Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
Daruharidra
No Result
View All Result
Home গদ্য

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

শেষ ট্রেনের বিলাসখানি

Daruharidra by Daruharidra
27/03/2022
in গদ্য
0
46
VIEWS

   

ডান পা প্ল‍্যাটফর্মে নামবে,তার প্রাকমুহূর্তে,বুকে এমন এক উত্তেজনা, যার ব‍্যাখ‍্যা মেলে না।আমার পা ছোঁবে এমন এক শহর,যাকে এতকাল ধরে স্বপ্নে দেখি,মুখোমুখি বসে কথা বলি, জড়িয়ে ধরি।পা ছোঁয়ালেই এই মহানগর আমার ভেতর।

   ডান পা, হাওড়া স্টেশনের প্ল‍্যাটফর্মে রাখতেই হুড়মুড়িয়ে তিনশ বছরের কলকাতা শহর আমার ভেতরে ঢুকে পড়ল।এই সেই শহরকে আজ আমি স্পর্শ করলাম,যেখানে জোড়াসাঁকো, খড়ম পায়ে বিদ‍্যাসাগর হাঁটছেন, প্রেসিডেন্সি কলেজে ব‌ইখাতা নিয়ে পড়তে এসেছেন সুভাষচন্দ্র বসু,বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে বসে ‘চারুলতা’র চিত্রনাট‍্য লিখছেন, সত‍্যজিৎ রায়,বহুরূপী‌তে অভিনয় করছেন শম্ভু মিত্র,ডোভার লেন-এ সেতার,সরোদে রবিশঙ্কর, আলি আকবর,ব‌ইমেলায় হাতখরচের পয়সা বাঁচিয়ে, নিজের কবিতার ব‌ই বের করা ছেলেটি, ঝোলায় ব‌ই নিয়ে ঘুরছে,কফি হাউসে আড্ডা দিচ্ছেন সৌমিত্র, খালাসিটোলায় বাংলা খাচ্ছেন সুনীল, শক্তি,যশোর রোডে দাঁড়িয়ে পড়েছেন গিনসবার্গ।চলে গেছেন অতীতে,কাতারে কাতারে ছিন্নমূল মানুষকে বুকে টেনে নিচ্ছে কলকাতা।ছেলেটি মেয়েটিকে পর্দাঘেরা কেবিনে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে জিগ‍্যেস করছে,কবিরাজি,না,মোগলাই? ময়দানে আজ ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান,চিংড়ি ইলিশ।ভিক্টোরিয়া‌র পরির দিকে মন নেই ছেলেটা ও মেয়েটির,ওরা আজ সারাজীবনের কথা বলবে বলেই এখানে এসেছে।টাটা সেন্টার থেকে ওদের দেখছে,বাড়ির জানালা। ধর্মতলা থেকে এগিয়ে আসছে মিছিল,শহীদ মিনারের দিকে।কলেজ স্ট্রিটে পুরনো ব‌ইগুলো বিশ্রাম নিচ্ছে শতাব্দীর সময় মেখে।মাইকেলের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক তরুণ,যার কোন কাজ নেই,শুধু বাংলায় লেখা ছাড়া।

       জায়গাটার নাম যে কেন উল্টোডাঙা, কে জানে।আমি ইন্জিনিয়ার হব,এন্ট্রেন্স দিতে এসেছি।কে আবার ওসব হতে চায়, আমি তো ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা টাকা পয়সা পেয়েছি,তাই সম্বল।পরীক্ষার আগের দিন আমার পিসেমশাইয়ের ভাই আমাকে সঙ্গে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন রাস্তাঘাট,বাস নাম্বার ইত‍্যাদি।কাশীপুরে পরীক্ষা‌।বাধ‍্য ছাত্রের মতো ঘাড় নাড়লাম।অর্থাৎ, বুঝেছি সব।পরের দিন আমাকে পৌঁছে দেওয়া হলো। ফিরতে হবে আমাকে একা।

       পরীক্ষা দেওয়া বা ইন্জিনিয়ার হ‌ওয়ার বিন্দুমাত্র শখ নেই আমার।আমি তো এসেছি আমার অরণ‍্যের কাছে।প্রশ্নপত্র দেখে তো তাজ্জব বনে গেলাম।ধরতেই পারলাম না,কী জানতে চাইছে।ওদের আর কী দোষ! ছেঁকে তো সেরাদের নেবে।আর যে ছেলেটি পড়াশোনাই করল না,তার চাঁদকে পেড়ে আনার কোন অধিকার‌ই থাকতে পারে না। আনসারশিট দেওয়ার সময়টা থাকলাম,তারপর বেরিয়ে এলাম। বাসের নম্বর দেখে বাসে ওঠা,নতুন অভিজ্ঞতা।কী আশ্চর্য, বসার সিট‌ও পেলাম।কিন্তু, এ কী! কিছুদূর যাওয়ার পর‌ই,’এই, ঘুরিয়ে দে,’ বলে কন্ডাক্টর চেঁচাল।’কী হল ব‍্যাপারটা’,অনেকের‌ই জিজ্ঞাসা।’সামনে ঝামেলা হচ্ছে, তাই বাস ঘুরিয়ে দিলাম।’ প্রথম দিন একা, এই মহানগরে,সেদিন‌ই ঝামেলা! আমি ঠিকই করে রেখেছি, যত কম পারা যায় মুখ খুলব।বোবার শত্রু নেই।মুখ খুললেই সিলেটিমিশ্রিত বা‌ংলা বেরিয়ে সবার দৃষ্টিআকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ব আমি।চুপ করে বসে থাকি।বাস তো টার্মিনাসে যাবেই।সেখানে পৌঁছুলে আর কোন টেনশন নেই।

      কোন সে রাস্তা দিয়ে, চিনিও না,জানিও না, একসময় বাস এসে পৌঁছল টার্মিনাসে।আমি নেমে উল্টোডাঙা‌র বাস ধরব,একজন এসে জিজ্ঞেস করল,”দাদা, আজ কে জিতল?”মুখ খুলতেই হলো এবার,”জানি না দাদা।” তিনি বিরসবদনে চলে গেলেন।তিনি কী করে জানবেন,আমি এই শহরে দুদিন হলো এসেছি।বাড়ি ফিরে দেখলাম,সবাই চিন্তিত।এত্ত দেরি।

       ছোটপিসির পাশের ফ্ল‍্যাটের একটি ছেলে আমার বন্ধু হয়ে গেল।কলকাতার প্রথম বন্ধু। বাড়ির ছাদে আমি ওকে নেশায় হাতেখড়ি দিলাম।সিগারেটের জায়গায় দেশি বিড়ি।বিড়ির ভেতরে ত্রিকাল কাঁপিয়ে দেওয়া মন্ত্র।কিন্তু মুশকিল হলো, নিয়ে আসা স্টক তো একদিন ফুরিয়ে যাবে,তখন? বান্দরছাপের যায়গায় না হয় বিহারী খৈনি দিয়ে চালিয়ে দেব,কিন্তু মন্ত্র? একটা পরিকল্পনা করা হলো,তারাভরা আকাশের নিচে।

      রাস্তার ওপরদিকে বস্তি। বন্ধু ও আমি ছাদে রাস্টাফোরিয়ান হলাম,এরপর একবুক সাহস এসে গেল,এমনি,বস্তির ভেতর ঢুকলাম,ঠোঁটে বিড়ি।একটি ছোট্ট দোকান,সিড়িঙ্গের মতো একটা লোক বসা।’দাদা, আমি আসাম থেকে এসেছি।’এমনভাবে তাকাল,যেন এই প্রথম কোন অপরিচিত জন্তু দেখছে।’হুম।’ ‘আমার গাঁজার স্টক ফুরিয়ে গেছে,ওটা চাই।’ কোত্থেকে যে সাহস এল তখন,জানিনা।’সন্ধ্যা‌বেলা আসুন। নিস্পৃহ ভাবে বলে সে তার কাজে ঢুকে পড়ল।’পেয়ে যাব,বুঝলি,আমি শিওর।’ বন্ধুকে বলে আকাশের দিকে তাকালাম।কলকাতার আকাশে তখন হেমামালিনী রোদ্দুর।

      সন্ধ‍্যায় বস্তির যে পরিবেশ,পুরো আর্টফিল্ম থেকে তুলে আনা।লোকটার দোকানে এলাম।এর আগে আমরা দুজনেই রাস্টাফোরিয়ান, ঠোঁটে বিড়ি।’দাদা?’ ‘হাত বাড়ান।’ মুঠো থেকে মুঠোয় চলে এল বিশ্বকাপ। কলকাতার তখনকার আকাশটাই এঁকেছিলেন, ভ‍্যান গখ।

      কিন্তু, অরণ‍্যে যেতে হবে যে।চিঠিতে যে বার,তারিখ,সময় লেখা ছিল,ঠিক সেইসময়‌ই।গোল বাঁধল সেদিন‌ই,আমার ঠাকুমাকে আমার জিম্মায় রেখে বাড়ির সবাই বেড়াতে চলে গেলেন।কিছু‌ই চিনি না জানিনা, কত প্ল‍্যানিং ছিল কী করব।আজকে মিস মানে আবার চিঠি লিখ,আরো প্রতীক্ষা।ঠাকুমার সঙ্গে আমার খুব একটা দহরমমহরম নেই। ওনাকে বললাম,আমি একটা জিনিস কিনে আনছি, তুমি থাকতে পারবে তো?ডাঁটিয়াল মহিলা, মাথাটা সম্মতিসূচকভাবে নাড়ালেন।বন্ধুটি থাকলে সুবিধে হতো, ওকে রাস্টাফোরিয়ান বানিয়ে ঠাকুমার পাশে বসিয়ে যেতে পারতাম।কিন্তু সে-ও বেপাত্তা।আমার আর কোন‌ও অপশন নেই,যেতেই হবে।

       উল্টোডাঙা রেলস্টেশনে এসে দেখি চারটে প্ল‍্যাটফর্ম।কোনটায় যাব!’দাদা,আসাম থেকে এসেছি, আগরপাড়া যাব।’ ভদ্রলোক,উত্তম শিক্ষকের মতো আমাকে সব বুঝিয়ে দিলেন।কোন প্ল‍্যাটফর্ম, কোন ট্রেন,ক’টা স্টেশনের পর আগরপাড়া আসবে,ট্রেন কতসময় দাঁড়াবে,সব।নির্দিষ্ট প্ল‍্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছি।একটা ট্রেন এল, নেমপ্লেট দেখে কনফার্ম হয়ে উঠে পড়লাম।এই গরমে আবার স্টাইল মেরেছি।ফ‍্যান্সি বাজারের ‘নীলম’ থেকে বানানো ড্রেন পাইপ জিনস্,পায়ে শিলং থেকে আনা বিটলস্ শু, আর ক‍্যাজুয়াল একটা জম্পছশ শার্ট।এরকম গরমে আমার এই হটকে গেট‌আপকে সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে।আগরপাড়া এল,বুকে দশ লক্ষ হাতুড়ি ঘা মারছে। প্ল‍্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি আর ঘামছি।অপেক্ষার উত্তেজনার ক্ষত এত মধুর!অরণ‍্য এসে গেছে।সাদা জামা।ওই তো সে।মাঝে দু দুটো ট্রেন‌লাইন মাত্র।দৌড়ে ব্রিজে উঠি,নামি, সামনে দাঁড়াই।অনন্তকালের নিস্তব্ধতা।একে ওপরকে দেখি,প্রাণ ভরে।কতকাল দেখিনি।বুকের ভেতর কত কথা,অথচ একটি শব্দ‌ও বেরোল না।নিঃশব্দে আমরা দু’জন এগোলাম স্টেশনের পাশের একটা চায়ের দোকানে।গরমের দুপুর,বেশি লোকজন নেই।’দ‌ই হবে,দাদা।’ হ‍্যাঁ, দিচ্ছি দাঁড়ান।’ একটি ভাড় থেকেই দুজনে দ‌ই খাই।দু একটা কথা বেরোয় অবশেষে। বেশি কথা হয় চোখে চোখে।বুকে শান্ত শীতল জলধারা প্রবাহিত হয়ে যায়।ফিরতে হবে এবার।আবার।কবে কোথায় দেখা হবে সেই কথা সেরে,ফিরি।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, যতসময় দেখা যায়।বুকে তখন সহস্র বর্শা বিঁধে রয়েছে।

       ছোটপিসির বাড়িতে অনেক ব‌ই,রচনাবলী।বঙ্কিম, বিভূতিভূষণ, বিদ‍্যাসাগর,রবীন্দ্রনাথ।রবীন্দ্রনাথ আমার আগেই কিছু পড়া,শুরু হলো অন‍্য ব‌ই গেলা।বোরোই না বেশি,আমার কলকাতা নিয়ে কোন ইন্টারেস্ট নেই।অরণ‍্যভ্রমণ‌ই একমাত্র ইচ্ছে। সেই পর্বে পরে আসছি। ততদিনে বান্দরছাপ খৈনি শেষ,বিহারী খৈনিতে বাধ‍্য হয়ে যেতে হলো। বস্তির সেই লোকটা দেবদূতের মতো যোগান দিয়ে যাচ্ছে।কোন সমস‍্যা নেই। রাস্টাফোরিয়ান হ‌ই, ছাদে বিশেষ জাগয়া আমাদের দখলে,আর ব‌ই পড়ি।

      ইতিমধ‍্যে কী করে জানি কিছু বন্ধু জুটল।ওদের সঙ্গে ফুটবল খেলি, রকে বসে আড্ডা মারি, তেলেভাজা খাই,আর চষে বেড়াই।চাঁদু নামে এক কারখানার শ্রমিক আমার দারুণ বন্ধু হয়ে গেল।তখন‌ও দেখিনি ট্রাম,যাইনি এসপ্ল‍্যানেড,ভিক্টোরিয়া, নিউমার্কেট,কলকাতা ফ্লেভার তখন‌ও আমার শরীর মন ছোঁয়নি।আমি তখন অন‍্য এক কলকাতায়। চাঁদুকেও আমি রাস্টাফোরিয়ান বানিয়ে ফেললাম।সে তো আহ্লাদে কোথায় উড়বে,’গুরু, এ কী জিনিস মাইরি,সব টেনশন সাফ।’

    পাশেই মুরারিপুকুর।চাঁদু ইয়ার্কি মারে,’বুঝলে গুরু,কাল রাতে ঘুম‌ই হয়নি….'(দুই অক্ষরের গালি)। আমি চোখে জিজ্ঞাসা‌চিহ্ন ঝুলিয়ে দিতেই বলল,’বোম পড়েনি মাইরি একটা‌ও।’মুরারিপুকুরে প্রায়‌ই বোমাবাজি হতো।কাল রাতে বঝম পড়েনি বলে চাঁদুর ঘুম হয়নি।একবার প্রচণ্ড বৃষ্টিতে জল জমে যায় রাস্তায়।চাঁদু আর অন‍্যরা একটি ছেলেকে মাথার ওপর উঠিয়ে নেয়।দুজন সামনে,দুজন পেছনে।আমাদের পা, জলে ডোবা।চাঁদু একটা মুড়ির ঠোঙা(,তখন আমরা সন্ধ্যায় তেলেভাজা দিয়ে মুড়ি খেতাম,) আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’ নাও গুরু,শুরু করো।’ কী শুরু করব ভাবতে ভাবতেই সবাই শুরু করল,’বোল হরি,হরিবোল।’ তখন আমি বুঝলাম।মুড়ির ঠোঙা থেকে মুড়ি ছড়াতে ছড়াতে আমি‌ও বলতে লাগলাম,’বলো হরি,হরিবোল।’ আশেপাশের বাড়ির জানলায় উৎসুক মুখ,কে গেল?

     এক রাতে আমার বুকের বাঁদিকে ব‍্যথা হলো।ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম,মারা যাব না তো! এখন‌ও কত বাউণ্ডুলেপনা বাকি,একটু সময় তো চাই। সে রাত, এমনি কিছু একটা হয়েছে, সেরে যাবে, এই পজিটিভ চিন্তা করে কাটিয়ে দিলাম।পরের রাতে আবার ব‍্যথা।এ কী, দিনে তো কোন সমস‍্যা থাকে না।বিহারী খৈনি খাই,রাস্টাফোরিয়ান হ‌ই,ঘুরে বেড়াই, আড্ডা দেই,ব‌ই পড়ি। যত সমস্যা রাত গভীর হলে? ব‍্যথা হয়, চলেও যায়, বাড়িতে বলিনি,কিন্তু মনে এক শঙ্কা!রাত্রির সঙ্গে মৃত‍্যুর কি ইয়ারানা? পরের রাতে আবার ব‍্যথা।মুশকিল হচ্ছে আমি কোন কিছুই বিশ্বাস করি না,যেমন সেইসময়,ঠিক তেমনি এখন‌ও।ভূতপ্রেত,পুনর্জন্ম, ভগবান,অলৌকিক ঘটনা ইত‍্যাদি।জীবন একটা‌ই,ইউ ডাই,আ্যভরিথিং এন্ডস্।তখন একটি ভাবনা এলো।

     আমি তো একদিন মরব‌ই,এটা ডেসটিনড্। কতদিন? ধরা যাক পঁচাত্তর।এখন আমার উনিশ।হাতে র‌ইল ছাপ্পান্ন বছর।এই দিনগুলি আমি কী করব? নিজের মতো বাঁচব, আবার কী!সেই বাঁচাটা  কেমন? যেরকম বেঁচে এসেছি,সেইরকম। কোন কিছু পাওয়ার আশা নেই।কী চাই তোমার,অন্তিমে তো সব ধুলো আর ছাই! বুকের ভেতরে এক ভবগুরে ক্রমাগত বলে চলেছে, উড়ে বেড়াও,ঘুরে বেড়াও,আর ভালোবাসা বিতরণ করো সকল প্রাণে,একদিন তুমি চুপ,একদিন তুমি নিথর, শক্ত, ঠাণ্ডা হাড়গোড়, মাংসের স্থাপত‍্য হ‌ওয়ার পূর্বে, ভালোবাসার অমৃতধারায় সেরে নাও সামান‍্য স্নান।

       খোকনের সঙ্গে কী করে যেন দেখা হয়ে গেল। কলেজস্ট্রিটে ওর মামার জুতোর দোকান,থাকে বৈঠকখানা রোড।কলকাতায় ছোট্ট গুয়াহাটি জন্ম নিল।মামার দোকানে স্টিলের গ্লাসে চা আসে,সঙ্গে মাটির ভাড়।সোঁ করে দুই চুমুকে চা শেষ।বিধান সরণী আর চিত্তরঞ্জন আ্যভিনিউর সংযোগস্থাপনকারী একটা গলি।আমি ও খোকন রাস্টাফোরিয়ান হ‌ই। খৈনি খাই,সিনেমাহল খুঁজি।পেয়ে গেলাম।”মুনলাইট।” ‘দাদা, দুটা টিকেট দিওক ছুন।’ কাউন্টারের ভদ্রলোক, মুখে কাচাপাকা দাড়ি,মোটা চশমার উপর দিয়ে আমাকে বেশ ভালো করে জরিপ করে,একটা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ঝুলিয়ে দিলেন। আমি গোলমালটা খুব তাড়াতাড়ি বুঝে গিয়ে বললাম,’না, মানে, দুটো টিকিট দিন।’ ফিল্ম, ‘খুবসুরত।’ রেখা।

     শুরু হয়ে গেল কলকাতায় আমার ও খোকনের ফিল্ম অভিযান।সেই সঙ্গে, কলকাতায় আমাদের হুল্লোড়ের দিবারাত্রি।নতুন রাস্তায় হাঁটি,সিনেমাহল আবিস্কার করি।জেনে গেলাম,হাতিবাগানের হলগুলোতে বাংলা সিনেমার রমরমা, খান্না তে ট্র‍্যাশ হিন্দি সিনেমা।স্টার থিয়েটার,সারকারিনার সামনে দাঁড়িয়ে বাক‍্যহারা।একটা কথা মনে আছে,সারকারিনায় তখন ‘সম্রাট ও সুন্দরী’, নয়তো ‘আসামী হাজির’, দুটোর একটা। সাহেবপাড়া মাতিয়ে দেওয়া বাঙালি ক‍্যাবারে ললনা এবার নাটকে‌।মিস শেফালি আসলে একটি যুগ।সত‍্যজিতের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমায় একটু তো ওই সময়,কিন্তু, সাদা ভাষায় যেটা বলে,জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছে।সেই শেফালির নাটক দেখতে পেলে মন্দ হতো না। দেখা হয়নি,কারণ জানিনা।

     চাঁদু,শঙ্কু ওরা বলল,’একটা নতুন প্ল‍্যান,কে কে আছিস, হাত তোল।’আমি সব আগে,পরে অন‍্যরাও।সাইকেলে চেপে বেলেঘাটা যাব।বেলেঘাটা!সত্তরের দশকে,মুক্তির দশকে গভীর রাতে পাড়া কর্ডন করে,কড়া জোরসে নেড়ে কত অসামান‍্য ছেলেদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল,মুক্তি দেওয়া হয়েছিল কালো গাড়িতে উঠিয়ে, ময়দানে ছেড়ে পালাতে দিয়ে।সেই তো যাব ঠিক‌ই,কিন্তু সাইকেল কোথায় পাবো? সে ম‍্যানেজ হয়ে যাবে।চল তাহলে।এক বিকেলে মাঠে বসে আমরা প্রথমে রাস্টাফোরিয়ান হলাম।এরপর,’প‍্যাডেল মারি মারি,সাইকেল চলাই যাও।’কাঁকুড়গাছি,ফুলবাগান হয়ে বেলেঘাটা, গলির গলি,তস‍্য গলি আর মেইন রোড।গলা শুকিয়ে কাঠ।আবার রাস্টাফোরিয়ান, আবার প‍্যাডেল মারি মারি উল্টোডাঙা।শরীর থেকে হাত পা সব খুলে খুলে পড়ছে। শঙ্কু ও আমি হদ্দ বেকার।নেমে পড়লাম কলকাতা আবিস্কারে। কলকাতা এত‌ই বড়, সাধ‍্য কার, যে আবিস্কার করবে!খোকনের সঙ্গে সিনেমাহল আর শেয়ালদা কলেজস্ট্রিট অঞ্চল।শঙ্কুর সঙ্গে শ‍্যামবাজার হাতিবাগান হয়ে আবার কলেজস্ট্রিট।কলেজস্ট্রিটে এতো ঘুরেছি কিন্তু কোনদিন কফিহাউসে যাইনি ভয়ে।শুনেছি সেখানে নাকি তাবড় তাবড় মানুষেরা আসেন,দূরে থাকাই মঙ্গল।

     এদিকে আবার অন‍্য সমস‍্যা।কচুরি খেতে চাইলাম তো,পুরির মতো কী যেন দিল।একজনকে জিগ‍্যেস করতে বললেন,’ও,আপনারা খাস্তা কচুরি খেতে চেয়েছিলেন।’ এভাবেই লেচেরা বা রামাইস হয়ে গেল বরবটি, বুন্দিয়া, বোঁদে।।শেয়ালদায় আপেল বিক্রেতাকে জিগ্যেস করলাম,’আপেল ক‍্যায়া টেঙা হোগা?’ সে ফ‍্যালফেল করে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইল।আমি তার বিড়ম্বনা দেখে চটজলদি শুধরে নিলাম,’টক হবে না তো?’

     খোকনের সঙ্গে সিনেমা দেখা ও মধ‍্য কলকাতা চষে বেড়ানো,শঙ্কুর সঙ্গে রাতে বাড়ির ছাদে রাস্টাফোরিয়ান হ‌ওয়া,চাঁদুদের সঙ্গে ঠেক-এ আড্ডা,ছোটপিসির লাইব্রেরি তছনছ করা,আর আমার অরণ‍্যে মাঝে মধ‍্যে ঢুকে পড়া ছাড়া আমার আর কোন কাজ নেই তখন।কলোনিতে একরাতে ফাংশন হবে,কলকাতায় আমার জন‍্যে এই প্রথম। শঙ্কু ছাড়া চাঁদু গ‍্যাংও রেডি।আজ একটু অন‍্যরকম নেশা করি চল।কোথায় যেন শুনেছিলাম,আজ ট্রাই করে দেখি।কোকোকলার বোতলে একটা আ্যসপিরিন মিশিয়ে দিই।যা হবার হবে।কী হয়েছিল আজ আর মনে নেই।নেশা হয়েছিল কি হয়নি,শরীর খারাপ হয়েছিল কি?তবে গভীর রাত পর্যন্ত মাঠে বসে ফাংশন দেখেছি আর গুলতানি মেরেছি।

     কত জায়গা যে বনে বনে সবুজ হয়েছে! আগড়পাড়া স্টেশনে ঢুকে পড়ি আমার অরণ‍্যে।ট্রেনে চেপে সোদপুর যাই। তারপর হাঁটতে হাঁটতে খড়দা।খড়দা রেলস্টেশনে ভাড়ে চা।বিড়ি টানি,কত না কথা বলি,অরণ‍্য চুপ করে গ্রহণ করে আমার কলকাকলি,ঠিক যেমন পাখি ও বৃক্ষদের দেয় আশ্রয়।অরণ‍্য এবং আমি কখনো ডুবে যাই সেলুলয়েডের মোহময় রঙের ভেতর।

    কী করে যেন একদুপুরে গুয়াহাটির বন্ধুরা মিলিত হলাম কলকাতার বুকে। এই কলকাতা,যে মহাদুর্ভিক্ষের সময় আশ্রয় দিয়েছিল লক্ষ লক্ষ মৃতবৎ মানুষকে,এই কলকাতা,দেশভাগের সময় যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল লক্ষাধিক নিরাশ্রয় মানুষের দিকে,এই সেই কলকাতা,একাত্তরের যুদ্ধের পর যশোর রোড ভরে গিয়েছিল উদ্বাস্তুদের স্রোতে,দেখেছিলেন আ্যলেন্স গিন্সবার্গ,লিখেছিলেন,’সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড।’এই কলকাতা,পুনরায় এক নিরাপদ আশ্রয় অসম থেকে চলে আসা যুবক যুবতীদের জন‍্যে।

     গুয়াহাটির বন্ধুরা শ‍্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে,নেতাজির স্ট‍্যাচুর নিচে মিলিত হয়ে ঠিক করে ফেললাম আমরা হাঁটব ধর্মতলা পর্যন্ত,বিধান সরণী ধরে ওয়েলিংটন হয়ে শহীদ মিনার।এই সেই বিধান সরণী,ভীষণ টানের এক নস্টালজিয়া। যেমন ভাবা,ঠিক তেমনি কাজ,শুরু হলো হাঁটা।হাঁটতে হাঁটতে ঠিক পৌঁছে গেলাম ধর্মতলা।সব মিছিল যেখানে যায়।পথে থামলাম,বাতাস নিলাম বুক ভরে,কত ঐশ্বর্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলাম,কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে র‌ইলাম।

    দিন গড়িয়ে চলে।বাবার অফিস রয়েছে, কতদিন আর থাকা যায়!ফিরতে হবে।আমার কী হবে?অসমে পড়াশোনা স্তব্ধ।আন্দোলন তুমুল।সিদ্ধান্ত হলো,আমি আপাতত কলকাতায় থাকব।ছোটপিসিসহ আমি চলে আসব বিধাননগর শিশুউদ‍্যানের পাশে, পিসির দেওর ভানুমামার ফ্ল‍্যাটে।সেখান থেকেই আমার কলেজে ভর্তি হ‌ওয়ার অভিযান চলবে।যেমন ভাবা,তেমনি কাজ।ওয়ান ফাইন ডে বাবা,মা,ভাই আমাকে এই মহানগরে সম্পূর্ণ একা ফেলে রেখে ট্রেনে চাপলেন।এই প্রথম,কলকাতার বিশাল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে, এই আমি একা হয়ে গেলাম,ঠিক যেমন,’ভারতবর্ষের মানচিত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম/ নিঃশব্দ রাত্রির দেশ,তার ওপরে একজন নি‍ঃসঙ্গ মানুষ।’ছোটপিসির খাট যে ঘরে,সেই ঘরের‌ই এক চিলতে যায়গায়,যে স্পেস দিয়ে ব‍্যালকনিতে যাওয়া যায়,সেখানে আমার রাতের শয‍্যা।হাতখরচের জন‍্য পার ডে একটাকা।মাঝেমধ‍্যে বাজার যেতে হয়, কনভেয়েন্সের জন‍্য পয়সা পাই, হেঁটে যাই, হেঁটে আসি,পয়সা বাঁচাই নেশার জন‍্যে, অরণ‍্যে প্রবেশের জন‍্যে।কলেজের খোঁজের জন‍্য অন‍্য ফান্ড রয়েছে ছোটপিসির কাছে,এমনকি থাকা খাওয়ার পয়সাও।এসবে আমার মাথাব‍্যথা নেই।অন‍্য জায়গায় চলে এলেও চাঁদু আ্যন্ড গ‍্যাং,শঙ্কুর সঙ্গে সখ‍্যতা এক‌ই রয়ে গেছে,অরণ‍্যে যাওয়া ও।সন্ধ্যা‌বেলা আমি বাড়িতেই থাকি,রুটি আলুভাজার লোভে,তারপর বেরিয়ে পড়ি।ক‍্যাম্পাসের পাশেই মাঠ।ঘন অন্ধকারে মোড়া।ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আলোর বিন্দু,বিড়ির আগুন।জোড়ায় জোড়ায় নারীপুরুষ বসে আছে। এটা আমি দেখেছি ইডেন গার্ডেন্স,ভিক্টোরিয়া, এমনকি গঙাবক্ষে নৌকায়‌ও।চাঁদু চিনিয়েছে।এক সন্ধ্যায় তো আমরা দেশবন্ধু পার্কে ঢুকেছি জাস্ট,ব‍্যস,হল্লা শুরু হয়ে গেল।পুলিশের রেইড পড়েছে।আমরা তো ক্লিন,কেউ নজর‌ই দিচ্ছে না।আসলে আমার কাছে এটা নতুন এক অভিজ্ঞতা।তবে অরণ‍্যকে আমি কোন পার্কে নিয়ে যাইনি।আমাদের যত কথা, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে।

    শুরু হলো কলেজে কলেজে ঘোরা।কোন তল পাইনা,ইচ্ছেও নেই এখানে পড়ার।শুধু বেড়ানোই হচ্ছে,কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।বাড়ি থেকে দেখল, বেকার আমাকে কলকাতা রাখার কোন মানে হয় না।আমি কিন্তু এই মহানগরে দিব‍্যি ছিলাম,আমার ছোট্ট গণ্ডির ভেতরে,সবচাইতে বড় কথা,অরণ‍্য রয়েছে।কিন্তু জীবন তো এরকম চলতে পারেনা, ভবিষ‍্যত বলে একটা কথা আছে,ফ‍্যা ফ‍্যা করে ঘুরে বেড়ালে চলবে?অত‌এব একদিন ফেরার ডাক এল।অরণ‍্যকে ছেড়ে চলে যেতে হবে!একরাতে আমি তুমুল রাস্টাফোরিয়ান।

      ফিরে যাব।বসন্ত আলিঙ্গন করল।পক্স।ওই একচিলতে জায়গায়,মেঝেতে বসন্তের সঙ্গে আমার প্রেম।একদিন সে ছেড়ে চলে গেল আমায়।আমি দুর্বল শরীরে উঠে দাঁড়ালাম।ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে ওই।অরণ‍্যে যাব না?ঝলমলে রোদের দিন,দক্ষিনেশ্বর। অরণ‍্যে আজ দাবানল।লাল শাড়ি,শিফন।আমি বচ্চন।একটা ক‍্যামেরা ছিল আমার,সরু,চ‍্যাপটা,লম্বা।যাকে ফোকাস করা হবে,ওর ছবি না-ওঠে পাশের ছবি উঠবে।আমি এটা জানি বলেই,যার ছবি ওঠাই,ফোকাস তার বাঁদিকে বা ডানদিকে করি।এভাবেই ছবি তুললাম।একজন লোককে ধরে ফোকাসিং আমিই করে ছবি তুললাম যুগলে।কচুরি খেলাম বুটের ডাল দিয়ে, গঙ্গার‌ ধারে হাঁটলাম।দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকালাম।যেন একশ জনমের না-দেখার আর্তি নিয়ে।আর দেখা হবে!শেষ বিকেলের সূর্য গঙ্গাবক্ষে ডুবে যাওয়ার তোড়জোড় করছে।হাওড়া স্টেশনে হুইসেল দিচ্ছে অসম ফেরার ট্রেন

Tags: গদ্যসঞ্জয় চক্রবর্তী
Previous Post

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

Next Post

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

Daruharidra

Daruharidra

Next Post
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No Result
View All Result

RECENT POSTS

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || অন্তিম পর্ব

15/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অন্তিম পর্ব

09/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || দ্বাবিংশতি পর্ব

08/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || নবম পর্ব

02/04/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || একবিংশতি পর্ব

01/04/2022

সঞ্জয় চক্রবর্তী || অষ্টম পর্ব

27/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || বিংশতি পর্ব

25/03/2022
সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

সঞ্জয় চক্রবর্তী || সপ্তম পর্ব

20/03/2022
মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

মেখলা পরা মেয়ে || শ্রীযুধাজিৎ || উনবিংশতি পর্ব

18/03/2022
ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

ষষ্ঠ পর্ব || সঞ্জয় চক্রবর্তী

13/03/2022

RECENT VIDEOS

https://www.youtube.com/watch?v=77ZozI0rw7w
Daruharidra

Follow Us

আমাদের ঠিকানা

দারুহরিদ্রা
কুঞ্জেশ্বর লেন
(বরাকভ্যালি একাডেমির নিকটবর্তী)
নতুন ভকতপুর, চেংকুড়ি রোড
শিলচর, কাছাড়, আসাম
পিন-788005

ডাউনলোড করুন

সাবস্ক্রাইব

Your E-mail Address
Field is required!
Field is required!
Submit
  • আমাদের সম্পর্কে
  • লেখা পাঠানো
  • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath

No Result
View All Result
  • ধান্যগৃহ
  • কবিতা
  • গল্প
  • গদ্য
  • প্রবন্ধ
  • উপন্যাস
  • সাক্ষাৎ পাতা
  • অনুবাদ পাতা
  • আর্কাইভ
  • আমাদের সম্পর্কে
    • লেখা পাঠানো
    • যোগাযোগ

Copyright © All rights reserved Daruharidra | Development by Prosenjit Nath