যত মানুষ পৃথিবীতে মারা যায়, তাঁর চাইতেও বেশি মারা যায় খেয়ে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ‘আধমনী কৈলাশ’ এতো এতো খেয়েও কিন্তু মরেননি, মারা গিয়েছিলেন খেতে না পেয়ে। বয়স তো কারুর জীবনেই বসে থাকে না, অতিমানবেরাও তো মানুষই।

আধমনী কৈলাশ তখন অক্ষমপ্রায়— ‘খেলা’ দেখানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তবে খিদে ছিল পেটে এবং তা অন্যদের চেয়ে যথেষ্টই বেশি। তাঁর স্ত্রী তখন রোড কন্ট্রাক্টর মরান (Morran) সাহেবের রাঁধুনির কাজ নিয়ে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন কোনোরকমে। রূপসী এরোড্রমের রাস্তায় চুন-সুরকির ব্রীজ নির্মাণের কাজে সাহেব কিছুদিন ডেরা বেঁধেছিলেন গৌরীপুরে। এদিকে দুই জোয়ান ছেলেকে ধরে সংসারে মোট চারটি পেট, ফলে যা হয়, আধমনী কৈলাশের কপালে দুবেলা পেটভরা ভাতটুকুও আর জোটে না। যেটুকু জোটে তাকে পাখির খাবার বলাই সঙ্গত হবে। তবে ভাল করে না খেতে পেয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েও কৈলাশ আরও কিছুদিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু মাঝে একটা অনভিপ্রেত ঘটনায় সব হিসেব যেন উল্টে গেল। যেন অতিপ্রাকৃতিক এক ঘটনা, যার জেরে জঙ্গলের আগুন নেভাতে গিয়ে মরান সাহেবের আকস্মিক মৃত্যু হল রুপসীর ওপারে সারেশ্বর বিল পেরিয়ে জঙ্গলাকীর্ণ বন্যাগুড়ির এক প্রত্যন্ত এলাকায়। গৌরীপুর তখন বানভাসি।

গৌরীপুরের বিহারীরা গান বাঁধল—

রূপসী মে আগ লাগা

গৌরীপুর মে পানি

মরান সাহিব মর গিয়া

তো পুল রহা নিশানি

এ ঘটনার অভিঘাতে চাকরি হারিয়ে ছেলেপুলে নিয়ে একপ্রকার জলে পড়ে গেলেন আধমনী কৈলাশের স্ত্রী। তাঁর পাখির খাবারের জোগানও বন্ধ হয়ে গেলে এক সকালে প্রায় না খেতে পেয়েই মারা গেলেন আধমনী কৈলাশ। তবে তার পরিবার ও দুই ছেলে জমিদারের দাক্ষিণ্যে কোনও মতে বেঁচে গিয়েছিল সে যাত্রায়। শোনা যায়, আধমনী কৈলাশের স্ত্রী নাকি শোকে-দুঃখে  পাথর হয়ে মুখে আর ভাতের একটি দানাও তোলেননি বাকিজীবন। বলতেন—

ভুখা রহুঙ্গী। ফিরভি চাওল নেহি লুঙ্গী। চাওল মে শ্রাপ হ্যায়।

(না খেয়ে থাকব। তবু ভাত ছোঁব না। ভাতে অভিশাপ মিশে আছে।)

ভুখা মানুষের দেশে, মন্বন্তরের দেশে, এরকম একজন ভক্ষককে প্রকৃতি শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করেনি হয়ত। সত্যিই, ভাতের অভিশাপই কি লেগেছিল আধমনী কৈলাশ আর পরিবারের গায়ে! এই চিন্তাটা অনেকদিন আমার ছোট্ট মাথায় ঘুরপাক খেয়েছিল শোনার পর।

দ্বিতীয় কিংবদন্তির কাহিনীতে আসা যাক এবার। আমাদের আমলাপট্টির বসতবাড়িটি ছিল বেশ পুরনো। আমাদের আগে সে বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন দাদুর (ঠাকুর্দার) একদম হরিহরাত্মা বন্ধু সত্রশালের মানগোবিন্দ চক্রবর্তী। দাদু-থান্না তখন ছেলেপুলে নিয়ে কাছের এক অন্য কোয়ার্টারে থাকতেন। পরে গৌরীপুররাজের অনুমতিক্রমে বাড়িটি ঠাকুর্দার হাতে সোপর্দ ক’রে তিনি পরিবার-পরিজনসহ ধুবড়ি চলে যান। তবে তারও বহুকাল আগে, সে বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছিলেন এক অজ্ঞাতকুলশীল, আপাদমস্তক রহস্যাবৃত লোক। তাঁর পরিচয় সঠিক কেউ জানতে পারেনি সে সময়ে। লোকমুখে কিছু ভাসা ভাসা কথা ঘুরে বেড়াত। তবে কারও কারও মুখে এরকম কথাও শোনা যায়— কিংবদন্তির কোনও ধূসর অতীতে বিহারের গয়া জেলার ততোধিক ধূলিধূসরিত কোনও মনমরা গ্রাম থেকে এদেশে এসেছিলেন তিনি। ঋজু, শালপ্রাংশু চেহারা, পরনে প্রায় সবসময়ই মলিন ধুতি-ফতুয়া। একমাত্র মেয়েকে কাঁধে ক’রে যখন এসে পৌঁছেছিলেন এই মুলুকে, সবাই একপ্রকার ধরেই নিয়েছিল লোকটা বিপত্নীক। কিন্তু সেটা ছিল অনুমান মাত্র, সত্য ছিল না। তাঁর বিয়ে করা সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে নাকি আসলে ভেগে গিয়েছিল রডরিগস নামের এক পর্তুগীজ সাহেব। আর সেই জ্বালাতেই জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে নাকি একদিন তিনি তাঁর একমাত্র কন্যাকে নিয়ে পূর্বপুরুষের ভিটে ত্যাগ করে যেদিকে দু-চোখ যায় বেরিয়ে পড়েছিলেন। শেষে একদিন এসে পৌঁছেছিলেন গৌরীপুরে। খাজাঞ্চির কাজ জানতেন, ফলে কাজও একটা জুটে গিয়েছিল রাজ এস্টেটের ডিহিতে। এখানেই থেকে গিয়েছিলেন জীবনের বাকি অর্ধেকটা। কিন্তু দুর্ভাগ্য অম্বুরি মশাইয়ের ‘পিছা’ ছাড়েনি। কেননা তাঁর একমাত্র মেয়েটিও দীর্ঘদিন ক্রনিক ম্যালেরিয়ায় ভুগে একদিন মরে পড়ে ছিল বাড়ির আমগাছতলায়।

গৌরীপুরের একটা ব্যাপার লক্ষ করার মতো। নগরপত্তনের বহুকাল আগে থেকেই বিহারী সম্প্রদায়ের প্রচুর লোকজনের বাস এখানে। গৌরীপুরের বিহারীদের গরিষ্ঠাংশেরই পূর্বপুরুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সেকালের মজফফরপুর, বৈশালী, ছাপরা আদি অঞ্চলে। কথিত আছে, গৌরীপুর রাজবংশের আদি নিবাসও নাকি ছিল বিহার মুজফফরপুরের নিকটবর্তী ‘বেথেরি’ নামক গ্রামে। সে কারণেই কিনা কে জানে, এখানে এখনও রয়েছে বিহারি মাল্লা সম্প্রদায়ের প্রাচীন এক পাড়া। নাম মাল্লাপট্টি। প্রথমে মাল্লারা ছিল মাত্র পঁচিশ ঘর। পরে সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে একটি বৃহৎ এলাকাই প্রায় তাদের দখলে চলে যায়।

এই বিহারী মাল্লারা নদীপথে নৌকো চালিয়ে গৌরীপুর এস্টেটের অধীন আটটি ডিহির দূর-দূরান্তরের গ্রাম থেকে জমির খাজনা সংগ্রহ করে ডিহিদারের হাতে তুলে দিতেন। কেউ কেউ আবার পাট ব্যবসায়ী হ্যারিস সাহেবের নৌকো-বোঝাই পাট ব্রহ্মপুত্র, গদাধর, গঙ্গাধর নদী ডিঙিয়ে আনা-নেয়ার কাজ করতেন।

অম্বুরি মশাইও খুব সম্ভবত জাতিতে ছিলেন মাল্লা। শুধু তাই নয়, কারুর কারুর মতে, তিনি ছিলেন মাল্লাদের সর্দার। এজন্যই তাঁর নামের পাশে সম্মানসূচক ‘মশাই’ স্থানীয় লোকেরা ব্যবহার করত। মানুষটার পুরো নামটা জানা যায় না, তবে  ‘অম্বুরি মশাই’ বললে সবাই এক ডাকে চিনত তাঁকে। যাই হোক, আমাদের বাড়ির লম্বা রান্নাঘরটিতেই তিনি নাকি থাকতেন একদা। কোনও মানুষ বা ঘটনা একবার মিথে পরিণত হলে প্রকৃত সত্য আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। রহস্যের ধূলোবালি উড়ে আসে, জমে ওঠে পরতের পর পরত, যা ভেদ ক’রে মূলে পৌঁছনো অতীব দুরূহ হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই, অম্বুরি মশাই সম্পর্কেও বেশি কিছু জানবার আজ আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু, যেটুকু লোকের মুখে মুখে প্রজন্মান্তরিত হয়ে বৈকালিক বা সান্ধ্য আড্ডার বিষয় হয়ে উঠেছিল, তাতে সত্য কতটুকু ছিল, কে বলতে পারে? অম্বুরি মশাই কে নিয়ে পাড়ার বড়দের, বুড়োদের আড্ডা থেকে যা ছিটকে এসে আমাদের কানে পড়ত, তা ছিল রীতিমতো ভীতি উদ্রেককারী। ছেলেবেলার ভীতিগ্রস্ত কানে সেসব ছেটকানো, চটকানো রহস্যকথা চোখ বড় বড় করে শুনতাম। অস্বাভাবিক বা আপাত অস্বাভাবিক ঘটনাগুলোর আয়ু বেশি, সে ঘটনাগুলোই বেঁচে থাকে মানুষের মনে, তবে ক্রমে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, স্বাভাবিকভাবেই তা বিকৃত হয়ে যায়। অম্বুরি মশাই এতো যুগ পরও বেঁচে থাকার কারণ কী? এর কারণ একটাই, আর তা হল অম্বুরি মশাইয়ের দুর্ভাগ্যপীড়িত, কপর্দকহীন, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন আর তারই পরিনামস্বরূপ এক জ্যোৎস্নালোকিত রাতে গলায় দড়ি দিয়ে কাঠের বাটামে ঝুলে আত্মহত্যা।

  আমাদের বাড়িতে আমরা পাঁচ ভাইবোন, পিসতুতো এক দাদা, বাবা-মা আর দাদু। ছোটবড় সব মিলিয়ে নয়জন থাকি। সাথে আরেকজনও ছিলেন অবশ্য, অদৃশ্য— কিংবদন্তির সেই অম্বুরি মশাই। মৃত অম্বুরি মশাই ঘুরে বেড়াতেন আমাদের ঘরেদোরে, উঠোনে, বাগানে। কারণ তাঁর শোবার এবং আত্মহত্যার ঘরটাই ছিল আমাদের রান্নাঘর। আমার মাকে সারাজীবন অম্বুরি মশাইয়ের আত্মহত্যা তাড়া করেছে। দিনের বেলা একরকম পার হয়ে যেত। কিন্তু রাতের রান্না মা বরাবর বিকেলে সারতেন। কোনও মতে রান্নাবান্না সেরেই মা সে ঘরে শিকল তুলে খাবার দাবার নিয়ে সটান চলে আসতেন বেডরুমে, সন্ধে নামার আগে। রান্নাঘরে অম্বুরি মশাই, রান্নাঘর থেকে সোজাসুজি অল্পদূরেই ছড়ি হাতে দেখা যেত গিরীন চক্কোত্তির মাকে আর পেছনে, শেওড়া গাছের ডালে গলায় ফাঁস বসানো জিভ বের করা খোকন। একদিন সন্ধেবেলা মায়ের মুখে ছড়া শুনছি। মা আপন মনে বলে চলেছেন—

  খোকন খোকন করে মায়

  খোকন গেছে কাদের নায়

  সাতটা কাকে দাঁড় বায়

  খোকনরে তুই ঘরে আয়

‘খোকনরে তুই ঘরে আয়’— ঠিক এই জায়গাটাতে এসেই মা একটু থমকে গেছেন যেন। আমরাও… কারণ আমাদের শিশুমনে খোকন তখন একটা ভয়ানক দৃশ্যের নাম। মাকে, মনে আছে, হঠাৎ একটু যেন অন্যমনস্ক; খোলা জানলা দিয়ে বারবার পেছনের অন্ধকারের দিকে তাঁর চোখ চলে যাচ্ছে যেন। ওই যেদিকে খোকনের লাশ ঝুলে ছিল সাতসকালে! মায়ের চোখে চিকচিক করছিল জল! বাড়ির পেছনের নিহত খোকন যে আর কোনোদিনই ঘরে ফিরবে না!

এই অম্বুরি মশাইর সঙ্গেই একবার আমার দেখা হয়েছিল এক মাঘের শীতের রাতে। ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে, পরদিন ছিল সরস্বতী পুজো। বন্ধুরা, দাদারা সবাই রাত জাগছে আমাদের অনামা ক্লাবের প্যান্ডালে। উপেন খাঁ-র বাগানজুড়ে আলো আর কুয়াশার মেলবন্ধন। থেকে থেকে হৈহৈরৈরৈ-ও কানে আসছে খুব। প্রায়ান্ধকার ঘর। গায়ে ধুমজ্বর নিয়ে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছি। হঠাৎ মনে হতে লাগল, কে যেন কলসী উপুড় করে গ্লাসে জল ঢালছে, ঢকঢক করে জলপান করছে। কনকনে শীতে এভাবে কে জল খায়? একটা ছায়া, যেন। আমি দাদুর বিছানায়, একা। তারপর সেই ছায়া হাততালি দিয়ে খৈনি টিপতে শুরু করল। দেখলাম, হাতের চেটোতে ফুঁ দিয়ে থেকে থেকেই উড়িয়ে দিচ্ছে খৈনির গুঁড়ো। আমার নাকে এসে লাগছে দেহাতি পাতাখৈনির ঝাঁঝ। তারপর সেই ছায়া পায়চারি করতে শুরু করল ঘরময়। একটা আবছা বিশ্বাস তখনও মাথায় কাজ করছিল আমার। ভাবছি, হয়ত আমার বড়দাদাই হবে। খৈনি আর নস্যির নেশাও ছিল তাঁর। ঘুমচোখে ঘরের মেঝেতে ধপাশ করে পড়ে গিয়ে গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠায় রেকর্ডও করেছিল। কিন্তু পায়চারি তো দেখছি থামার নামই নিচ্ছে না। সাহসে ঈষৎ ভর করে বলে উঠলাম—

কিরে দাদা, ঘুমোবি না?

কোনও শব্দ নেই। বরং উল্টো ফল হল। এবার ছায়াটা আমার দিকে ঘুরে গিয়ে সোজা আমার বিছানার দিকেই এগিয়ে আসছে লক্ষ করলাম। কাছে এগিয়ে আসাতে একঝলক দেখলাম— ধুতি-ফতুয়া পরনে, কাঁধ থেকে লম্বা গামছা চাদরের মতো জড়ানো। মুখে মোটা, পাকা গোঁফ। চোখে সম্ভবত চশমা। হয়ত চোখ পিটপিট করে অবাক হয়ে আমাকে আগাপাশতলা দেখছে। যেন আমি একজন ট্রেসপাসার, তাঁর ঘরে ঢুকে দখল নিয়েছি, বিনা অনুমতিতে শুয়ে পড়েছি তাঁর বিছানায়।

এদিকে আমিও আকাশ-কুসুম কতকিছুই যে ভাবছি— এ লোকটা আবার কে? কোনোদিন তো দেখিনি?

ইচ্ছে করছে ‘মা’ বলে জোরে চেঁচিয়ে উঠি, ডাক ছেড়ে কাঁদি। আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু একি! গলা দিয়ে দেখি একটি শব্দও বের হচ্ছে না!

Tags: উত্তর-পূর্বগদাধরের বাউদিয়াশিবাশিস চট্টোপাধ্যায়
Previous Post

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দশম পর্ব

Next Post

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একাদশ পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একাদশ পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একাদশ পর্ব

Comments 5

  1. Amitabh Ranjan Kanu says:
    10 months ago

    Feeling goosebumps…

    Reply
    • Sibasish Chatterjee says:
      10 months ago

      Thanks for your comment, Amitabh.

      Reply
  2. SNEHASISH CHATTERJEE says:
    10 months ago

    এবারে অম্বুরীমশাই আর আধমনী কৈলাশ….. অম্বুরীমশাই এর ভৌতিক কাণ্ড কারখানা….. চমৎকার !!

    Reply
    • Sibasish Chatterjee says:
      10 months ago

      বিস্মৃত অতীত

      Reply
  3. Puspendu Bhattacharjee says:
    10 months ago

    খাসা।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath