এই সেদিনও গৌরীপুর ছিল চারদিকে ছড়ানো-ছেটানো জলাভূমি, একাধিক বিল, নদী, শ্বাপদসংকুল অরণ্যবেষ্টিত এক অঞ্চল। তবে খাল-বিল-হাওরের কিছু কিছু এখনও, এই আকালের দিনেও, টিকে রয়েছে। লাউখাওয়া, মধুরকুটি, সারেশ্বর বর্ষায় ভয়াল রূপ ধারণ করে, দু’কুল ছাপিয়ে ওঠা জলে ভেসে যায় গ্রাম-গ্রামান্তর। জমিদারি আমলের গৌরীপুর লোককাহিনী, মিথ, ইতিহাসের যেন এক অদ্ভুত মিশেল। স্বাভাবিকভাবেই, গল্প তাই ফুরোতে চায় না। এ শহরের জন্মকাহিনীটিও অদ্ভুত। শোনা যায়, একবার শিকারের উদ্দেশ্যে গহন জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে রাজা প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়া (প্রভাত চন্দ্রের পিতা) এক স্থানে এক আশ্চর্য দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে একেবারে থ বনে যান। কারণ ঠিক সে মুহূর্তে বনের ছায়ায় তাঁর বিস্ফারিত দু’চোখের সম্মুখে একটি বেশ হৃষ্টপুষ্ট ব্যাঙ বেশ আয়েশ করে মোটামুটি বৃহদাকার একটি সাপকেই ভক্ষণ করছিল। নিতান্ত অবহেলাভরে নিরীহ ব্যাঙ সাপ গিলছে— এই উল্টো পাঁচালি চাক্ষুষ ক’রে, জায়গাটির দৈবমহিমার কল্পনা এল রাজার মাথায়। অতঃপর সেখানেই তিনি স্থাপন করলেন রাজবংশের কুলদেবী মহামায়ার মন্দির ও সন্নিহিত এলাকার নামকরণ করলেন গৌরীপুর, যা মহামায়ারই আরেক নাম। কিছুকাল পরে রাজা বাহাদুরের কী খেয়াল হল, জমিদারির সদরও রাঙামাটি থেকে সরিয়ে আনলেন অতিপ্রাকৃতিক খামখেয়াল ও হেঁয়ালিপূর্ণ এই এলাকায়। তারপর নিচু জলাভূমি ভরাট করে, লাউখাওয়া বিল ও গদাধরের তীরে উঁচু মাটির বাঁধ দিয়ে বৃহৎ এই এলাকাটিকে ক্রমে বাসোপযোগী করে ফেললেন।
রাজা-মহারাজাদের জীবনে বিলাসিতার আধিক্য থাকবেই। এক্ষেত্রে গৌরীপুররাজও যে ব্যতিক্রম ছিলেন না সে তো বেশ হলফ করেই বলা যায়। বছরে একবার করে বিশেষ ঋতুতে কাছেপিঠের বনাঞ্চলে রাজকীয় শিকার-অভিযান চলত, যা ক্রমে একপ্রকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। সেসব শিকার অভিযানে রাজ পরিবারের মেয়েরাও পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে অংশ গ্রহণ করতেন। উঁচু হাতির পিঠের হাওদায় বসে ঢোলবাদ্য সহযোগে অরণ্যযাত্রা পর্বতজোয়ার, কচুগাঁও, সেরফানগুড়ি, দেওশ্রী, যমদুয়ার আদি দুর্ভেদ্য অরণ্য-পাহাড়ে। অল্পদূরেই ভূটান হিমালয়— আকাশসমান নীল পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে নিবিড় অরণ্যানি। এমনও শুনেছি, সেরফানগুড়ির জঙ্গলে, বহু আগেই যা লোকালয় হয়ে গেছে, ফান্দ বা ফাঁদ পেতে জ্যান্ত বাঘ ধরা হত। সেই থেকেই শেরফান্দগুড়ি— আজকের সেরফানগুড়ি। এসবই অবশ্য লোকমুখে শোনা।
রাজা বাহাদুর তাঁর শিকারাভিযান বাহিনীর লোকলস্কর সমেত এ-বনে সে-বনে ক্যাম্প করে বসে থাকতেন। সুযোগ বুঝে ওত পেতে থাকতে হত, বিশেষত, সুবিস্তৃত বনভূমির ব্যাঘ্রসংকুল টেরিটরিতে। একের পর এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, লেপার্ড ও মৃগশিকার— এসব চলত বেশ কিছুদিন ধরে। হাতি শিকারের (Elephas maximus) নির্দিষ্ট ব্যবস্থা ছিল বিশেষ বিশেষ এলাকায়— এলিফ্যান্ট পাথওয়েজের আশেপাশে।
প্রতাপ সিং, জং বাহাদুর, শিবজি নামের বিশালাকায় সব হাতির হাওদায় বসে দুর্গম অরণ্য-পাহাড়ে, ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে সেসব মৃগয়া-কাহিনীর কথা এখনও বাতাসে ভাসে। শুনেছি লালজির ব্যক্তিগত ডায়েরি ‘হাবিজাবি খাতা’-র পাতায় পাতায় শিকারের অনেক শিহরণকারী, রোমহর্ষক কাহিনী স্পষ্টাক্ষরে লিখিত রয়েছে।
পোষা হাতি প্রতাপ সিং-এর আনুগত্য, ত্যাগ ও হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নিশানায় দাঁড়িয়েও অবিচল, দুর্দমনীয় সাহসের গল্পও প্রায় মিথেই পরিণত হয়ে উঠেছিল একসময়। রয়েল বেঙ্গল বাঘ প্রায়শই হাতির পিঠ লক্ষ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সওয়ারিকে তুলে নিয়ে যায়। এরকমভাবে আচমকা আক্রান্ত হলে হাতিও অনেক সময় দুর্দান্ত বাঘের থাবা থেকে পৃষ্ঠারোহীকে বাঁচাতে পারে না। কিন্তু প্রতাপ সিং নামের পোষা হাতিটি এতোটাই বিশ্বস্ত ছিল যে সওয়ারি প্রাণে রক্ষা পেত। আক্রমণের মুখেও সে হাতি ধৈর্য, স্থৈর্য হারিয়ে ফেলত না, অবিচল থেকে লড়ত। পশ্চাদপসরণের কোনও গল্প ছিল না সে হাতির জীবনকালে।
বন্দুকের নিপুণ লক্ষ্যভেদে নিহত কতিপয় বাঘের দেহাবশেষ, বাঘনখ, ব্যাঘ্রচর্ম আজও সংরক্ষিত রয়েছে নিহারবালা বড়ুয়ার ব্যক্তিগত মিউজিয়ামে।
এসব ছাড়াও রাজাদের বিলাসিতা, দুঃসাহস, খামখেয়াল নিয়ে আরও কতো যে গল্প— কল্পকাহিনী। রাজা-রাজরাদের নিয়ে অনেক জনশ্রুতির একটি এরকম: আধ মন দুধে কয়েকতোলা আফিং মিশিয়ে সেই দুধ জ্বাল করে পুরু ক্ষীর বানানো হত রাজা বাহাদুর রাজা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়ার জন্য। একই সঙ্গে শক্তি ও মাদকতার সমাহার সেই ক্ষীর তিনি নিয়মিত সেবন করতেন। আরেকটি জনশ্রুতি এরকম— ব্রিটিশ সরকার একবার রাজা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়াকে ‘রাজা বাহাদুর’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করার মনস্থ করল। সে প্রস্তাব-বিধৃত চিঠি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে দরবারে হাজির হলেন এক গোরা সাহেব। কিন্তু দরবারে সেই দূতের যথেষ্ট খাতির-যত্ন হলেও সে প্রস্তাব গৌরীপুররাজ পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যান করলেন। এ বিষয়ে দরবারে, পার্শ্বচরদের কাছে তাঁর সরলতামিশ্রিত মন্তব্যটি ছিল এরকম:
“দেশের মানুষ এমনিতেই আমাকে রাজা ডাকে। আমি আবার কোন দুঃখে গোরা সাহেবদের কাছ থেকে ‘রাজা বাহাদুর’ খেতাব নিতে যাব?”
খানাপিনার ব্যাপারেও তিনি যে খুব আয়েশি ও শৌখিন ছিলেন, সে বিষয়েও সন্দেহের অবকাশ কম। রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় গৌরীপুরের ‘কুড়ি’ ও ‘কলিতা’ পদবীধারী দুই মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীকে যথাক্রমে পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) পাবনা ও নাটোরে পাঠানো হয় রাঘবসাই (মিষ্টি) ও কাঁচাগোল্লার রেসিপি বা প্রস্তুতপ্রণালী শিখে আসার জন্য। দুই ময়রা পূর্ববঙ্গের দুই স্থানে ডেপুটেশনে গিয়ে বেশ কয়েক মাস বাস ক’রে রাঘবসাই ও কাঁচাগোল্লা বানানো শিখে এসে গৌরীপুরের খাদ্যরসিক মহলে তোলপাড় তোলেন। গৌরীপুরের রাঘবসাই ও কাঁচাগোল্লা পরবর্তীকালে আসাম-বিখ্যাত হয়ে যায়। তবে রাঘবসাই ছোটবেলাতেও আমরা চোখে দেখিনি। ব্যবসায়ীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে ফর্মুলাও হারিয়ে গিয়েছিল হয়ত। তবে কাঁচাগোল্লা তখনও মুকুন্দ কলিতার দোকানে পাওয়া যেত। কেজি কেজি কাঁচাগোল্লা গৌহাটি সহ বিভিন্ন স্থানের লোক এসে নিয়ে যেত। সে স্বাদ এখনও জিভে লেগে রয়েছে— সে স্বাদের সত্যিই ভাগ হয় না।
মাটিয়াবাগ টিলার ওপর ‘হাওয়াখানা’ নামের ইমারতটির উল্লেখ প্রসঙ্গত আগেই করেছি। সেই ইমারত কিন্তু কোনও দেশীয় মিস্ত্রি দ্বারা নির্মিত হয়নি; হয়েছিল চিনা মিস্ত্রিদের দ্বারা। বস্তুত, নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে গৌরীপুরের প্রাচীন প্রাসাদগুলোর সিংহভাগের গায়েই চৈনিক মিস্ত্রিদের হাতের ছোঁয়া লেগে রয়েছে, যা আজও সহজেই চোখে পড়ে। নিকটস্থ কোচবিহার শহরের প্রসাদগুলোও শুনেছি সেই একই মিস্ত্রিদের হাতে গড়া। সে যাই হোক, শখ-শৌখিনতা, বিলাস-ব্যসন সবই পর্যাপ্ত মাত্রায় ছিল এখানে, তবে রাজা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত প্রজাবৎসল ও বিদ্যানুরাগী। সেকালের গৌরীপুরে এসে কাউকে গাছতলায় থাকতে হত না। বিনে পয়সায় রাত্রিবাসের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা ছিল। রাজদ্বারে এসে কেউ অভুক্তও থাকতেন না। কারণ রাজানুকূল্যে এখানে একটি সদা সক্রিয় প্রজাঘর ও সদাব্রত প্রতিষ্ঠিত ছিল। মেধাবী ছাত্রদের মাসোহারা দিয়ে বাইরে পড়তে পাঠাতেন তিনি। জনদরদি রাজা প্রভাতচন্দ্র ১৯৪০ সনে বৈকুণ্ঠলোকে যাত্রা করলে সুবিশাল জমিদারি একটি ট্রাস্টের হাতে চলে যায়। অবশ্য সেই ট্রাস্টের প্রধান ট্রাস্টি ছিলেন আবার মধ্যম কুমার লালজিই। কারণ তাঁর বড় ভাই প্রমথেশ বড়ুয়ার রাজনীতি বা রাজত্ব কোনও কিছুতেই রুচি ছিল না। অভিনয়-পাগল সৃষ্টিশীল মানুষ। দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে মগ্ন ছিলেন কলকাতায়। বালিগঞ্জের ‘গৌরীপুর হাউস’ তখন লোকে গমগম করত। ‘বড়ুয়া ফিল্ম ইউনিট’-এর পর যোগ দিয়েছিলেন নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে। শেষে সম্পূর্ণ ঝাড়া হাত-পা হয়ে অভিনয়, প্রযোজনা-পরিচালনা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
রাজ-আমলের গোরা সাহেবদের কথা আরেকটু বলা দরকার। একজন ছিলেন, যিনি বাঁশের ব্যবসা করতেন, নাম অ্যান্ডারসন। বাঁশের বিশাল বিশাল আঁটি জলে ভাসিয়ে রশি বাঁধা নৌকো করে দূর দূরান্তে সাপ্লাই করতেন। মাসে মোটা রোজগার ছিল তাঁর। আরেকজন ছিলেন মরিস সাহেব। সম্ভবত তিনি ছিলেন বালুচ রেজিমেন্টের কর্নেল, দীর্ঘদিন যাঁর পোস্টিং ছিল গৌরীপুরে। পাট ব্যবসায়ী হ্যারিস সাহেবের কথা তো আগেই বলেছি, তাঁর কন্যা মালতীকে বিয়ে করেছিলেন স্বয়ং লালজি। যাই হোক, এই হ্যারিস সাহেবের জীবন নাটকের সমাপ্তিটি ছিল বড় ট্র্যাজিক, যা সেসময় বেশ শোরগোল তুলেছিল মানুষের মনে। গৌরীপুর রেলস্টেশনের কাছে এক টিনের ঘরে এক রাতে হ্যারিস সাহেবকে নাকি মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। মৃত্যুর সঠিক কারণও শুনেছি জানা যায়নি। তবে ব্যবসায়িক শত্রুতার ফলে তো কতো ঘটনাই ঘটে এই পৃথিবীতে। শেষ বয়সে দেশে ফিরে যাবার কথা ভেবেছিলেন সাহেব, কিন্তু তাঁর সে ইচ্ছে শেষ অবধি অপূর্ণই থেকে যায়।
আর একজন ছিলেন রোড কন্ট্রাকটর মরান সাহেব, আধমনী কৈলাশ প্রসঙ্গে যার কথা কিছুটা বলেছি, তবে সবটা বলা হয়নি। হ্যারিস সাহেবের মতো মরান সাহেবেরও মৃত্যু হয় আর সে মৃত্যুর ঘটনাটিও ঠিক স্বাভাবিক ছিল না। অতিপ্রাকৃতিক এক ঘটনার জেরেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে বিশ্বাস করেছিল সবাই। সে কাহিনী এতোটাই কৌতূহলোদ্দীপক যে আরেকটু বিশদে না বললেই নয়। অবশ্য সে কাহিনীতে কত শতাংশ ইতিহাস, কত শতাংশ মিথ তা আমি বলতে পারব না। তবে এক পড়ন্ত বিকেলে কাহিনীটি শুনেছিলাম রূপসীর জমিদার বাড়িতে বসে। গল্পের ছলে বলে চলছিলেন চৌধুরী পদবীধারী জমিদার বংশের শেষ প্রতিনিধি, কারুর কারুর মতে, এস্টেট ম্যানেজার। তাঁর সঙ্গে সেটা ছিল আমার দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার। প্রথম সাক্ষাতে এতো কথা হয়নি, সেবার তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। যাই হোক, চৌধুরী-কর্তা যখন কথা বলছিলেন, মনে আছে, এক করুণ আলোর আভা পড়েছিল তাঁর মুখে। ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে শুনছিলাম তাঁর বর্ণনা।
গৌরীপুর-রূপসীর মধ্যস্থলে ব্রীজ নির্মাণে ব্যস্ত থাকার সময় মরান সাহেবের কানে পড়ল পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আগুন লেগেছে। ঘটনায় চিন্তিত হয়ে সাহেব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে গেলেন দাবানল নেভাতে— সেটা পর্বতজোয়ার রেঞ্জের বন্যাগুড়ির দিকে কোথাও।
বন্যাগুড়ির নিবিড় জঙ্গলের একফালি যখন দাউদাউ করে জ্বলছে, তখন হাতির পিঠে চড়ে, কিছুটা নৌকায়, কিছুটা হেঁটে, অকুস্থলে পৌঁছে যান মরান সাহেব। বনের আগুন— সেই ‘বনজুই’ তখনও জ্বলছে। নেভার নামই নিচ্ছে না। প্রায় দেড়শ’ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য বিভোর হয়ে দেখছিলেন সাহেব। জাতিতে আইরিশ, স্বভাবিকভাবেই চোখের তারায় হালকা সবুজের ছোঁয়া। তিনি তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন কী ভাবে আগুনের হলকা ওপরে উঠছে, লকলক করছে সাপের চেরা জিভের মতো আর কাছে-দূরে ছিটকে যাচ্ছে জ্বলন্ত ফুলকিগুলো। সাহেবের সবুজাভ চোখের তারায় বিস্ময়ের ঘোর! এরকম দৃশ্য যেন জীবনে প্রথম প্রত্যক্ষ করছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন গায়ে লেপ্টে থাকা নাছোড় বান্ধবী মেমসাহেব ক্যাথারিন বা আদরের ক্যাথি। হঠাৎ একটা ফুলকি কোত্থেকে ছিটকে এসে লাগল সাহেবের সিল্কের শার্টে আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জ্বলে উঠল সাহেবের ঊর্ধ্বাঙ্গ। কুলি-কামিনরা অনেক কসরত করে শরীরের আগুন নেভালেও ততক্ষণে খুব খারাপ ভাবেই পুড়ে গিয়েছিল সাহেবের বুক ও পিঠ। জঙ্গলের ভিতর থেকে হাতির পিঠে শুইয়ে ঘুরপথে দ্বারচৌকা বন হয়ে আহত মরান সাহেবকে গৌরীপুর পর্যন্ত টেনে আনতেই সন্ধে হয়ে গেল। গৌরীপুর অঞ্চলের তিন-তিনজন বৈদ্য সারারাত বিভিন্ন ওষধি লতাগুল্ম বেটে লাগানোর পরও শেষ রাতের দিকে সাহেব মারা গেলেন। বান্ধবী মেমসাহেব ঘটনার আকস্মিকতায় একদম হতচকিত, যেন বোবা হয়ে গেছেন, কী করবেন কোথায় যাবেন, কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। তারপর কয়েকদিন পাগলিনীর মতোই যেন ছুটে বেড়ালেন এদিক-সেদিক। খানিক ইংরেজি জানা করণিকদের জিজ্ঞাসা করতেন— আগুনের ফুলকি কি দেড়শ’ মিটার উড়ে যেতে পারে like fire arrows of the past?
মনের শান্তি তাঁকে চিরদিনের জন্যই যেন ছেড়ে গিয়েছিল। অবশেষে দেশে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন বান্ধবী ক্যাথি। সাথীহারা হয়ে দেশে ফিরে যাবার আগে নাকি ধুবড়িবাসী অন্য দুই মেম মিসেস আ্যন্ডারসন ও মিসেস মরিসকে পইপই করে বলে গিয়েছিলেন— O no, never ever let your men enter these haunted forests. O my God! Trees breathing fire!… or else, how could a spark fly so long a distance?
(স্বামীদের এই ভূতুড়ে বনে ঢুকতে দিও না কখনোই। হে ঈশ্বর! এখানে গাছেদের নিঃশ্বাসে আগুন!
নাহলে কী করে একটা আগুনের ফুলকি এত দূর উড়ে আসতে পারে?)
খুব ভালো লিখছেন। অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।🙏
যত পড়ছি, ততো সেঁটে যাচ্ছি। অসাধারণ আপনার গল্প বলা, আমি এটা পাঠ করবো, আমজনতার জন্য নয়, আমাদের কজনের জন্য।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।
ভালবাসা, বন্ধু
ভালবাসা, কবি
চলুক চলুক। লেখায় মুন্সীয়ানার ছাপ সর্বত্র। 👌👌👍
অতুলনীয় অতীত চারণ। ইতিহাস প্রতিফলিত হয়েছে আপনার লেখাতে। পরবর্তীর অপেক্ষাতে আছি।